কুড়িগ্রাম জেলায় কর্মসৃজন প্রকল্পে অনিয়ম, পকেট ভারী জনপ্রতিনিধিদের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলায় হতদরিদ্রদের জন্য চালুকৃত ১১০ দিনের ইজিপিপি প্লাস বা কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দরিদ্রদের জন্য এ প্রকল্পের তালিকায় সচ্ছল ব্যক্তি, চেয়ারম্যান, মেম্বারদের আত্মীয়স্বজনকে অন্তর্ভুক্তি, প্রকল্পের স্থানে মাটি না কেটে জনপ্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত কাজসহ অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে।
এদিকে তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের সিমকার্ড রেখে দিয়ে দিন হাজিরার শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটানোর অভিযোগও রয়েছে। আর এসব সুবিধাভোগীদের পুরো টাকাই নিচ্ছেন চেয়ারম্যান ও মেম্বার।
অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট এবং উলিপুর, নাগেশ্বরী উপজেলাসহ সবকটি উপজেলায় রয়েছে অনিয়মের এমন চিত্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার (১৩ মে) দুপুরে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকরা ধান কাটছে। দিনমজুরির বিনিময়ে নয় কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের সভাপতি ও ইউপি সদস্য আব্দুল হক তার নিজের জমির ধান কেটে নেন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে। এ ছাড়াও কিছু শ্রমিক দিয়ে তার বাড়িতে মাটি কাটার কাজ করান।
শ্রমিক ভোলা মিয়া বলেন, ‘সরকার তো দিছে হামাক মাটি-কাটপার। আর হামাক পাঠে দিছে ধান কাটপার। হামরা ১৩ থেকে ১৪ জন ধান কাটপার আসছি। আর বাকিগুলা মেম্বারের বাড়িত মাটি কাটপার নাগছে। ধান কাটার জন্য আলাদা কোনো মজুরি দিবার নয়। ধান না কাটিয়া তো হামার উপায় নাই।’
লিখিত অভিযোগকারী ওই ওয়ার্ডের শ্রমিক জকরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, আমি রোজার মধ্যে ১৭ দিন মাটি কাটার কাজ করেছি। পরে হক মেম্বার আমার নিকট ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে কাজে আসতে নিষেধ করেন। কষ্ট করে দু’হাজার টাকা দিয়েছি। বাকি টাকা না দেওয়ায় হক মেম্বার আমার নাম বাদ দেয়। পরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট বিচার দিলে, পরিষদে সবার সামনে হক মেম্বার আমাকে দেড় হাজার টাকা ফেরত দেন। কিন্তু আর কাজ করতে দেন না। এই তালিকায় মেম্বারের স্কুল পড়ুয়া ছেলে লুৎফর রহমান, ভাই ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক, ঢাকায় এনজিও চাকরি করে ভাই নুরনবী মিয়া, জামাই সফিকুল ইসলাম, বোন নবিনা বেগম, চেয়ারম্যানের ড্রাইভার ছামিউলসহ বেশ কিছু নাম ঢুকায়। তারা কেউ মাটিকাটার কাজ করে না। এই বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো লাভ হয়নি। এ বিষয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল হক এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কিসাশত পুলকর গ্রামে ৩৭ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করছেন। অথচ সেখানে ৪৯ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও ওই ওয়ার্ডের আত্মীয়স্বজন শ্রমিক হওয়ায় তারা কাজ করেন না।
শ্রমিক সপ্তমী রাণী বলেন, ঈদের ৩২ দিনের কাজের বিল হইছে। কিন্তু ঈদের পরের দিন আশরাফ মেম্বার আমার বাড়িতে এসে আট হাজার টাকা দিছে। আমার কাছে কোনো সিম নেই। সিমের কথা বললে মেম্বার বলে চেয়ারম্যানের কাছে। চেয়ারম্যানের কাছে গেলে বলে সিম মেম্বারের কাছে। ডাক দিলে আসি। কাজ করি আর বিল হলে হাতে হাতে টাকা দেয়। এই বিষয়ে মেম্বার আশরাফ আলী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিটিসি নিউজকে বলেন, ইউপি সদস্যরা ইজিপিপি প্লাস প্রকল্পে আত্মীয়স্বজন, সিমকার্ড নিজেদের কাছে রাখা এবং কম শ্রমিক দিয়ে কাজ করায়। সঠিক শ্রমিকের বিল স্বাক্ষর করায় তাদের আয় বন্ধ হয়েছে বলেই তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ বিটিসি নিউজকে বলেন, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি সরকারের একটা অনন্য উদ্যোগ। এই কর্মসূচির মাধ্যমে অতিদরিদ্র মানুষজন তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এই প্রকল্পে আমরা বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। নীতিমালার বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই। মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের বিল প্রদান করা হচ্ছে। তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অভিযোগ আছে। সেই অভিযোগগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করে আমরা কিছু সমাধান করতে পেরেছি। আর যেগুলো পেনন্ডিং রয়েছে, সেগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্প জেলায় মোট ২৭ হাজার ৯২৮ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এর মধ্যে নারী-১২ হাজার ৩৯১ জন এবং পুরুষ ১৫ হাজার ৫৩৭ জন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.