কাল ২৩ বছরে পদার্পণ করবে হাবিপ্রবি

হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত দেশের উচ্চশিক্ষার ইতিহাসে এক বর্ণাঢ্য ও গর্বিত ঐতিহ্যের প্রতীক হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)।
১৯৯৯ সালের ফেব্রয়ারী মাসে দিনাজপুরের গৌর-এ শহীদ ময়দানে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিশাল জনসভায় হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর হাবিপ্রবির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির মূলত নামকরণ করা হয় তেভাগা আন্দোলনের নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামানুসারে।
আগামীকাল শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ) বিশ্ববিদ্যালয়টি ২৩ বছরে পদার্পণ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি দিনাজপুর শহর হতে ১০ কি.মি দূরে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে প্রায় ৮৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত । বর্তমানে হাবিপ্রবিতে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে ৯ টি অনুষদের আওতায় ৪৫ টি বিভাগ, ৩২৪ জন শিক্ষক, ২১৪ জন কর্মকর্তা। পোস্ট গ্রাজুয়েট অনুষদের অধীনে ৪০টি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ১২টি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। হাবিপ্রবির রয়েছে একটি অধিভুক্ত কলেজ, একটি ইনস্টিটিউট ও একটি প্রাইমারি বিদ্যালয়।
বিগত ২২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ৫ টি একাডেমিক ভবন (একটি নির্মাণাধীন),একটি প্রশাসনিক ভবন, ৪টি ছাত্র হল, ৪ টি ছাত্রী হল (একটি নির্মাণাধীন), আধুনিক সাজসজ্জা বিশিষ্ট ১০০ আসনের একটি ভিআইপি সেমিনার কক্ষ, ৬০০ আসন বিশিষ্ট একটি সাধারণ এবং ২৫০ আসন বিশিষ্ট একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অডিটোরিয়াম।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ করতে রয়েছে দুইটি মসজিদ, একটি শিশুপার্ক, ইউটিলিটি ভবন, শিক্ষক- কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক কোয়াটার, পোষ্ট অফিস, রূপালী ব্যাংক শাখা,মেঘনা ব্যাংক শাখা, শ্রমিক ব্যারাক, নিজস্ব বৈদ্যুতিক লাইন, চারটি বৃহৎ খেলার মাঠ, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং পরিবহনের জন্য রয়েছে ৪০ টি যানবাহন।
গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সমন্বয় ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রয়েছে ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং(আইআরটি) ও আইকিউএসি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬ টি ফসলের জাত উদ্ভাবিত হওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম পদ্ধতিতে শস্য শুকানোর মেশিন আবিষ্কার হয়েছে হাবিপ্রবি থেকে।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি ভি. আই. পি গেস্ট হাউস, ৬ জন অভিজ্ঞ ডাক্তার ও এ্যাম্বুলেন্সসহ ১২ শয্যার একটি মেডিক্যাল সেন্টার।
হাবিপ্রবিতে গবেষণালব্ধ থিসিস, রিপোর্ট, জার্নালের পাশাপাশি রয়েছে ৩৫ হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ দ্বিতল বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত একটি অত্যাধুনিক লাইব্রেরি। হাজারো গাছ-গাছালির আকর্ষণীয় সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেন, বিভিন্ন বিভাগের তত্ত¡াবধানে গবেষণার জন্য গড়ে উঠেছে জার্মপ্লাজম সেন্টার, মাংস্যবিজ্ঞান অনুষদের জন্য রয়েছে নিজস্ব পুকুর ও হ্যাচারি ।
বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যায়নের দিক দিয়ে হাবিপ্রবি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা নেপাল, ভুটান, ভারত, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া ও ইথিওপিয়া থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য হাবিপ্রবিতে ভর্তি হয়েছেন। সুশিক্ষিত হয়ে এরই মধ্যে তারা নিজ নিজ দেশে গিয়ে সফলতাও অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী এই মুহুর্তে বিদেশী শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৩৮ জন।
হাবিপ্রবিতে ডিভিএম অনুষদের গবেষণার জন্য রয়েছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। যেখানে সমগ্র দেশের মধ্যে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উট পাখি পালনের উপর গবেষণা চলমান রয়েছে। প্রত্যেক বছরই বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী উটপাখি দেখতে হাবিপ্রবি ক্যা¤পাসে ঘুরতে আসে। এছাড়াও চিড়িয়াখানাটিতে নানা প্রজাতির পশু পাখি রয়েছে। দেশের প্রথম ভ্রাম্যমান মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের যাত্রা শুরু হয় হাবিপ্রবি থেকে। যার মাধ্যমে দিনাজপুর জেলার গৃহপালিত পশু-পাখির সেবা বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।
দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ হাবিপ্রবিতে রয়েছে লাল ইটের দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল ভবন; যা পর্যটকদের সবসময় আকর্ষণ করে। হাবিপ্রবিতে প্রবেশের জন্য তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে। সবুজ গাছপালার সমারোহ আর পাখির কিচিরমিচির শব্দে সবারই মন ভরে যায়।
ক্যাম্পাসে ঢোকার আগ মুহূর্তেই মানুষের চোখে ধরা পড়ে যায় হাবিপ্রবির সৌন্দর্য। হাবিপ্রবিতে এসে ঘুরে গেছেন অথচ হাবিপ্রবির সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। এখানে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বলে খ্যাত টিএসসিতে পড়ালেখা, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামসহ আড্ডাবাজিতে সারাদিন মুখর হয়ে থাকে।
এটিহাবিপ্রবির সৌন্দর্যকে যেন আরো বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি ক্যাফেটরিয়া ও জিমনেসিয়াম। হাবিপ্রবির ক্যাফেটোরিয়াতে রয়েছে নানান ধরনের মুখরোচক খাবার।
হাবিপ্রবিতে ছোট ছোট অনেকগুলো চত্বর রয়েছে। যেমন: রিমা চত্বর, এলিয়েন রোড, ডি বক্স, ডিভিএম হাফ ওয়াল ও বাবুই চত্বর প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে সুবিশাল লিচু বাগান। হাবিপ্রবির ডি-বক্স চত্বরে যেন সর্বদা ব্যস্ততা লেগেই থাকে। হাবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সৌন্দর্য যেন বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা। হাবিপ্রবি লাইব্রেরী চত্বরের পাশে চলে বিভিন্ন ক্লাবের প্রাত্যহিক ও সাপ্তাহিক কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের আড্ডাবাজি।
হাবিপ্রবিতে রয়েছে উত্তরবঙ্গের সময়ের সেরা মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার। এর প্রবেশ পথেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের মানচিত্র।এদিকে হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে হাবিপ্রবিতে দেশের প্রথম ক্যারিয়ার অ্যাডভাইজারি সার্ভিস সেন্টার গড়ে তোলা হয়।পাশাপাশি দিনাজপুরের প্রান্তিক কৃষকদের বিনামূল্যে সেবা দিতে গড়ে তোলা হয়েছে কৃষক সেবা সেন্টার।
হাবিপ্রবির ২২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কামরুজ্জামান সকলকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “দীর্ঘসময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় হাবিপ্রবির রজতজয়ন্তীতে আমরা উৎসব মুখর পরিবেশে কনভোকেশন আয়োজনসহ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানবিধ ক্ষেত্রে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজন করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে যাচ্ছি। এছাড়া গবেষণা কার্যক্রমকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে একটি অত্যাধুনিক সেন্ট্রাল ল্যাব তৈরির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের সেসনজট কমাতে ইউজিসির গাইডলাইন অনুসরণ করে আমরা সেমিস্টার সিস্টেমকে পুনর্বিন্যাস করার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে একাডেমিক কাউন্সিল ও রিজেন্টবোর্ডের অনুমোদনক্রমে আমরা সেশনজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হব বলে প্রত্যাশা করছি”।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। গ্রুপিং মুক্ত সৌহার্দ্য এবং সম্প্রীতি পরিবেশে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হোক। শিক্ষার্থীদের স্মৃতির পাতায় স্থান করে নিক বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি দিন। এমনই উচ্ছাসে কাটুক অনন্ত জীবন, সেই প্রত্যাশা সকলের।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি মোঃ মিরাজুল আল মিশকাত। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.