কোটি কোটি টাকা ‘জলে’ দিয়েছেন (বশেমুরবিপ্রবি) এর উপাচার্য!

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য হিসেবে ড. খন্দকার নাসিরউদ্দিন নিয়োগ পাওয়ার পর উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেই টাকার কোনো কাজ চোখে পড়ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই প্রশ্ন ‍তুলেছেন, কাজ না হলে সেই টাকা তাহলে কার পকেটে গেল?

এসব অনিয়মসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নানা বিষয় সামনে এনে উপাচার্য ড.খন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পঞ্চম দিনে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত পেটোয়া বাহিনীর হামলার পর আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে ওঠে।

গতকাল হল ত্যাগের নির্দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে এক অফিস আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন এবং সুপারিশ রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. নূরউদ্দিন আহমেদের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।

আন্দোলনকারী এর শিক্ষার্থী বলেন, ‘হামলা-মামলা যাই হোক, দুর্নীতিবাজ স্বৈরাচারী উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ভর্তির সময় বিভিন্ন খাত দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রথম যখন বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হয়, তখন ভর্তি ফি নেওয়া হতো পাঁচ হাজার টাকা। আর এখন সেখানে নেওয়া হচ্ছে ১৯ হাজার টাকা। তাহলে চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ৩ হাজার ২৪৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি বাবদ বাড়তি প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। এ টাকা যায় কোথায়? যেসব খাতে টাকা নেওয়া হয়, সেসব অনেক খাতেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু কখনো কারও টু শব্দও করার ক্ষমতা ছিল না। কারণ কেউ কথা বললেই হয়রানি বা বহিষ্কার হতে হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, উপাচার্য নাসিরউদ্দিন ২০১৫ সালের ২ ফেব্রয়ারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম যোগদান করার পর থেকে নানাভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থ লুটপাট শুরু করেন। এখানে যত ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করা হয় সবই উপাচার্য নিজের লোক দিয়ে করিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্য নাসিরউদ্দিনের যোগদানের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল তৈরীর জন্য ১৫ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ম্যুরালের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও এর ব্যয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা দেখানো হয়েছে।

এ ছাড়া মিলনায়তন তৈরীতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৫ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। এখনো কোনো কাজ করা না হলেও এর ব্যায় দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। শহীদ মিনার তৈরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো শহীদ মিনার না থাকলেও এই খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। এভাবে আরও অনেক খাতেই লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এক শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, ‘উপাচার্য নাসিরউদ্দিন দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ার পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। উনার বাসায় দিনরাত লাঠিসোটা নিয়ে পেটোয়া বাহিনী পাহারা দেয়।’

আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘এই উপাচার্য ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন বিএনপি সমর্থিত দলের পক্ষে নির্বাচন করেছেন। এখন জাতির পিতার নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গোপালঞ্জে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করবে এটি হতে পারে না।’

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘অডিটোরিয়াম, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও শহীদ মিনার তৈরীতে এখন পর্যন্ত কোনো টাকা খরচ হয়নি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি শাফিউল কায়েস। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.