কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন শেষ শ্রদ্ধায় সিক্ত

ঢাকা প্রতিনিধি: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোকচিত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সর্বস্তরের মানুষ।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে আজ সোমবার  সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তার মরদেহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে রাখা হলে সর্বস্তরের মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। এ সময় আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মারিয়াম হোসেন এবং দুই ছেলে আকাশ হোসেন ও মেঘদূত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব মান্নান ইলিয়াছ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পক্ষে মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বাংলা একাডেমি পরিবার, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, দৃক ও পাঠশালা, ছাত্র ইউনিয়ন, মুভিয়ানা ফ্লিম সোসাইটি, স্বাধীনতা শিক্ষক সোসাইটি, বাংলাদেশ শর্ট স্লিম সোসাইটি, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ ৭১, বিডি ফটোগ্রাফার্স ইউনিটি ক্লাব, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় কবিতা পরিষদ, চিত্রালী পাঠক-পাঠিকা চলচ্চিত্র সংসদ, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদ, শিল্পী ফকির আলমগীর, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, নাট্য ব্যক্তিত্ব খ ম হারুনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন শ্রদ্ধা জানায় আনোয়ার হোসেনের মরদেহে।

এ সময় লিয়াকত আলী লাকি বলেন, আনোয়ার হোসেনের আগমন আলোকচিত্রী হিসেবে হলেও চলচ্চিত্রকে তিনি যেভাবে মর্যাদা দিয়েছেন, দেশের চলচ্চিত্র জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হওয়ার জন্য তার যে মেধা-মনন-পরিশ্রম যেভাবে যুক্ত হয়েছে, তাতে আমরা গর্বিত, আমরা আনন্দিত।

চিত্রপরিচালক মোরশেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের আলোকচিত্রকে একটা বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার খ্যাতির জন্য দেশের তরুণরাও আলোকচিত্রে আগ্রহী হয়েছেন। আলোকচিত্রে অসামান্য একটা ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এছাড়া তিনি যখন চলচ্চিত্র গ্রাহক হিসেবে কাজ শুরু করলেন, তখনও আমরা তার সৃজনশীলতার পরিচয় পাই।

নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আনোয়ার হোসেন যেন চলচ্চিত্রে কবিতা লিখতেন। গল্পকে অতিক্রম করে প্রকৃতি এবং মানুষকে একিভূত করে তিনি যে কাজটি করেছেন, সেটি আসলে আমাদের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, এত মানুষের ভালোবাসায় আমাদের প্রিয় শিল্পী সিক্ত হবেন, এটি কল্পনাই করা যায় না। মানুষের প্রতি যারা নিবেদিত থাকেন, মানুষ তাদের প্রতিদান সময় মতোই দিয়ে দেয়। অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় তিনি আজ সে প্রতিদান পেলেন।

পরিবাবরে পক্ষ থেকে শিল্পীর মামাতো ভাই ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সবেমাত্র যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এমন সময় উনি একবার গ্রামে গেলেন। এরপর গ্রামের সকল কিশোর-কিশোরীদের একত্রিত করে সর্বপ্রথম তিনি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত শেখালেন। আমরা গোল হয়ে বসতাম, আর আনোয়ার ভাই শেখাতেন- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।

এর আগে বীর এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এ সময় ঢাকার জেলা প্রশাসকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম।

মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত জায়গায় আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেনকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস।

ফ্রান্সপ্রবাসী আনোয়ার হোসেন গত ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশে আসেন। শনিবার সকালে পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হেভেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

১৯৪৮ সালের ৬ অক্টোবর পুরান ঢাকায় আনোয়ার হোসেনের জন্ম। আরমানিটোলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বোর্ডে তৃতীয় হয়েছিলেন তিনি। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হয়েছিলেন বুয়েটের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে। সেখানেও ভালো ফল করেন। তবে একসময় সিনেমাটোগ্রাফি পড়তে চলে যান ভারতে। ১৯৬৭ সালে আলোকচিত্রী হিসেবে জীবন শুরু করেন তিনি।

‘সূর্য দীঘল বাড়ী’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘পুরস্কার’, ‘অন্য জীবন’, ‘লালসালু’, ‘শ্যামলছায়া’ চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান আনোয়ার হোসেন। কমনওয়েলথ গোল্ড মেডেলসহ ৬৮টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ১৯৯৫ সালে ফ্রান্সে চলে যান আনোয়ার হোসেন। ১৯৯৬ সালে ফরাসি মেয়ে মারিয়ামকে বিয়ে করেন তিনি।#

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.