কসবায় বেগম রোকেয়া দিবসে  জয়িতা সাম্মাননা গ্রহণ করে সফল জননী স্বপ্নেহার বেগম শুনালেন তার গল্প

ব্রাহ্মণবাড়িয়া(কসবা) প্রতিনিধি: আজ রবিবার সকালে কসবা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি পালনে বর্ণাঢ্য র‌্যালী, আলোচনা সভা ও শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো.আনিসুল হক ভূইয়া।
বিশেষ অতিথি ছিলেন: উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহীন সুলতানা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিছ বেগম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জোবাইদা আক্তার, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সৈয়দাবাদ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর আহমেদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. হুমায়ুন কবির, কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি মো.সোলেমান খান, কসবা টি.আলী ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ.কে আজাদ ও  কসবা থানা উপপরিদর্শক মো.বেলাল হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রওনক ফারজানা রুবা। সঞ্চালনায় ছিলেন শারমিন সুলতানা ও লায়লা আক্তার লিপি।
পরে সফল জননী হিসেবে উপজেলার বাদৈর গ্রামের মাহের মিয়ার স্ত্রী সপনেহার বেগম, শিক্ষা ক্ষেত্রে খাড়েরা গ্রামের হারুনুর রশীদের স্ত্রী শপনেহার বেগম  এবং অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে পৌর এলাকার তারাপুর গ্রামের মোস্তফা হারুনের স্ত্রী লুৎফা বেগমকে জয়িতা নারী হিসেবে সম্মাননা পদক দেয়া হয়।
সফল জননী স্বপ্ননেহারের গল্প:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কতৃক আয়োজিত ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ‘ উদ্যোগের মাধ্যমে দেশব্যাপী জয়িতাদের খুঁজে বের করা হয়। একজন সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নাম জয়িতা। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক জয়িতা। কেবল নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল আর চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন।২০১৮ সালের সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে কসবা উপজেলায় নির্বাচিত হয়েছেন স্বপ্নাহার বেগম।
স্বপ্নাহার বেগম। বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর। স্বামী মো: মাহের মিঞা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বাদৈর গ্রামের বাসিন্দা। একই উপজেলার ভল্লবপুর গ্রামের কন্যা, পিতার নাম আবুল বাশার ভূঞ্রা।
বারংবার সামাজিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পরেও আবার নতুন করে শুরু করেছেন সম্পূর্ণ স্বউদ্যোগে ও স্বপ্রচেষ্টায়।সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক পিছুটান থাকার পরেও সন্তানদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় স্বামীর সহযোগিতা নিয়ে সকল সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন এবং স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সফল জননী নারীর কর্মকান্ড একনজরে:
ছয় সন্তানের প্রত্যেককে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করিয়েছেন। তাঁর নিজ প্রচেষ্টায় আজ বড় সন্তান সফিকুল ইসলাম সরকারের উপসচিব, আরেক সন্তান সামসুল হক সরকারি কলেজের শিক্ষক (বিসিএস) ও অন্যান্য সন্তান নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
শশুর ও ভাসুরের অসুস্থতাজনিত মৃত্যুর কারণে আকস্মিক চরম অভাব নেমে আসে সংসারে যা অনাকাঙ্খিত।
আর্থিক কষ্টের মাঝেও পরিবারের সকল সন্তানকে মাস্টার্স পাস করিয়েছেন।
সামাজিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সকল সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে সুনাগরিক হিসেব গড়ে তুলেছেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা ও অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পরেও দৃঢ় মনোবল ও অদম্য ধৈর্য দেখিয়ে সফল হয়েছেন।
সততা আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সকল সন্তানকে আর্থিকভাবে সফল করেছেন।
অভাব-অনটনের করাল গ্রাস থেকে বেড়িয়ে এসে সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য এনেছেন।
আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে সমাজের অন্যদের জন্য উদাহরণ তৈরি করেছেন।
প্রত্যেক সন্তানকে সামাজিকভাবে স্বার্থক অবস্থানে নিয়েছেন যারা এখন সমাজের উন্নয়নে নানাভাবে ভূমিকা রাখছে।
সফল জননী নারী স্বপ্নাহার বেগম বলেন “আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি মা যদি কষ্ট করে পরিশ্রম করে, পরিকল্পনা করে, সংসারের হাল ধরে রাখে;   তবে সন্তানরা মানুষ হবেই। বাকিটা আল্লাহর হাতে। আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি। শুধু পড়াশোনা করাইনি,  নৈতিক শিক্ষা দিয়েছি, ভালো ব্যবহার শিখিয়েছি। শুধু কাজই করেছি সারাজীবন। কথায় নয়, কাজেই বিশ্বাস করি।কাজ করতে গিয়ে, কথা বলার ফুরসত মেলেনি।আমার জন্য, আমার সন্তানদের জন্য, দোয়া করবেন। তারা যেন পরিবারের জন্য কাজ করে, প্রতিবেশির জন্য কাজ করে, তারা যেন গ্রামের জন্য কাজ করে, তারা যেন উপজেলার জন্য কাজ করে, তারা যেন দেশের জন্য কাজ করে, তারা যেন মানুষের ভালোবাসা পায়, তারা যেন কাউকে কষ্ট না দেয়।
এক মেয়ে। সবাইকে সঠিক শিক্ষা দিয়েছেন। খুব ছোট থাকতেই বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন গল্প, কিচ্ছা শোনাতেন। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর প্রতিরাতে  ঘুমানোর আগে রূপকথার গল্প শোনাতেন ও নৈতিক শিক্ষার জন্য বাস্তব উদাহরণ ইত্যাদি দিয়ে জীবনাচরণ শিখিয়েছেন। সময়ের অভাবে রান্নার সময় লাকড়ির চুলার পাশে বসিয়ে রেখে প্রত্যেক সন্তানকে মা হিসেবে নিজের হাতে অক্ষর শিখিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়সমূহ পড়িয়েছেন।  মক্তবে দিয়েছেন দ্বীনি শিক্ষা লাভের জন্য।নিজের অদ্যম ইচ্ছা  শক্তিই সকল প্রতিকূলতায় সফলতার মূল স্মাবল।  সকলের কল্যাণ হউক।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া(কসবা) প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.