কসবা উপজেলায় সমলয় চাষ পদ্ধতিতে অনিয়মের অভিযোগ

বিশেষ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: কসবা উপজেলায় সমলয় চাষ পদ্ধতিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সেচের টাকা বহন করতে হচ্ছে কৃষকদের। অশন্তোষ বিরাজ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় কৃষক।
জানা যায়, উপজেলায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে “সমলয় চাষ পদ্ধতি” বোরো ধান আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক চাষাবাদ সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির একটি হলো সমলয় চাষ পদ্ধতি।
এই পদ্ধতিতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষক স্বল্প সময়ে অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারবে। এ প্রণোদনার আওতায় ৫০ একর জমিতে অধিক ফলনশীল সুবর্ণ-৩ হাইব্রিড বোরো ধান আবাদের জন্য সাড়ে ৪ হাজার ট্রে-তে (১০০ টাকা মূল্যমানের ট্রেতে) বোরো বীজতলা তৈরি করে তুলনামূলকভাবে কম খরচে কৃষকদের অধিক লাভবানের ব্যবস্থা। প্লাস্টিকের ফ্রেম বা ট্রে-তে বীজতলা তৈরি করা।
এতে ৩:২ অনুপাতে মাটি ও গোবরে মিশ্রণ দিয়ে বীজতলা তৈরি করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে পুনরায় অর্ধেক মাটি ও গোবর মিশ্রণ দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। ওই বীজতলা থেকে ৩ দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হবে। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা উৎপাদন করে রোপন করা যাবে।
ওই চারা রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে বীজের চারা রোপণ করে কৃষকের খরচ ৩০ভাগ খরচ কমিয়ে দেয়া। এতে কৃষক ভালো মানের চারা উৎপাদন করে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক জমিতে ফসল ফলাতে পারবেন। এরই ধারাবাহিকতায় কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামে ৫০ একর (১৬৬ বিঘা) জমিতে “সমলয়” চাষ পদ্ধতি প্রজেক্ট শুরু করে।
কিন্তু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম এর সহযোগিতায় ট্রে-তে বীজতলা তৈরি না করে বেশি সংখ্যক পলিথিনে কিছু মানহীন নর্মাল ট্রেতে বীজতলা করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে এ পদ্ধতি থেকে সরে এসে সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করার পিছনে কৃষকরে ভাগ্যকে দোষছেন। ১৬৬ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ৬০ বিঘা জমি কৃষি অফিস বীজ সংকটে চারা রোপন করতে পারেনি।
আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার না করার কারণে কৃষকদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। যা সরকারের এ প্রণোদনাকে ব্যহত করছে। এমনকি সমলয় চাষ প্রজেক্টের কৃষকগণ অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে অপরাগতা প্রকাশ করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস প্রতি বিঘা জমিতে চারা রোপণ বাবদ খরচ দিচ্ছেন ৯১০ টাকা করে। অথচ কৃষকের খরচ হচ্ছে ১৬-১৭শ টাকা করে। তাছাড়া ফসলী জমিতে নিজ খরচে সেচও দিতে হচ্ছে।
কৌশলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  এ সমস্ত ব্যয় কৃষকদের ঘারে চাপিয়ে দিচ্ছেন। স্থানীয় কৃষকরা অসন্তুুষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সৈয়দাবাদ গ্রামের কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুুর রহমান বলেন, সব খরচ কৃষি অফিস বহন করার কথা বলে আমার কাছ থেকে জমি নেয় কিন্তু জমি চাষ ও পানির খরচ আমাদেরই বহন করতে হচ্ছে।
ওই প্রজেক্টের কৃষক মো. রফিক বলেন, আমার জমিতে চাষ করতে পারেনি, কৃষি অফিসার আমকে বলেছে আমি চারা লাগানোর জন্য খরচ দিবে ৯০০ টাকা। মানুষ দিয়ে লাগালে খরচ পড়ে ১৫শ টাকা। কৃষি অফিস না বললে আমি অন্য ব্যবস্থা করতাম।
ওই প্রজেক্টের আরেক জন কৃষক মোস্তফা মিয়া বলেন, কৃষি অফিস খরচের ব্যবস্থা করবে বলে নিশ্চিন্ত ছিলাম। তা না হলে ধার  করে হলেও জমি চাষ করতাম। এখনতো ধারও পাচ্ছি না।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার হাজেরা বেগম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার স্যারের  নির্দেশ মোতাবেক বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণসহ সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, প্রকল্পে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক যে ব্যয় ধরা হয়েছে সেভাবেই উপজেলা কৃষি অফিসারকে কাজ করতে হবে। অনিয়মের ব্যত হলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখার বিষয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকমো. রবিউল হক মজুমদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সমলয় প্রকল্পে নিয়ম বহির্ভূত কোনো নির্দেশনাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দেয়া হয়নি। নির্দেশনা অমান্য করে কিছু হয়ে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
প্রকল্প পরিদর্শনে এসে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিরক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার বিটিসি নিউজ এর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বড় ধরণের প্রকল্পে কিছুটা ভুলভ্রান্তি থাকতেই পারে। তবে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.