কুস্তির ময়দানের ‘হিরো’ সুশীলের মাথায় ঝুলছে হত্যার অভিযোগ

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: তরুণ কুস্তিগির সাগর ধনখড়কে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হন ভারতের কিংবদন্তি কুস্তিগির সুশীল কুমার। অলিম্পিকে পদকজয়ী এ কুস্তিগির এখন স্টেডিয়ামে সংঘর্ষ সম্পর্কিত হত্যা, অপহরণ এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগের মুখোমুখি।
পুলিশ জানায়, স্টেডিয়ামে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ১৮ থেকে ২০ জন ছিল। এদের তিনজন আহত হয়েছেন, যাদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর সাগর ধনকড়ের মৃত্যু হয়।
কী বলছে পুলিশ: সংঘর্ষে যারা অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে দিল্লি সরকারের ক্রীড়া বিভাগের কর্মকর্তা অলিম্পিকে পদকজয়ী কুস্তিগির সুশীল কুমারও ছিলেন বলে দাবি পুলিশের।
৩৭ বছর বয়সি এ কুস্তিগির অলিম্পিকে ভারতের হয়ে দুবার পদক জিতেছেন। যিনি স্টেডিয়ামের ভেতরে হাউসিং কমপ্লেক্সে থাকেন এবং এ মাঠেই ১৪ বছর বয়সে প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন।
কিংবদন্তি এ কুস্তিগির স্টেডিয়াম এলাকায় হত্যা, অপহরণ এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগের মুখোমুখি।
পুলিশ বলছে, তারা রাতের ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজের সন্ধান করছে।
যেভাবে গ্রেফতার সুশীল: ঘটনার পর নিজেকে আড়ালে সরিয়ে নেন সুশীল। তার খোঁজ দিতে পারলে এক লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।  পরে তাকে দিল্লির একটি মেট্রো স্টেশনের বাইরে থেকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুশীল: কুস্তিগির সুশীল কুমার তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সুশীলের আইনজীবী প্রদীপ রানা বলেন, স্টেডিয়ামে কুস্তিগিরদের দুটি গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায়। সুশীল কুমার ঘটনাস্থলে এলে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। আমার ক্লায়েন্টকে হেনস্তা করার জন্য পর্দার আড়াল থেকে কিছু লোক কাজ করছে।
ধারণা করা হচ্ছে, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে এ সংঘর্ষ হতে পারে। একই সঙ্গে কুস্তিগির এবং গ্যাংস্টারদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে
কুস্তিগির এবং গ্যাংস্টার সম্পর্ক বিতর্ক: কুস্তিগিরদের সঙ্গে গ্যাংস্টারদের সম্পর্ক নিয়ে যে অভিযোগ তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন ভারতের এক রেসলিং কোচ কৃপা শঙ্কর বিষ্ণোই।
তিনি বলেন, আমরা পেহেলওয়ান হিসেবে পরিচিত। গ্যাংস্টাররাও এ নামে নিজেদের পরিচয় দেয়। তাই মানুষ ভাবে কুস্তিগিররা মনে হয় গ্যাংস্টার।  কিন্তু আমরা তা নই।
কিন্তু এ কোচ বিষয়টি অস্বীকার করলেও সুশীলের ঘটনা কুস্তিগিরদের অন্ধকার দিক সামনে নিয়ে এসেছে।
দিল্লিতে শতাধিক আখাদাস (ঐহিত্যবাহী স্কুল, যেখানে কুস্তিগিররা প্রশিক্ষণ নেন) রয়েছে, সেখানে কুস্তি প্রতিযোগিতাও (দঙ্গল) অনুষ্ঠিত হয়।  আখাদাসগুলো অধিকাংশই শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত। এসব এলাকায় সম্পত্তির দখল নিয়ে হরহামেশা কুস্তিগিরদের নানা পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গ্রাম এবং ছোট শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় দেদারসে টাকা ঢালেন স্থানীয় রাজনীতিবিদরা।
এন্টার দ্য দঙ্গল বইয়ের লেখক রুদ্রনীল সেনগুপ্তা বলেন, অনেক সময় রাজনীতিবিদরা যুব কুস্তিগিরদের ব্যবহার করেন। গ্যাংস্টারদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা কুস্তিগিরদের জন্য মূলত কঠিন।
অনেক সময় দেখা যায়, প্রতিযোগিতা চলার সময় দুগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে গেছে।
এমনই এক ঘটনায় রেসলিং কোচ সুখবিন্দর মোর প্রতিপক্ষের কোচসহ পাঁচজনকে হত্যার বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।
লেখক সেনগুপ্তা কুমার সম্পর্কে বলেন, কুমারের বাবা ছিলেন বাস ড্রাইভার আর মা গৃহিণী।  অলিম্পিকে পদক জয়ের পর তাদের আর্থিক অবস্থা বদলে যায়। অন্যান্য কুস্তিগিরের মতো তারও তরুণ কুস্তিগির অনুসারী রয়েছে এবং তিনি গাড়িবহর নিয়ে ঘুরতে পছন্দ করতেন ও সঙ্গে থাকত লাইসেন্স করা বন্দুক।
আমি তাদের একবার জিজ্ঞাসা করলাম কেন এ বন্দুক নিয়ে আসা হয়েছে, জবাবে তারা বললেন— এটি নিরাপত্তার জন্য। তারা বিভিন্ন দঙ্গলে অংশ নিয়ে প্রচুর পরিমাণ নগদ টাকা পুরস্কার পেতেন।
যদিও বিতর্ক নতুন কিছু নয় কুমারের জন্য। ২০১৬ সালে নরসিং যাদবের খাবারের সঙ্গে নিষিদ্ধ সামগ্রী মেশানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কুমার এতদিন কুস্তিতে কঠিন সব প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেছেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন কুমারের জন্য অপেক্ষা করছে তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে ভারতের হয়ে ব্রোঞ্জপদক এবং ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে সিলভার মেডেল জয় করেন কুস্তিগির সুশীল কুমার। (সূত্র: বিবিসি)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.