কুড়িগ্রামে স্বামীর নির্যাতনে ঘরে আটক গৃহবধূকে উদ্ধার করলো পুলিশ

প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:  ‘আইতে (রাতে) আমাকে খালি মারত, মাথায়, দু’কানের জায়গায় ঘুষি দিত। এহন কান দিয়া রক্ত বাড়ায়। লাঠি দিয়া বারি (আঘাত) দিয়া আমার ডান পা ভাইঙ্গা দিছে। খাবার দিত না, খুব কষ্ট দিত। আর দিনের বেলায় আমার হাত পা বেঁধে ঘরে আটকে বাইর থিকা দরজায় তালা দিয়া যেত ও’ (স্বামী)।

এভাবে তিনদিন থাকার পর একদিন আইতে পুলিশ ও আমার ভাই যাইয়া আমাকে উদ্ধার কইরা নিয়া আইসে।’ কথা গুলো বলছিলেন মঞ্জুয়ারা খাতুন। আজ শুক্রবার রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন থাকা মঞ্জুয়ারার সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি ওইসব নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

নির্যাতিত পরিবারের অভিযোগে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের মিজাপুর থানার অবিরামপুর গ্রামে বসবাস করেন হানিফ আলী। যৌতুকের টাকার জন্য হানিফ আলী তার স্ত্রী মঞ্জুয়ারা খাতুনকে দিনের পর দিন নির্যাতন চালাত।

সর্বশেষ ১০ অক্টোবর রাত থেকে স্ত্রী মঞ্জুয়ারাকে রাতের বেলায় নির্যাতন আর দিনের বেলা হাত পা বেঁধে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখার এক নজির বিহীন ঘটনার জন্ম দেয় যৌতুক লোভি হানিফ আলী। তিনদিন একটানা নির্যাতনের পর নির্যাতিতের ভাই লাল চান হোসেন গত ১২ অক্টোবর দিবাগত রাতে মির্জাপুর থানা পুলিশকে নিয়ে অবরূদ্ধ থাকা গৃহবধুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে সেখান থেকে নির্যাতিতকে নিজ জেলা কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।

জানা গেছে, কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার কুটিরচর গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে মঞ্জুয়ারা খাতুনকে ১৩ বছর আগে পারিবারিক ভাবে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বিয়ে দেয়া হয় একই উপজেলার বামনেরচর গ্রামের মকরম আলীর পুত্র হানিফ আলীর সঙ্গে।

চার বছর আগে হানিফ আলী স্ত্রীকে সঙ্গে টাঙ্গাইলের মিজাপুর থানার ওই গ্রামে বসবাস শুরু করেন। সেখানে ব্যবসার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে দু’দফায় দুই লাখ টাকা নিয়েছেন হানিফ আলী।

তাদের ঘরে ১০ বছরের এক পুত্র সন্তানও রয়েছে। এ অবস্থায় আরো দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য স্ত্রী মঞ্জুয়ারার ওপর ওই অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।

নির্যাতিত গৃহবধুর ভাই লাল চান হোসেন অভিযোগ করেন, আমাদের বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। বোনের সুখের কথা চিন্তা করে অনেক কষ্ট ও ধারদেনা করে দু’দফায় দুই লাখ টাকা দিয়েছি বোন জামাইকে। কিন্তু ও’ (বোনজামাই) আসলে কোনো দিন ভালো হবে। সে যৌতুকের টাকার জন্য দ্বিতীয় বিয়েও করেছে। আমার বোনটার ওপর বিভিন্ন সময়ে অমানুষিখ নির্যাতন করত। সবশেষ যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা থানা পুলিশকে নিয়ে আমার বোনকে উদ্ধার করা হয়েছে আমার খবর না পেলে হয়তো আমার বোনটার লাশও পেতাম না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত স্বামী হানিফ আলী মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমার বউকে আমি মেরেছি তাতে আপনাদের সমস্যা কোথায়। ব্যবসার জন্য মাত্র দুই লাখ টাকা চেয়েছি। ওই টাকা না দিলে আমি বউই রাখব না।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.