কলকাতায় ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা, গ্রেপ্তার-১

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কলকাতায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেমিনার হল থেকে এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে মুখ, পেট, গলা, বুক, ঠোঁট, এমনকি যৌনাঙ্গেও আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। এ ঘটনায় ধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যে এক জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সেই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তবে প্রশ্ন ওঠেছে এ ঘটনায় জড়িতের সংখ্যা নিয়ে।
তরুণী ইন্টার্ন চিকিৎসকের মৃতদেহে যে ধরনের ও যত সংখ্যক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে, তা কি এক জনের পক্ষে করা সম্ভব? আন্দোলনকারী মেডিক্যাল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের একাংশ এমন প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেও।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, নিহতের দেহে ১১টিরও বেশি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। মিলেছে চোখ ও মুখ থেকে রক্তপাতের প্রমাণও। আঘাতের চিহ্ন ছিল বাম পা, পেট, বুক, হাত, ঘাড়সহ আরো একাধিক জায়গায়। একাধিক বার ধর্ষণ করা হয়েছিল তাকে।
কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিনের এক চিকিৎসক জানান, অপরাধের ধরন ও একাধিক আঘাতের চিহ্ন থেকে পরিষ্কার, তরুণীর ওপরে দীর্ঘ সময় ধরে নির্যাতন চালানো হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে তরুণী স্বাভাবিক ভাবে চিৎকার-চেঁচামেচি বা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেনই। এ ঘটনায় একজন জড়িত থাকলে তরুণী হয়তো চিৎকার করতে সক্ষম হতেন।
কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি। তাই একাধিক জন জড়িত বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।
ফরেন্সিক মেডিসিনের এক প্রবীণ চিকিৎসক বললেন, একজন জড়িত থাকলে শরীরের এতগুলো জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা না। একাধিক আঘাত থাকতেই পারে, কিন্তু সেগুলো শরীরের দুই-তিনটি জায়গায় থাকার কথা। এখানে মুখ থেকে শুরু করে পা, সর্বত্রই একাধিক গভীর ক্ষত। ৩৫ মিনিট সময়ের মধ্যে এত জায়গায় এতগুলো আঘাত এবং একাধিক বার ধর্ষণ থেকে তাই নানা সংশয় দেখা দিচ্ছে।
এক চিকিৎসক আরো বলেন, গলা ও বুক, দুই জায়গায় জোরে চেপে ধরার প্রমাণ মিলেছে। এটা নিয়ে যথেষ্ট খটকা আছে। কারণ, শ্বাসরোধ করে কাউকে মারতে হলে দুটি হাতেরই প্রয়োজন। আবার দুই হাত দিয়ে শ্বাসরোধ করলে বুকের উপরে ওই পরিমাণ চাপ দেওয়া খুব কঠিন। যদি অনেকটা সময় ধরে অত্যাচার চলত, তাও না হয় কথা ছিল। কিন্তু এখানে যে সময়টা বলা হচ্ছে, তাতে এতগুলো জায়গায় আঘাত করা কীভাবে সম্ভব, চিকিৎসক হিসাবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, পুলিশ বলেছে গ্রেফতার হওয়া যুবকই একমাত্র অভিযুক্ত। চিকিৎসকদের একাংশের এই সংশয়ের কথা কি পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে? সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।
এদিকে যুবতী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত। এমনটাই জানা গেছে তদন্তকারীদের সূত্রে। তবে অপরাধের কথা স্বীকার করলেও এখনো তার মধ্যে কোনো অপরাধবোধ দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। তদন্তকারীদের একটি অংশের দাবি, অভিযুক্তের মধ্যে কোনো অনুতাপবোধ নেই। বরং অভিযুক্ত জেরার সময় বলেছেন, ‘ফাঁসি দিলে দিন।’
গত শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। টানা ডিউটি করে অনেকটাই ক্লান্ত ছিলেন ওই তরুনী চিকিৎসক। তাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন তিনি। ঠিক ওই সময়ই অতর্কিত হামলা চালান ওই অভিযুক্ত। এরপর ধর্ষণ করে তাকে হত্যা করা হয় বলে জানা গেছে কলকাতা পুলিশ ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.