কেমন হবে রুশ-জার্মান সম্পর্ক?

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ বেশিদিন আর দেখা যাবে না ইউরোপের এই ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’কে। খুব জোর মাত্র ৩ মাস। এরপরই অবসরে চলে যাবেন। এরপর একজন নতুন চ্যান্সেলর দায়িত্ব নেবেন৷ তার আগে সম্ভবত শেষবারের মতো রাশিয়া ও ইউক্রেন সফর করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ টানা ১৬ বছর ধরে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
ম্যার্কেলের তার পুরো মেয়াদে ইউরোপ সফর করেছিলেন ২০ বার। এর মাধ্যমে তিনি নিজেকে পশ্চিমের প্রাথমিক প্রতিনিধি করে তুলেছিলেন। রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির এমন প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রধান বিরোধী আলেক্সেই নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টার পর নর্ড স্ট্রিম দুই প্রকল্প থেকে জার্মানিকে বের হয়ে যেতে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল৷
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি রাশিয়ার সমর্থন এবং ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ বেদখলের সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে ইউরোপে রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহের ভবিষ্যৎ বর্তমানে কিয়েভে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে৷
ইউক্রেনকে এড়িয়ে রাশিয়া থেকে সরাসরি জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ নামের প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে৷ জার্মানি, ইউরোপ, অ্যামেরিকা ও ইউক্রেনে এই প্রকল্পকে ঘিরে চরম বিতর্ক সত্ত্বেও এর পক্ষে সমর্থনে অবিচল রয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷
আবার রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের মূল ট্রানজিট হিসেবে ইউক্রেনের গুরুত্ব কমেই চলেছে৷ ‘নর্ড স্ট্রিম ১’ পাইপলাইন এবং জাহাজের মাধ্যমে রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ ফলে ট্রানজিট ফি বাবদ ইউক্রেনের আয়ও কমে চলেছে৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় ম্যার্কেলকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যে ২০২৪ সালে ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবার পর বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করা হবে৷ ফলে ম্যার্কেলের প্রস্থানের পর ইউক্রেন এ ক্ষেত্রে কোনো আশ্বাস পাচ্ছে না৷
কার্নেগি মস্কো সেন্টারের সিনিয়র ফেলো আলেকজান্ডার বাউনভ আল জাজিরাকে বলেন, “জার্মানি এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি রাজনৈতিকের চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক। তারা বর্তমানে নর্ড স্ট্রিম ১ এবং নর্ড স্ট্রিম ২ এই দুই প্রকল্পের সম্পর্ককে ঘিরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে”
জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের পূর্ব ইউরোপ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইয়ানিস ক্লুগে মনে করেন, সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে বার্লিন ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে৷ এক্ষেত্রে তিনি তিনটি বড় সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন৷
প্রথমত, দেশের ভিতর স্বাধীন গণমাধ্যম, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও এনজিওদের বিরুদ্ধে রাশিয়া ক্রমেই চাপ সৃষ্টি করে চলেছে৷ দ্বিতীয়ত, ইউরোপে রাশিয়ার গোয়েন্দাদের কার্যক্রম৷ প্রত্যক্ষ হামলা ছাড়াও জার্মানির রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপর কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটছে৷ তৃতীয়ত, ইউক্রেন সংকট৷ এ ব্যাপারে যতদিন না কোনো উন্নতি হচ্ছে ততদিন রাশিয়ার উপর আস্থা ফিরবেনা৷
এদিকে, জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্টেফান মাইস্টারও মনে করেন, জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক এখন খারাপ অবস্থায় আছে৷ তবে সমাধানের ক্ষেত্রে জার্মানির কিছু করণীয় আছে বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘রাশিয়ায় কী করা সম্ভব সে ব্যাপারে আমাদের আরও বাস্তবসম্মত হতে হবে এবং যারা পরিবর্তিত রাশিয়া চায় তাদেরও সমর্থন করতে হবে,” বলে জানান তিনি৷ #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.