ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসীদের প্রতি মানবিক ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান : রাবাব ফাতিমা

ছবি: সংগৃহীত

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কোভিড-১৯ মহামারি প্রাক্কালে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় “বৈশ্বিক সংহতি ও সহযোগিতা” ও “সুদৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা” প্রদর্শনের প্রতি আহ্বান জানালেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

আজ “কোভিড-১৯ এর প্রাক্কালে অভিবাসন : অভিবাসীদের স্বাস্থ্য ও রেমিটেন্স” শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে এই আহ্বানের কথা জানান তিনি। অভিবাসন সংক্রান্ত সমমনা দেশসমূহ (Group of Friends of Migration) এই ইভেন্টটির আয়োজন করে।

অনেক দেশ থেকে অভিবাসীদেরকে জোরপূর্বক নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, প্রত্যাবর্তনকারীদের ব্যবস্থাপনা অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ; এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রচেষ্টাসমূহে অবশ্যই জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদার ও অংশীজনদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো ও বেনিন যৌথভাবে ‘অভিবাসন সংক্রান্ত সমমনা দেশসমূহের গ্রুপ–এর সহ-আহ্বায়ক। আয়ারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও প্রবাসী মন্ত্রী সিয়ারান ক্যানন টিডি (Ciaran Cannon T.D.) সহ অভিবাসী প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী দেশসমূহের উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক রাষ্ট্রদূত উচ্চ পর্যায়ের এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়া এসডিজি অর্থায়ন বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ড. মাহমুদ মোহাইয়েলদিন, আইএফএডি, ডব্লিউএইচও এবং অন্যান্য জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ সভাটিতে অংশ নেন।

সভাটিতে এ বিষয়ক ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। বক্তাগণ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়নে অভিবাসন ও রেমিটেন্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকার করে এর উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে মর্মে মতামত দেন।

নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০% এরও বেশী হ্রাস পাওয়া বিষয়ক বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণের কথা তুলে ধরে স্থায়ী প্রতিনিধি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, এর পরিণতি হতে পারে খুবই ভয়াবহ যা উন্নয়নশীল বিশ্বের রেমিট্যান্স-নির্ভরশীল পরিবারসমূহকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা জাতিসংঘ মহাসচিবের “পিপল অন দ্যা মুভ”শীর্ষক নীতি-বিবৃতিকে স্বাগত জানান যাতে অভিবাসীদের উপর কোভিড-১৯ এর সূদুর-প্রসারী প্রভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বৈশ্বিক এই মহামারী চলাকালীন অভিবাসীগণকে শ্রমবাজারে প্রবেশ, সামাজিক সুরক্ষা এবং প্রাথমিক পরিষেবাগুলোর সুযোগ প্রদান এবং এসংক্রান্ত বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমূহ তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু দেশ যেসকল পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রশংসা করেন তিনি। করোনা সৃষ্ট মন্দা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ সচল রাখার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের ‘কল টু অ্যাকশন-রেমিট্যান্সসেস্ ইন ক্রাইসিস’শীর্ষক যৌথ বিবৃতিকে স্বাগত জানান স্থায়ী প্রতিনিধি।

অর্থনীতি ও সমাজে অভিবাসী শ্রমিকদের অবদানের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই পুনরায় অভিবাসী শ্রমিকদের উপযোগী পরিস্থিতি তৈরিতে কাজ করতে হবে, এর অন্যথা ঘটলে তা কেবল অবৈধ অভিবাসন ও মানব পাচারকেই উৎসাহিত করবে মর্মে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

কোভিড পরবর্তী পূনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অভিবাসনকে উন্নয়নের একটি কার্যকর প্রপঞ্চ হিসেবে গড়ে তুলতে অবশ্যই প্রয়োজনীয় নীতিগত পদক্ষেপের সন্নিবেশ ঘটাতে হবে মর্মে অংশগ্রহণকারীগণ একমত প্রকাশ করেন।

অভিবাসন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিজনিত ঘাটতি পূরণে ‘অভিবাসনের বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট’বাস্তবায়নের আহ্বানও জানান বক্তারা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.