কেসিসি নির্বাচন মঙ্গলবার : কে হচ্ছেন নগরপিতা

 

খুলনা ব্যুরো :  খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন মঙ্গলবার। ভোট শেষেই জানা যাবে কে হচ্ছেন আগামীর নগরপিতা। তবে নির্বাচনকে ঘিরে মানুষের মধ্যে এখনও যেন শংসয় কাটেনি। তার পরেও নির্বাচন কমিশন বলছে, এবারের নির্বাচন পরিণত হবে ভোট উৎসবে। তাদের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার বিকেল থেকেই ২৮৯টি কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ব্যালট বাক্স, ব্যালট, অমোচনীয় কালী, কলমসহ প্রয়োজনীয় নির্বাচনী সরঞ্জামাদি। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারগন কেন্দ্রগুলো বুঝে নিয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকেল চারটা পর্যন্ত কেসিসির ৩১টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ হবে। এবারের মোট ভোটসংখ্যা চার লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন।

কেসিসিতে মেয়র পদে এবার দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হচ্ছে। এবার পাঁচ দলের পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে। এবারের প্রার্থীরা হচ্ছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক(নৌকা), বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু(ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক(লাঙল), ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক(হাতপাখা) এবং সিপিবি-বাসদ-বাম গণতান্ত্রিক মোর্চার মিজানুর রহমান বাবু(কাস্তে)।
এছাড়া ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন এবং ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হলেও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হচ্ছে নির্দলীয়। তার পরেও আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন ৩১টি ওয়ার্ডেই প্রার্থী দিয়েছে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী পাঁচটি করে ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে। সিপিবি দিয়েছে তিনটি ওয়ার্ডে প্রার্থী।

এছাড়া আওয়ামীলীগ-বিএনপি উভয় দলেরই বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। কেউ কেউ চূড়ান্ত তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলেও তাদের নাম থাকছে ব্যালট পেপারে। কোন কোন ওয়ার্ডে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীও। যদিও কাউন্সিলর পদে সবাই-ই স্বতন্ত্র প্রার্থী।

কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো: ইউনুচ আলী বলেন, নির্বাচন হচ্ছে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ। খুলনার নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনেরই নিজস্ব ৩৫ জনের পর্যবেক্ষক টিম মাঠে রয়েছে। এছাড়াও দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক থাকছেন ২১৯ জন। নির্বাচন কমিশন গঠিত প্রধান সমন্বয়কারী ও উপ-প্রধান সমন্বয়কারী ছাড়াও ২০ সদস্যের পর্যবেক্ষক টিমও রয়েছেন মাঠে। নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঢাকা-খুলনার শতাধিক সাংবাদিকও থাকছেন খুলনায়।

অবশ্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যেই বেশ কয়েকদিন ধরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সব পরিবেশ স্বাভাবিক আছে বলা হলেও বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিগত ১০দিন ধরে খুলনায় পুলিশী গণগ্রেফতার হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যায় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু সরাসরি পুলিশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্যের লিখিত অভিযোগ করেন। পক্ষান্তরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্দিষ্ট মামলা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। বিভিন্ন ওয়ার্ডেও ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগ আনেন বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সব মিলিয়ে শেষ দিকে এসে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারনে পরিবেশ কেমন যেন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

নির্বাচন কমিশন গঠিত সমন্বয় কমিটির উপপ্রধান সমন্বয়কারী ও রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার জিএম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের সবকিছুই কমিশনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তার পরেও পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে। থাকবে রাজনৈতিক কিছু বক্তব্যও। যেসব অভিযোগের ভিত্তি আছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেই রংপুর ও গাইবান্ধার নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা তার এবং অন্যান্যদের রয়েছে। ওইসব নির্বাচনের ন্যায় খুলনাও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। অনুরাগ-বিরাগ যার যাই থাকুক না কেন দিন শেষে গণতন্ত্রের বিজয় হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কেসিসি নির্বাচনের ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র দু’টি ওয়ার্ডের দু’টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের(ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। কেন্দ্র দু’টি হচ্ছে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শেরে বাংলা রোডস্থ সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের পিটিআই’র জসিম উদ্দীন হোস্টেল(নীচতলা)। সোনাপোতা স্কুল কেন্দ্রে এক হাজার ৯৯ জন মহিলা ভোটার এবং পিটিআই জসিম উদ্দিন হোস্টেল কেন্দ্রে ১৮৭৯জন পুরুষ ভোটার ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেবেন। এজন্য সোমবার মক ভোটসহ বিগত ছয়দিন ধরে ভোটারদের হাতে-কলমে শিক্ষাও দেয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ কেমন হয় সেটি নির্বাচন কমিশন সরাসরি তিনটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে দেখার ব্যবস্থা করেছে। এ কেন্দ্র তিনটি হচ্ছে, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ(কলা ভবন), ২২ নম্বর ওয়ার্ডের পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়(পশ্চিম পাশ) এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের খুলনা পিটিআই’র প্রশিক্ষণ ভবন(২য় ও ৩য় তলা)।

ইভিএম পদ্ধতির ভোটগ্রহণের জন্য গতরাতে খুলনা পৌঁছেছেন ইভিএম’র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদ এবং একজন সিনিয়র মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার ও একজন কনসালটেন্ট। সোনাপোতা স্কুলের চারটি কক্ষে(বুথ) এবং  পিটিআই জসিম উদ্দিন হোস্টেল কেন্দ্রে ছয়টি কক্ষে ভোটগ্রহণ হবে বলেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.