কাজ শেষের আগেই দেবে গেছে ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণাধীন কাঠের ব্রিজ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা খেয়াঘাট এলাকায় তিস্তার শাখা নদীর উপর ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণাধীন ২০০ মিটার কাঠের ব্রিজের একটি অংশ দেবে গেছে। সোমবার (২৪ জুন) রাত ১০টার দিকে সেন্টারিংয়ের সিসি পিলারের নিচের মাঠি সরে গিয়ে ব্রিজের মাঝখানে ৪টি সিসি পিলার দেবে যায়।
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, এই অবস্থায় কাঠের ব্রিজের ওপর দিয়ে লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। নদীতে স্রোত বাড়লেই ব্রিজটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর গাফিলতিতে ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই মাঝখানের অংশ দেবে গেছে।
এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট থেকে নৌকাযোগে নদী পারাপার হতেন। দুই পাশের ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল একমাত্র নৌকা। স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেলকা ঘাট এলাকায় এই কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করে এলজিইডি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থায়নে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি বাস্তবায়ন করে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার এবং প্রস্থ ৬ মিটার কাঠের এই ব্রিজটি নির্মাণ করতে বিগত ২০২২-২০২৩ সালের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই কাজটি দায়িত্ব পান গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা ছানা এন্টারপ্রাইজ নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রানা এন্টারপ্রাইজ স্থানীয় সিনথিয়া কন্সট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিকট কাজটি বিক্রি করে দেন। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসে ব্রিজটি নির্মাণকাজ শুরু করে, যা ২০২৩ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা।
এ পর্যন্ত ব্রিজটি নির্মাণকাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। সিসি পিলারের উপর দুই পাশে ঢালাই দেওয়া হয়। পাটাতনে দেওয়া হয়েছে কাঠ। কিন্তু এখনও দুই পাশে নিরাপত্তামূলক প্রাচীর দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় ব্রিজটির ওপর দিয়ে স্থানীয় লোকজন যাতায়াত শুরু করেন। বাইসাইকেল ও রিকশাও পারাপার হতে থাকে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজের মালিক ছানা মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয় সিনথিয়া কন্সট্রাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাগির খাঁন বলেন, ‘এই কাজের দায়িত্ব পায় ছানা এন্টারপ্রাইজ। তাদের সম্মতিতে কাজটি আমরা বাস্তবায়ন করি।’
বেলকা এলাকার বাসিন্দা সুরুজ্জামান বলেন, ‘এর আগে এখানে কোনও ব্রিজ ছিল না। নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়েছে। এতে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এবার একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে জেনে আনন্দিত হয়েছিলাম। এখন দেখছি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই হেলে দেবে পড়েছে।
বেলকা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘দুর্ভোগ লাঘবে কাজটি শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোনো কথাই শোনেন না। এই মুহূর্তে ব্রিজটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়সহ আশপাশের এলাকার প্রায় কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ আবার বেড়ে গেল।’
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় যোগদানের পূর্বে ব্রিজটির কাজ শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না।’
তিনি জানান, ‘ব্রিজ নির্মাণকাজে ত্রুটি ছিল কিংবা সঠিকভাবে হয়তো পিলার বসানো হয়নি। এ কারণে ব্রিজটির পিলার দেবে গেছে। এখন ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, এ ঘটনায় শীঘ্রই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং যারা এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মো: শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.