কুলাউড়ায় পেনশনের টাকার জন্য সাবেক ব্যাংক কর্মচারীকে হত্যার অভিযোগ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী (৬৫) নামে অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাংক কর্মচারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার ভোররাতে উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ দিকে রফিকুল ইসলামের পরিবারের দাবি, নিহত রফিকুলের স্ত্রী এবং কন্যারা তাঁর অবসর ভাতার টাকা ও পারিবারিক বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকী বাদি হয়ে ছয়জনকে অভিযুক্ত থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত স্ত্রী, কন্যা, জামাতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী একটি বেসরকারী ব্যাংকে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই বছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। তাঁর ঘরে ৫ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছেন।
অবসরের পর একমাত্র ছেলে শেখ আমিনুল ইসলাম সিদ্দিকীকে পেনশনের টাকায় আরব আমিরাতে পাঠান।
ছেলেকে প্রবাসে পাঠানোর পর তাঁর কাছে অবশিষ্ট থাকা পেনশনের টাকার জন্য স্ত্রী মিছফা আক্তার সিদ্দিকা ও মেয়েদের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়াবিবাদ হতো। এ নিয়ে শেখ রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা  ও স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম পাখির উপস্থিতিতে একাধিকবার পারিবারিক শালিস বৈঠক হয়।
সর্বশেষ শুক্রবার (২৬ মে) রাত ১০টার দিকে রফিকুল ইসলামের ভাই সিরাজুল ইসলামসহ স্বজনদের উপস্থিতিতে পারিবারিক শালিস বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে সবাই চলে যান। পরে রাত দেড়টার দিকে সিরাজুল ইসলাম খবর পেয়ে গিয়ে রফিকুলের লাশ ঘরের বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রফিকুলের লাশ উদ্ধার করে ও ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মৌলভীবাজার মর্গে প্রেরণ করে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত রফিকুলের স্ত্রী মিছফা আক্তার সিদ্দিকা (৫৫), শেখ শারমিন আক্তার সিদ্দিকা (৩৫), শেখ তাজরিন আক্তার সিদ্দিকা (৩০) ও তাজরিনের স্বামী মেহেদী হাসানকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মেহেদী হাসানের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। তিনি সিলেট শহরে বসবাস করতেন।
রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর ভাই সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘রাতে খবর পেয়ে রফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখি তাঁর লাশ ঘরের বারান্দার মেঝেতে জখমী অবস্থায় পড়ে আছে। আমার ভাইকে তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ে জামাতা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম পাখি বলেন, ‘একাধিকাবার বৈঠকে বসে পারিবারিকভাবে বিষয়টি আমরা সমাধান করার চেষ্টা করেছি। মামার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে ধারণা করছি এটি পরিকল্পিত হত্যা হতে পারে।’
পুলিশ হেফাজতে থাকা রফিকুলের মেয়ে শারমীন ও তাজরীন জানান, ‘আমাদের বাবা মানসিক রোগী ছিলেন। এ জন্য আমাদের সাথে বাবা প্রায়ই খারাপ আচরণ করতেন। শুক্রবার রাতে তাঁকে খাবার দিতে বিলম্ব হওয়ায় বাবা (রফিকুল) আমাদেরকে গালিগালাজ করেন। ঘরের ভিতর আমাদেরকে রেখে তিনি বের হয়ে যান। পরে দরজা ভেঙে বের হয়ে দেখি বাবা বারান্দার মেঝেতে পড়ে আছেন।’
পুলিশের হাতে আটক নিহত রফিকুলের জামাতা মেহেদী হাসান বিটিসি নিউজকে বলেন, ঘটনার রাতে আমি সিলেটে ছিলাম। খবর পেয়ে আমি শশুরবাড়ি ছুটে চলে আসি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ বিটিসি নিউজকে বলেন, পুলিশ সুরতহালের সময় নিহতের মাথার পেছনে আঘাত এবং গলায় নখের আচড়ের চিহ্ন পেয়েছে। রফিকুলের ভাই সিরাজুল ইসলাম ছয়জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দিয়েছেন। শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে আসামিদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আর নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মো. সাহেব আলী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.