কাজিপুরে যমুনা শাসনে একনেকে অর্থ পাশ : দেশের সব নদীপথ সচল হচ্ছে

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রাণ হচ্ছে নদ-নদী। ছোটবড় প্রায় ৪৯১ টির মতো নদী রয়েছে এদেশে। এসব নদীর স্বচ্ছতোয়া পানি বাংলার কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে জোগায় স্বস্তি, দেয় হাতভরে সবুজের সমারোহ। দিনে দিনে নদীগুলো রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে। হচ্ছে দখল আর ঘটছে দুষণ। আবার নাব্যতা হারিয়ে ভাঙছে দু পাড়।

অবশেষে এসব সমাধানে এগিয়ে এসেছে বর্তমান সরকর। নদ-নদীর গতিপ্রবাহ ঠিক রাখা, বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ পুনরুদ্ধার, নদী খনন, নদী দখল ও ভাঙন রোধ, নদী শাসন—দেশের সার্বিক নদী ব্যবস্থাপনায় একটি পরিকল্পিত মাষ্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে গঠিত কমিটি ধারণাপত্র জমা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে দেশে সচল নৌ-রুট রয়েছে ছয় হাজার কিলোমিটার, যা ষাট দশকের প্রথম দিকে ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় পর ২০১৮ সালে দেশের নৌ-রুট চিহ্নিতকরণ, পুরনো রুটগুলো ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল রাখার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়।

ইতোমধ্যে এই মাস্টার প্ল্যানের একটি ধারণাপত্র জমা দেয়া হয়েছে। এতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৪৯১টি নদী খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি দেশের নৌপথকে ১৪ থেকে ১৫ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৮টি নদী রক্ষণাবেক্ষণ ও নৌপথ উন্নয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ)।

৩৩১টি নদীর নৌপথের উন্নয়ন তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পড়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) ওপর। এর মধ্যে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মতো বড় নদীও রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৪৯১টি নদী প্রকল্পের আওতায় রাখা হলেও পরবর্তীতে তা বাড়ানো হবে।

মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে গঠিত ১১ সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে। কমিটিতে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), হাওর বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞরা।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, দেশের নৌ-রুট নির্ণয়, নৌ-রুটের সংস্কারসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সর্বশেষ জরিপ হয় ১৯৮৪ সালে। তিন বছর মেয়াদি এই জরিপ পরিচালিত হয়ছিল নেদারল্যান্ডসের সহায়তায়। ১৯৮৭ সালে এই কার্যক্রম শেষ হয়, যা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রথম জরিপ কার্যক্রম।

মাস্টারপ্ল্যানের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার জানান, গত ৩৪ বছরে দেশের নদী ও নৌপথের ডিটেল সার্ভে হয়নি। বিআইডব্লিউটিএ দেশের নৌ-রুটগুলো সচল রাখতে জরুরী ভিত্তিতে কিছু কিছু নদীপথের জরিপ ও ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

তিনি আরো বলেন, সড়কপথের চেয়ে কম খরচে পণ্য পরিবহনের জন্য উপযুক্ত এই যোগাযোগ ব্যবস্থা বিভিন্ন সময় অবহেলিত হয়ে আসছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দীর্ঘ তিন দশক পর দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ পুনরায় চালু, নতুন নৌপথ সৃষ্টি, নৌ-রুট বৃদ্ধি সর্বোপরি নৌপথের সুরক্ষার একটি ধারণাপত্র আমরা জমা দিয়েছি। ধারণাপত্রে নদীর নাব্য সংকট দূর করতে বিভিন্ন নদী ও নৌপথের ড্রেজিংয়ের জন্য একটি মডেল তৈরী এবং  ড্রেজিং কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী হয় সেই বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রাথমিক ও জরুরিভিত্তিতে কতটি নদী পরিকল্পনায় আনা হবে তার উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে আজ বুধবার (০৪ নভেম্বর) কাজিপুরের শুভগাছা থেকে মেঘাই পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ ও খনন কাজের জন্যে ৫৪০ কোটি টাকা একনেট বৈঠকে পাশ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এতে করে কাজিপুরের নদীভাঙন অনেকটাই কমে যাবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি মোসুলতান হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.