কেসিসি নির্বাচনী প্রচারনা তুঙ্গে

 

খুলনা ব্যুরো : নির্বাচনের পাঁচদিন বাকী থাকলেও প্রচারণার আর বাকী মাত্র তিনদিন। ১৩ মে রাত ১২টার পর থেকে কেসিসি নির্বাচনের সকল প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে। সময় খুব কম। তাই ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রচারণা। প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের দু’মেয়র প্রার্থী যথাক্রমে আওয়ামীলীগের তালুকদার আব্দুল খালেক ও বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ অন্য তিন প্রার্থীরও ঘুম নেই।

দিন-রাতের কোন সময়কেই হেলায় হারাতে চাইছেন না কেউ। যে কারণে প্রচন্ড গরমের মধ্যেও ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। মেয়র প্রার্থীরা যেমন কেসিসির ৩১টি ওয়ার্ডেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন তেমনি কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও দম ফুরানোর সময় নেই। বিশেষ করে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের অর্থাৎ নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের একাধিক ওয়ার্ডেই প্রচারণা চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তাছাড়া দু’টি বড় দলের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদেরকে সময় দিতে হচ্ছে মেয়র প্রার্থীদের সাথেও। অনেক এলাকায় তিনটি প্রতীকের প্রচারণা একসাথেই চলছে। আওয়ামীলীগের কর্মীরা যেমন নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রতীক সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করছেন তেমনি বিএনপির কর্মীরা ধানের শীষের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সব মিলিয়ে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে কেসিসি নির্বাচনের প্রচারণাও এখন তুঙ্গে। আগামী ১৫ মে’র কেসিসি নির্বাচনে শুধুমাত্র মেয়র পদ ছাড়া বাকী কাউন্সিলর পদগুলোতে হচ্ছে নির্দলীয় নির্বাচন। মেয়র পদে আ’লীগ-বিএনপি ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক ও সিপিবি’র মিজানুর রহমান বাবু।

আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন ৩১টি ওয়ার্ডেই দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছে। তবে ইসলামী আন্দোলন ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কোন প্রার্থী দেয়নি। অন্যান্য দলের মধ্যে জামায়াত ও জাতীয় পার্টি পাঁচটি ওয়ার্ডে এবং সিপিবি মাত্র তিনটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে। মেয়র পদে পাঁচজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮জন প্রার্থী ছাড়াও বড় দু’টি দলের পক্ষে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।

যদিও আওয়ামীলীগের পক্ষে মন্ত্রী-এমপিরা প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছেন না এজন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং কোন কোন পৌরসভার মেয়রও আসছেন খুলনায়। অংশ নিচ্ছেন প্রচারণায়। তবে বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা খুলনায় প্রচারণা চালিয়েছেন। দু’টি দলের পক্ষেই খুলনায় বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

কখনও গ্রুপ গ্রুপ ভাগ করে আবার কখনও সম্মিলিতভাবে এ প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতংকের কারণে অনেকেই গা-ঢাকা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে।

পুলিশী ভূমিকা সম্পর্কে বিএনপির অভিযোগ খন্ডন করে দিয়ে কেএমপি কমিশনার হুমায়ুন কবির বুধবার প্রেস ব্রিফিং করে এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব মামলার আসামী নগরীতে প্রবেশ করছে তাদেরকে গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও কেএমপি কমিশনার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। বিএনপির এ অভিযোগ খন্ডন করা হয় বুধবার দুপুরে আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থীর প্রেস ব্রিফিং থেকেও।

সার্বিক বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং ডেকেছেন বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বুধবার সকালেও তার বাড়ির সামনে প্রেস ব্রিফিং করে দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছেন। এভাবেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারণার পাশাপাশি দু’টি বড় দলেই চলছে অভিযোগ আর তা খন্ডনের প্রতিযোগিতা। নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই এ দু’টি দলের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন বরাবরই বলার চেষ্টা করেছে যে, নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। যদিও নির্বাচনের জন্য যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে সেইসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্কেও গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিকেও কারও কারও মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার হিসেবে যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের সম্পর্কে গোয়েন্দাদের খোঁজ-খবর নেয়াকে বিএনপির পক্ষ থেকে একধরনের অভিযোগ করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক।

বরং নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে, স্বচ্ছ রাখতেই এমন খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে বলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়। নির্বাচন সম্পর্কে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ চললেও প্রচারণায় থেমে নেই কোন দলই। মেয়র পদে পাঁচটি দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেয়া হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে। প্রার্থীদের প্রচারণার ফাঁকেই সময় বের করে অংশ নিতে হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনের মুখোমুখি অনুষ্ঠানেও।

গত ২৭ মে নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের মুখোমুখি অনুষ্ঠানসহ এ পর্যন্ত পাঁচটি মুখোমুখি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন মেয়রপ্রার্থীরা। এর মধ্যে ২৯ মে অনুষ্ঠিত বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মুখোমুখি অনুষ্ঠানে যোগ দেননি বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ৫ মে হোটেল সিটি ইন-এ নিউজ টুয়েন্টি ফোরের আয়োজনে অংশ নেন পাঁচ মেয়রপ্রার্থী।

৬ মে সিএসএস আভা সেন্টারে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সাথে নাগরিক সংলাপের আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। ৭ মে হোটেল সিটি ইন-এ প্রথম আলোর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় পাঁচ মেয়রপ্রার্থীর সাথে গোলটেবিল বৈঠক। ৮ মে খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে খুলনা নাগরিক ফোরামের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে অংশ নেন পাঁচ প্রার্থী।

এছাড়া বিভিন্ন কল্যাণ সমিতি, পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষক সমিতি, চিকিৎসক সংগঠনসহ নানা সংগঠনের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমেও প্রার্থীরা চালাচ্ছেন তাদের নির্বাচনী প্রচারণা। নির্বাচনকে ঘিরেই অনেকে আঞ্চলিকতার কথা বলেও ভোট প্রার্থনা করছেন। বিশেষ করে খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে ভোটের সময় কাজ করে অঞ্চল ভিত্তিক প্রচারণা।

সব মিলিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা-আতংকের আশংকা থাকলেও এখন পর্যন্ত খুলনায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। চলছে ভোটের উৎসব। কখনও সরাসরি আবার কখনও ঘুরিয়ে পেচিয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে ঘায়েলের চেষ্টা করা হলেও এ পর্যন্ত যে কয়টি মুখোমুখি অনুষ্ঠান হয়েছে তার সব ক’টিতেই উপস্থিত প্রার্থীরা হাতে হাত রেখে শপথ করেছেন খুলনার উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার। শেষ পর্যন্ত এ শপথই যেন হয় অন্তরের কথা সে প্রত্যাশাও নগরবাসীর।

অপরদিকে, কেসিসি নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখতে পুলিশের ৭০টি মোবাইল টিমের পাশাপাশি ১১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং র‌্যাবের ৩২টি টিম নগরীতে টহলে থাকবে বলে রিটার্নিং অফিসার মো: ইউনুচ আলী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি’র ১৬টি টহল দলও নিয়োজিত থাকবে নির্বাচনী কাজে। এখন পর্যন্ত ১০জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এবং ১০জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নগরীতে দায়িত্ব পালন করলেও ১৩ মে থেকে নিয়োগ করা হবে ৪৭ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। পাশাপাশি ১০জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটও নির্বাচন পর্যন্ত নগরীতে দায়িত্ব পালন করবেন বলেও রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.