কাশ্মীর ডাল লেক ভ্রমণের স্বাদ পাবেন কাপ্তাই হ্রদে প্রাকৃতিক রূপ-বৈচিত্রে ভরপুর

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটি প্রাকৃতিক রূপ-বৈচিত্রে ভরপুর। চারদিক সুউচ্চ পাহাড় এবং পাহাড় ঘিরে নীলাভ জলের সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ মিলে-মিশে একাকার। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণ পিপাসু যে কোন পর্যটকদের মনকে পুলকিত করে। এমন চোখ জুড়ানো, মন ভোলানো রূপে বিমুগ্ধ হতে বার বার ছুটে আসেন পর্যটকরা।
এমন রূপের কারণে সরকার আশির দশকে পার্বত্য এ জেলাকে পর্যটন নগরী হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে এ জেলার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। সময়ের তালে তালে এ জেলার পর্যটন শিল্পও এগিয়েছে বহুদূর।
এ অঞ্চলের বড় একটি সমস্যা হলো- অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। যেখানে উন্নয়ন সেখানে চাঁদা। যে কারণে ব্যবসা খাত থেকে শুরু করে পর্যটন খাত বাইরের কোনো উদ্যোক্তা এখানে সহজে বিনিয়োগ করতে চায় না।
তবে বেশ কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করায় সন্ত্রাসীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এমন সুযাগে পর্যটন বান্ধব এ শহরে কিছু উদীয়মান পর্যটন ভিত্তিক তরুণ উদ্যোক্তার আবির্ভাব ঘটে।
কাপ্তাই হ্রদ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর মিঠা পানির কৃত্রিম হ্রদ। তৎকালীন সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর অববাহিকায় বাঁধ নির্মাণ করে। এ বাঁধ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি আহরিত হচ্ছে মৎস্য সম্পদ। সরকার এ মৎস্য সম্পদ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে।
এ হ্রদ পুরো জেলার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। বাঁশ, কাঠ ব্যবসা, কৃষি সব কিছু এ হ্রদকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে পর্যটন ভিত্তিক তরুণ উদ্যোক্তারা কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্যকে উপজীব্য করে পর্যটন শিল্পের প্রসার করছে।
হ্রদের পারে গড়ে তোলছে, রিসোর্ট, হোটেলে-মোটেল। হ্রদে নামানো হয়েছে সুসজ্জিত প্রমোদতরি বা হাউস বোট।
ভারতের জম্মু ও কাশ্মিরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে অবস্থিত ডাল হ্রদে হাউস বোটের প্রচলন বহু বছর আগে থেকে। এ অঞ্চলের তরুণ উদ্যোক্তারা কয়েক বছর আগে আগ্রহী হয়ে ডাল হ্রদের মতো কাপ্তাই হ্রদে হাউস বোট চালু করেছে। দেশীয় পর্যটকদের আর কাশ্মির যেতে হবে না। এবার নিজের দেশ রাঙামাটিতে কাশ্মির ভ্রমণের স্বাদ মিলবে কাপ্তাই হ্রদে।
জানা যায়, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে নতুন উদ্যোক্তা দীপাঞ্জন চাকমার হাত ধরে প্রমোদিনী বোট লাইফ নাম দিয়ে কাপ্তাই হ্রদে একটি প্রমোদতরি নামে। এরপর একাধিক তরুণ উদ্যোক্তার হাত ধরে কাপ্তাই হ্রদে আরও বেশ কয়েকটি প্রমোদতরি কাপ্তাই হ্রদে নামানো হয়।
চট্টগ্রাম রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদে যখন হাউজবোটগুলো চলে তখন আমার কাশ্মিরের ডাল লেকের কথা মনে পড়ে। আমাদের দেশের পার্বত্য জেলাটি অন্যরকম সুন্দর। পরিকল্পনা করে সাজাতে পারলে মানুষ বিদেশে নয়; নিজ দেশে বিদেশ ভ্রমণের স্বাদ পাবে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক চাকরিজীবি শাহিন আলম বিটিসি নিউজকে বলেন, হাউজ বোটে থাকার জন্য এসেছি। বর্তমানে হোটেলে উঠেছি। এরপর হাউজবোট বুকিং দিবো। আশা করছি ভাল লাগবে।
হাউজ বোট নিয়ে ঘুরে আসা পর্যটক নাজিয়া শিরীন এবং তন্নী চৌধুরী বিটিসি নিউজকে বলেন, অনেক ভাল লেগেছে। বন্ধুরা মিলে ঘুরতে এসেছি। হাউজবোটে থেকেছি। কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছি। তবে হাউজ বোটে থাকার দামটা যদি আরও কমানো যেতো তাহলে পর্যটকরা এ বোটে থাকার আরও বেশি উৎসাহ পেতো।
রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক বিটিসি নিউজকে বলেন, রাঙামাটিকে স্রষ্টার অপরূপ লীলাভূমি বললেও ভুল হবে না। এত সুন্দর অঞ্চল, বিশুদ্ধ বাতাস কোথাও নেই। বেশ কয়েক বছর দেখতে পারছি কাপ্তাই হ্রদ কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প বিকশিত হচ্ছে। হ্রদে চলাচল করছে প্রমোদতরি, দেখতে ভাল লাগছে। এটা পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে পাহাড় নিয়ে আঞ্চলিক রাজনীতির সমস্যা দূর হলে এ জায়গা পৃথিবীর অন্যতম সেরা পর্যটন স্পট হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলে যোগ করেন সাংবাদিক সংগঠনটির এ নেতা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি মো. মাজহারুল করিম মাজেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.