ক্রোয়াটদের কাঁদিয়ে শেষ ষোলোয় ইতালি

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: পেনাল্টি মিস করার হতাশা ঝেড়ে ফেলে এক মিনিটের মধ্যেই দলকে এগিয়ে যাওয়ার উচ্ছ্বাসে ভাসালেন লুকা মদ্রিচ। খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তার দলও পৌঁছে গেল নকআউট পর্বে ওঠার দ্বারপ্রান্তে। ক্রোয়েশিয়ার ডাগআউটের সবাই তখন মাঠের সতীর্থদের আলিঙ্গনে জড়ানোর জন্য প্রস্তুত।
অপেক্ষা কেবল শেষের বাঁশির। ঠিক তখনই, একেবারে শেষ মুহূর্তে পাল্টে গেল সব। ম্যাচের শেষ আক্রমণে তাদের জালে বল পাঠালেন মাত্তিয়া জাকাগনি। বেদনায় নীল হলো ক্রোয়াট শিবির। উল্লাসে ফেটে পড়ল ইতালিয়ানরা। জয় সমতূল্য ড্রয়ে, নকআউট পর্বে নাম লিখিয়ে, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে এগিয়ে গেল আজ্জুরিরা।
লাইপজিগে সোমবার রাতে ‘বি’ গ্রুপের শেষ রাউন্ডে ক্রোয়েশিয়া ও ইতালির লড়াই ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। মূল্যবান এই ১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়েছে ইতালি।
একই সঙ্গে শুরু গ্রুপের আরেক ম্যাচে আলবেনিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়েছে স্পেন। তিন ম্যাচের সবগুলোয় জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা। ইতালির অর্জন ৪ পয়েন্ট।
২ পয়েন্ট নিয়ে ক্রোয়েশিয়া তৃতীয় ও ১ পয়েন্ট নিয়ে আলবেনিয়া চতুর্থ হয়ে বিদায় নিল।
‘টিকে থাকতে চাই জয়, যেকোনো মূল্যে’-গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে কঠিন এই সমীকরণে নেমে শুরুতেই প্রতিপক্ষের সীমানায় হানা দেয় ক্রোয়েশিয়া। লুকা সুসিচের জোরাল সেই শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন জানলুইজি দোন্নারুম্মা।
নিজেদের গুছিয়ে নিতে একটু সময় নেয় ইতালি। এরপর শুরু করে পাল্টা আক্রমণ। কয়েকটি হাফ-চান্স নষ্টের পর ২৭তম মিনিটে এ পর্যন্ত সেরা সুযোগটি পায় তারা; আলেস্সান্দ্রো বাস্তোনির হেড দারুণ ক্ষীপ্রতায় লাফিয়ে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠান দমিনিক লিভাকোভিচ।
সুসিচের ওই শটের পর ক্রোয়েশিয়ার ধার কমে আসে। প্রথমার্ধে তারা পজেশন রাখায় ছড়ি ঘোরালেও, প্রতিপক্ষকে ভাবনায় ফেলার আর তেমন কিছুই করতে পারেনি।
গ্রুপের আরেক ম্যাচে আলবেনিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্পেন। ইতালির জন্য যা দারুণ খবর।
তবে, দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই সবকিছু নতুন মোড় নিতে শুরু করে, পাল্টে যায় পয়েন্ট টেবিলের চিত্র। মদ্রিচের গোলে দুইয়ে উঠে আসে ক্রোয়েশিয়া।
অবশ্য মুহূর্ত আগেই খলনায়ক হতে বসেছিলেন মদ্রিচ। ইতালির ডি-বক্সে তাদের ডিফেন্ডার দাভিদে ফ্রাত্তেসির হাতে বল লাগলে ভিএআর মনিটরে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু রেয়াল মাদ্রিদ তারকার নিচু স্পট কিক ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন দোন্নারুম্মা।
পজেশন অবশ্য হাতছাড়া হয়নি ক্রোয়েশিয়ার। ওখান থেকেই গুছিয়ে নিয়ে নতুন করে আক্রমণ শাণায় তারা। প্রথমে সুসিচের ক্রসে আন্তে বুদিমিরের শট দোন্নারুম্মা ঝাঁপিয়ে ফেরালেও বল হাতে রাখতে পারেননি, আলগা পেয়েই জোরাল শটে জালে জড়িয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন মদ্রিচ।
শাপমোচন করার পাশাপাশি নতুন এক ইতিহাসও গড়েন মদ্রিচ। ৩৮ বছর ২৮৯ দিন বয়সে জালে বল পাঠিয়ে গড়েন ইউরোয় সবচেয়ে বেশি বয়সে গোল করার রেকর্ড। ভেঙে দেন অস্ট্রিয়ার ইভিচা ভাস্তিচের ১৬ বছরের পুরোনো রেকর্ড।
এরপর সময় যত গড়াতে থাকে, ক্রোয়েশিয়ার আশা তত উজ্জ্বল হতে থাকে। তবে একটি পয়েন্টের জন্য মরিয়া হয়ে লড়তে থাকে ইতালি।
অবশেষে তাদের সেই ক্ষণ আসে একেবারে শেষে গিয়ে। আট মিনিট যোগ করা সময়ের তখন আর এক মিনিটও বাকি ছিল না। হয়তো শেষ আশায় আক্রমণে ওঠে শিরোপাধারীরা। রিকার্দো কালাফিওরির পাস পেয়ে বক্সে ঢুকে, ঠাণ্ডা মাথায় অসাধারণ এক বাঁকানো শট নেন মিনিট পনেরো আগে বদলি নামা জাকাগনি। বল হাওয়ায় ভেসে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেয়।
জাতীয় দলের হয়ে প্রথম গোল করা লাৎসিওর মিডফিল্ডার জাকাগনিকে ঘিরে উল্লাসে ফেটে পড়ে ইতালি। একটু পরই শেষের বাঁশি বাজিয়ে দেন রেফারি। শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে এমন অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের পর নতুন করে উদযাপন নয়, বরং যেন টিকে থাকার স্বস্তিতে মাঠে দোন্নারুম্মা-ফ্রাত্তেসিদের যে যেখানে ছিলেন, সেখানেই বসে পড়েন, ফেলেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.