কিংস অ্যারেনায় সাদা-কালোর জয়োল্লাস

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা আর দূর্গ থাকলো না। এই মাঠে বসুন্ধরা কিংসের টানা ৩১ ম্যাচ না হারার রেকর্ড ভাঙলো অবশেষে। কিংসদের সেই দম্ভ চূর্ণ হলো মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে। প্রথমার্ধে মিনহাজুর আবেদিন রাকিবের অসাধারণ গোলটাই শেষ পর্যন্ত গড়ে দিলো ব্যবধান। তাতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগও জমে উঠলো।
শনিবার লিগের ষষ্ঠ রাউন্ডে এসে অবিশ্বাস্য এই জয়ে কিংসের সঙ্গে ব্যবধানটা এক পয়েন্টে নামিয়ে এনেছে সাদা-কালোরা। ছয় ম্যাচ শেষে কিংস শীর্ষে আছে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে। সমান ম্যাচে মোহামেডানের সংগ্রহ ১৪।
২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু হয়েছিল কিংস অ্যারেনায়। সেদিন বাংলাদেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে নিজেদের মাঠে খেলার ইতিহাস গড়ে কিংস। সেখান থেকেই শুরু হয় তাদের অজেয় যাত্রা। এরপর কেটেছে ৭১৫ দিন। কিংস হোম গ্রাউন্ডে শনিবার খেলতে নেমেছিল ৩২তম ম্যাচ। আগের ৩১ ম্যাচের ৩০টায় জয়, একটা ড্র। সেই রেকর্ড কাল ভাঙলো আলফাজ আহমেদের শীষ্যরা।
ম্যাচের শুরু থেকেই সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলেছে। প্রবল প্রতিপক্ষকে ভয় পেয়ে নয়, বরং শীষ্যদের হৃদয়ে আলফাজ গেঁথে দিয়েছিলেন লড়াইয়ের মন্ত্র। সেটাকে পুঁজি করে শুরু থেকে মোহামেডান খেলেছে পরিকল্পিত ছকে। অন্যদিকে নিজ আঙিনায় কিংসকে ভীষণ অগোছালো মনে হয়েছে শুরু থেকে। বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে গিয়ে তারা বারবার খেই হারিয়েছে।
ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে কিংস অধিনায়ক রবসন রবিনহো বল হারালে সেটা পেয়ে মানিক মোল্লা বাড়ান সুলেমান দিয়াবাতেকে। মোহামেডানের এই ভয়ঙ্কর ফরোয়ার্ড বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শট নেন। যা দূরের পোস্টে ঘেসে বাইরে যায়। ম্যাচের ৪০ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় অসাধারণ গোলে মোহামেডানকে এগিয়ে নেন তরুণ মিডফিল্ডার মিনহাজুর আবেদিন রাকিব।
নিজেদের রক্ষণ আলগা করে আক্রমনে উঠতে গিয়ে মোজাফফরভের কাছে বল হারান তপু বর্মণ। উজবেক মিডফিল্ডার দ্রুত পাস দেন দিয়াবাতেকে। নিজেদের অর্ধে দিয়াবাতের পাস আযত্বে নিয়ে রাকিব ছুটে যান কিংসের বক্সের দিকে। সে সময় তিনজন ডিফেন্ডার তাকে ধরে রাখতে পারেননি। এগিয়ে গিয়ে বক্সের বেশ বাইরে থেকে রাকিব বাঁ পায়ের শট নেন, যা বাঁক খেয়ে আনিসুর রহমান জিকোকে বোকা বানিয়ে জালে জড়ায়।
বিরতি থেকে ফিরেও মোহামেডান গোলের সুযোগ তৈরী করেছে। ৫০ মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে বল পেয়ে অনেকটা দূর থেকে ডানপায়ের জোড়ালো শট নেন মোজাফফরভ। তবে তা বাইরের নেটে আঘাত করে। ৬২ মিনিটে বলার মতো সুযোগ তৈরী করেছিল কিংস। তবে তাদের ইনফর্ম স্ট্রাইকার ডরিয়েলটন গোমেজ হেলায় সে সুযোগ হারান। ডান দিক থেকে মিগেল ফিগেইরার ক্রসে মাথা ছোঁয়ালেও তা লক্ষ্যে থাকেনি।
৬৮ মিনিটে রবিনহোর থ্রু ধরে বক্সে ঢুকে জোড়ালো শট নেন মিগেল। যা সরাসরি যায় মোহামেডান কিপার সুজন হোসেনের কাছে। ৭৭ মিনিটে ডান দিক থেকে রাকিবের লো-ক্রস রবিনহোর পায়ে পৌঁছানোর আগেই ক্লিয়ার করেন মোহামেডান ডিফেন্ডার হাসান মুরাদ। ৮২ মিনিটে জিকোর দৃঢ়তায় বেঁচে যায় কিংস। নিজেদের অর্ধ্ব থেকে বল নিয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমনে উঠে জোড়ালো শট নিয়েছিলেন সুলেমান দিয়াবাতে। তবে জিকো বুক চিতিয়ে মালির ফরোয়ার্ডের প্রচেষ্টা রুখে দেন।
৮৯ মিনিটে আহত মোহামেডান কিপার সুজনের জায়গায় নামেন সাকিব আল হাসান। এর এক মিনিট পর অবিশ্বাস্যভাবে চতুর্থ রেফারি নিয়ন বাতি জ্বালিয়ে দেখান ১৩ মিনিট অতিরিক্ত সময়। তবে বদলী গোলকিপার সাকিবের দৃঢ়তায় মোহামেডান শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে। যোগ করা সময়ের দশম মিনিটে মিগেলের আড়াআড়ি ফ্রি-কিকে রবিনহোর শট দারুণভাবে রুখে দেন সাকিব হাসান।
পরের মুহূর্তে গফুরভের ক্রসে ডরিয়েলটনের হেড আয়ত্বে নেন এই বদলী গোলকিপার। শেষ পর্যন্ত কিংসের সাড়াশি চেষ্টা ব্যর্থ হলে মোহামেডান দ্বিতীয় দল হিসেবে চলতি লিগে থাকে অপরাজিত। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.