কুলিক নদীর বুকচিরে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন 

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের ঘনস্যামপুর কালিতলা ঘাট কুলিক নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাতের আধাঁরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পাওয়া গেছে ।
আজ রবিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে । উপজেলা ঘনশ্যামপুর কালী মন্দির এলাকায় প্রায় এক লক্ষ টাকা মূল্যের বালু উত্তোলন করে জমিয়ে রাখা হয়েছে ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ঐ এলাকার এক প্রভাবশালী  ভাটা মালিক ও বালু ব্যবসায়ী  নুর-নবী রাতের আধাঁরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে এ বালু উত্তোলন করেছেন। আবার ভোর রাতে মেশিন সরিয়ে রাখেন। স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘদিন প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে কুলিক নদীর বালু উত্তোলন করছেন নুরনবী।
এ সময় নদীতে মাছ ধরতে আসা হেমন্ত রায় ও দীপঙ্কর রায় অভিযোগ করে বলেন নুরনবী দীর্ঘদিন থেকে এই নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেইসাথে নিজ ভাটার বালুর চাহিদা মিটিয়ে প্রতিগাড়ি বালু  ৯০০ টাকায় বিক্রি করছেন । দেখা গেছে বালু তোলার কারণে নদীর আরেক পাশে থাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান ঘাটটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
এছাড়াও উপজেলা জুঁড়ে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা কুলিক নদীর বুক চিরে বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর অনেক জায়গায় গভীর গর্তে পরিণত  হয়েছে। এর ফলে সম্প্রতি কুলিক নদীর এসব স্থানে  বেশ ক’জনের জলেডুবে মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
গবেষকরা বলছেন , বালু উত্তোলনে পানিদূষণসহ নদীগর্ভের গঠনপ্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে এবং নদী ভাঙছে। পুরো হাইড্রোলজিক্যাল কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বালু উত্তোলনের কাছাকাছি মাটির ক্ষয় যেমন ঘটছে, তেমনি মাটির গুণাগুণও নষ্ট হচ্ছে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া নলকূপে পানি পাওয়াও কষ্টকর হয়।
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, এসব নেতিবাচক প্রভাবের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে। বালু উত্তোলনে সৃষ্ট বায়ুদূষণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে । উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার ফলে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে। ফলে মৎস্য প্রজনন-প্রক্রিয়া পাল্টে যাওয়ার পাশাপাশি চাষাবাদের জমিও নষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।
এরপরও উপজেলা ঘিরে থেমে নেই কুলিকনদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের জমজমাট ব্যাবসা।
বালু ব্যবসায়ী নুরনবীর সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই  বালুটি আমার আগের তোলা’ আমার বালু তোলার সাথে কোন সম্পৃক্তা নেই।
তবে স্থানীয়রা অভিযোগ , তিনি প্রতিনিয়ত এই নদী থেকেই বালু উত্তোলন করেছেন ।
রানীশংকৈল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত সাহা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘নদী থেকে অবৈধভাবে কেউ বালু উত্তোলন করে থাকলে সরকারি বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ‘।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম শিল্পী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.