কৃষকের স্বপ্ন আম্ফানেই শেষ পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ, ডুবেছে ধান ও ভুট্টা


নাটোর প্রতিনিধি: সুপার সাইক্লোন আম্ফান পরবর্তী ঝড়-বৃষ্টিতে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া ও বড়াইগ্রাম উপজেলায় ধান ও ভুট্টার ক্ষেত পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের প্রবেশ মুখে বাঁধ দিয়ে পুকুর খনন করায় ক্ষেতের পানি সরছে না।

কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, সিংড়ায় ৫০০ থেকে ৬০০ হেক্টর ও বড়াইগ্রামে ৬ হেক্টর জমির পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া সিংড়ায় প্রায় ৪৫ হেক্টর জমির ভুট্টা পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে কৃষকদের দাবী, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশী।

আজ শনিবার (৩০ মে) সিংড়ার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় নিমজ্জিত ধান ও ভুট্টা দেখা গেছে।জানা যায়, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় সিংড়া উপজেলার শেরকোল, হাতিয়ান্দহ ও কলম ইউনিয়নের মধ্যবর্তী ভাষাউরা, পচাকান্দা, খামারকান্দা, লক্ষিতলা ও শৈলমারী বিলে ও বিলগুলোর নিকটবর্তী শ্রীরামপুর, কংসপুর, সোনাপুর, পমগ্রাম, পুঠিমারী, কুশাবাড়ি, খাগোরবারিয়া, নতুনপাড়া, বড়শাঐল, পাটশাঐল, হাজিপুরসহ ২০টি গ্রামের কয়েকশ কৃষকের বিলম্বিত পাকা বোরো ধান পানিতে ডুবে রয়েছে।

পুঠিমারী গ্রামের কৃষক মোক্তার হোসেন বলেন, ‘বিঘাপ্রতি ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ করে সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছিলাম। ফলনও হয়েছিল ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে।’পমগ্রামের কৃষক কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘বিলম্বিত জাতের ধানের রোপণ করেছিলাম। তাই ধান কাটার সময়ও দেরীতে আসে। কিন্ত এবার ধান কাটার সময় ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতে পানি ঢুকে পড়ে।

বিলের মুখে বাঁধ দিয়ে পুকুর করায় ওই পানি আর নামতে পারছে না।’কৃষকরা বলছেন, বৃষ্টির পানি পাশ্ববর্তী লক্ষীতলার মরাগাঙ্গীনা ও পুঠিমারীর গদাই নদীর দিকে প্রবাহিত করতে পারলে তাদের এ দুর্ভোগ থাকবেনা।সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পুঠিমারী, শৈলমারী, কুশাবাড়ি ও সোনাপুর-পমগ্রাম এলাকায় ৫০০ থেকে ৬০০ হেক্টর জমির ধান বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টির পানি বিল থেকে বের হওয়ার জায়গা গুলো বন্ধ করে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে, বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, উপজেলায় এ বছরে ৪ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হেক্টর জমির ধান অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে পানির নিচে তলিয়ে গেছে।এদিকে, সিংড়া উপজেলার প্রায় ৪৫ হেক্টর ভুট্টার ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

শ্রমিক সংকট ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কারণে ডুবে যাওয়া ভুট্টা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ভুট্টা চাষীদের অভিযোগ, ডাহিয়া ইউনিয়নের লঘুকদমা মৌজার বড়ছেঁরা খাল ও বেড়াবাড়ি থেকে বিল হরিবাড়ির সিঙ্গারখালের মুখ বন্ধ থাকায় জমির পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এতে এই ইউনিয়নের সহস্রাধিক ভুট্টাচাষী বিপাকে পড়েছেন।

ডাহিয়া গ্রামের ভুট্টাচাষী আবু হানিফ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তার ২২ বিঘা জমির ভুট্টা এখন পানির নিচে নিমজ্জিত। পানি আটকে থাকায় ভুট্টা সংগ্রহ করতে পারছেন না তিনি।

স্থানীয় কৃষক আল-আমিন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘স্থানীয় প্রভাবশালীরা সর্বদাই মাছ ধরার নামে স্রোতি জাল ও বাঁশের বেড়া পেতে বিলের পানি স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে। এ সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল পানিতে নিমজ্জিত হলেও কৃষকের করার কিছুই থাকে না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘যেসব ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে সেগুলো বিভিন্ন বিলম্বিত জাতের। তাছাড়া জেলার প্রায় ৯০ ভাগ জমির বোরো ধান কর্তন করা হয়েছে। চলনবিল এলাকায় যেহেতু ভুট্টারও ভালো ফলন হয়, তাই সাম্প্রতিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও ঝড়বৃষ্টিতে ভুট্টা নষ্ট হয়েছে।

তবে রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া যেহেতু বিদ্যমান, সেহেতু দু একদিনের মধ্যেই পানি শুকিয়ে গেলে কৃষকরা ভুট্টা সংগ্রহ করতে পারবে।প্রসঙ্গত, চলতি বছর নাটোর জেলায় ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.