কসবায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে কলেজ ছাত্র নিহত, আহত প্রায় ২০, আটক-২

বিশেষ প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় আজ শনিবার সকালে জমি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তানভীর আহাম্মদ (২৩) নামক এক কলেজ ছাত্র নিহত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক। এ ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে আটক করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
নিহত তানভীর আহাম্মদ কসবা উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সলিম মিয়ার একমাত্র ছেলে। নিহত তানভীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অর্নাস তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং মূলগ্রাম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। নিহতের লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
আহতদের মধ্যে শান্ত মিয়া (১৮), রাজন মিয়া (২৬), মো. আনোয়ার হোসেন (৫৫), সুমন মিয়া (৩২). রফিকুল ইসলাম (৬৫), ইকবাল হোসেন (৫৫), শাহআলম মিয়া (৩৯) ফারুক মিয়া (৪০), মাহাবুবুল (৪২), জমিলা বেগম (৬০), ঝর্ণা বেগম (৬২)সহ অন্যান্যদের কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত শান্ত মিয়া ও রাজন মিয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও শাহআলম মিয়াকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশ ফারুক মিয়া (৪২) ও মো. শামীম মিয়া (৩৮) কে আটক করেছে। আটককৃতরা কসবা থানা হাজতে রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, কসবা উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে সাবেক ইউপি সদস্য সলিম মিয়া ও ফারুক মিয়ার লোকজনদের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো। গত জানুয়ারি মাসে সলিম মিয়ার বাড়ির সামনে থেকে ফারুক মিয়া ও তার লোকজন দুই একর ২২শতক ভূমি ক্রয় করেন। এ নিয়ে বিরোধ আরো চরম আকার ধারন করে।
তিনদিন আগে সলিম মিয়ার ভাই শরীয়তুল্লাহ্ ওই জমির পার্শ্ববর্তী নিজেদের মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি কাটেন। এতে করে ফারুক মিয়ার লোকজন সলিম মিয়ার লোকজনের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে গালমন্দ করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
আজ শনিবার (০৪ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ফারুক মিয়ার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে সলিম মিয়ার লোকজনের উপর হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। এতে তানভীর মিয়াসহ আরো কমপক্ষে ২০জন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় গুরুতর আহত তানভীর আহাম্মদকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
খবর পেয়ে কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল কাউছার ভূইয়া জীবন ঘটনাস্থল গিয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। এ সময় তার সঙ্গে মূলগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. ময়নুল হোসেন, কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন উপস্থিত ছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সাবেক ইউপি সদস্য সলিম মিয়া একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কোন কথা বলতে পারছেন না। তাঁর ভাইপো পল্লী চিকিৎসক মো. মোমিন মিয়া বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ফারুক মিয়া তাদের বাড়ির সামনেই জমি ক্রয় করেছেন। ওই জমির পাশে চাচার নিজস্ব জমি থেকে মাটি কেটেছেন। ফারুক মিয়ার লোকজন চাচা ও চাচীকে বাড়িতে এসে গালমন্দ করেছে।
বিষয়টি নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ফারুক মিয়ার লোকজন তাদের বাড়িতে দেশিয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। এতে করে তাদের চাচাত ভাই সলিম মিয়ার ছেলে তানভীর খুন হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের আরো কয়েকজন গুরুতর আহত রয়েছে।
এদিকে ফারক মিয়া বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সলিম মেম্বারের বাড়ির সামনে থেকে সালা উদ্দিন ও আলাউদ্দিনের কাছ থেকে দুই একর ২২শতক জমি তারা ক্রয় করেছেন। ওই জমি ক্রয় করায় সলিম মেম্বারের লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে তাদেরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লোকমান হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। দুইজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। হত্যার ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.