খালেদাকে বাদ রেখে দেশে পাতানো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না : ড. মোশাররফ

ছবি: সৈয়দ নাবিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এর মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, এতে সরকারের বোধোদয় হবে এবং খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে। অন্যথায় বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমরা কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। তিনি হুসিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এদেশে কোনো পাতানো নির্বাচন হবে না। আর খালেদা জিয়াকে বাদ রেখে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।

ছবি: সৈয়দ নাবিল

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে রোববার বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ভুবন মোহন পার্ক মাঠে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নির্বাচনে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তাই সুদে-আসলে আগামী নির্বাচনে জনগণ আ’লীগকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে বাদ রেখে, বিএনপিকে বাদ রেখে, ২০ দলীয় জোটকে বাদ রেখে এবং জনগণকে বাদ রেখে দেশে প্রহসনের নির্বাচন করতে দেয়া হবে না।

ড. মোশাররফ বলেন, ক্ষমতাগ্রহণ করার পর এই সরকার শেয়ারবাজার লুট করেছে। নিম্ন আয়ের মানুষকে পথে বসিয়েছে। ক্ষমতায় এলে আ’লীগ ১০টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলেছিল। অথচ সেই চাল এখন মানুষ ৬০ টাকা কেজি দরে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ছিল না। আ’লীগ সরকার বলেছিল নিয়ম রক্ষার জন্য এই নির্বাচন করতে হয়েছে। তিন মাস পরে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে। কিন্তু তারা সে কথা রাখেনি।

প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহী সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ড. মোশাররফ বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) রাজশাহী এসে নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য মানুষকে ওয়াদা করতে বলেছিলেন। কারণ জনগণের ওপর তাঁর আস্থা নেই। তিনি বলেন, সরকার বিএনপিকে ভয় পায়। খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। তাই মিথ্যা মামলায় তাকে অন্যায়ভাবে নির্জন কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেই গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।

ছবি: সৈয়দ নাবিল

রাজশাহী সিটি মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ইবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিষ্টার আমিনুল হক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিণ্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, কর্ণেল (অব:) আব্দুল লতিফ, যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য নাদিম মোস্তফা, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, কাজী গোলাম মোর্শেদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ, রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শহীদুন্নাহার কাজী হেনা, রাজশাহী জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মো: মহসিন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মামুন অর রশিদ মামুন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি বজলুর রহমান, মহানগর যুবদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট, জেলা যুবদলের সভাপতি মোজাদ্দেক জামানি সুমন, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রিটন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম সমাপ্ত, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল হক রানা প্রমুখ। সমাবেশে রাজশাহী মহানগর ও জেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জসহ ৮টি জেলার বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

ছবি: সৈয়দ নাবিল

মাঠ ছাড়িয়ে রাস্তায় মানুষের ঢল : বেলা ২টার আগেই সমাবেশস্থল ভুবন মোহন পার্ক মাঠ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে যায়। দাঁড়ানোর জায়গা না পেয়ে মাঠ ছাড়িয়ে রাস্তায় ঢল নামে মানুষের। বিশেষ করে সোনাদিঘী মোড়, মনিচত্বর, সাহেব বাজার জিরোপয়েণ্ট, গণকপাড়া, মালোপাড়া, রাণীবাজার, রাজশাহী কলেজ ও লোকনাথ স্কুলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। বিভাগীয় পর্যায়ের এই সমাবেশের জন্য ভুবন মোহন পার্ক মাঠে স্থান সংকুলান হয়নি। তাই এই মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকার রাস্তাগুলোতে মানুষ দাঁড়িয়ে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন। বিপুল লোক সমাগম হবে- জানিয়ে নেতারা আগেই প্রশাসনের কাছে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ বরাদ্দ চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফ থেকে সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি মেলেনি।

ছবি: সৈয়দ নাবিল

অন্যদিকে, বিভিন্ন দূরদূরান্ত থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসার পথে পুলিশি বাধা ও হয়রানির শিকার হন বলে নেতারা অভিযোগ করেছেন।
সমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানোসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ সমাবেশ এলাকায় অবস্থান নেয়। প্রশাসনের বিভিন্ন ধরণের বিধিনিষেধ সত্বেও সমাবেশে বিপুল লোকসমাগম হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.