কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে শতকোটির সম্পদ খোয়া, চুপ রেলের কর্তারা

 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে গাইবান্ধার পরিত্যক্ত দুইটি রেল লাইনের ২৪ কিলোমিটার অংশে নষ্ট হচ্ছে রেলের শত কোটি টাকার সম্পদ। দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে খুলে নিয়ে যাচ্ছে রেললাইনের স্লিপার, ফিশপ্লেট, নাট-বল্টু ও দু-পাশের লাইন। চুরি বন্ধে জিআরপির নিরাপত্তা পাহারা বসানো হলেও তা কাজে আসছে না।
পাহারা থাকা অবস্থায় কীভাবে নিয়মিত চুরি হচ্ছে- এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে, অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুইটি রেল লাইনের ২৪ কিলোমিটার অংশের কোথাও নেই স্লিপার, আবার কোথাও নেই ফিসপ্লেট। অধিকাংশ স্থানে নেই নাট-বল্টু। এক সময় এ পথে নিয়মিত ট্রেন চললেও দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় নজরদারির অভাবে চুরি হচ্ছে এ রেলপথটির বিভিন্ন অংশ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত নৌরুট চালু হয়। এ জন্য সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া স্টেশন থেকে তিস্তা মুখঘাট পর্যন্ত অতিরিক্ত ১২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ স্থাপন করা হয়।
১৯৯০ সালে নদীর নাব্য সংকটের কারণে ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাটটি একই উপজেলার বালাশীঘাটে স্থানান্তর করা হয়। তখন আবারও পার্শ্ববর্তী ত্রিমোহিনী স্টেশন থেকে বালাশী ঘাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মিত হয়।
১৯৯৮ সালের জুনে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হলে ২০০০ সাল থেকে এ রুটে রেলের ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০০ সাল থেকে প্রায় ২৪ বছর ধরে ত্রিমোহিনী-বালাসি রেলপথ পরিত্যক্ত রয়েছে। ফলে প্রায় ২৪ কিলোমিটার রেলপথ দীর্ঘ সময় থেকে পরিত্যক্ত।
কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে পরিত্যক্ত এ দুটি রেলপথের সরঞ্জাম নিয়মিত চুরি হচ্ছে। দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে খুলে নিয়ে যাচ্ছে রেললাইনের স্লিপার, ফিশপ্লেট, নাট-বল্টু ও রেললাইন। এখন বেশির ভাগ রেললাইন মাটির নিচে চাপা পড়েছে। অবশিষ্ট লাইনের নিচে নেই মাটি, অনেক জায়গায় জঙ্গলে ঢেকে গেছে লাইন। ফিশপ্লেট, নাট-বল্টু ও স্লিপারের মতো গুরুত্বপূর্ণ মালামালের কোনো অস্তিত্ব নেই অধিকাংশ স্থানে। রেলপথের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েক কিলোমিটার অংশ কোথাও এক পাশের আবার কোথাও দু-পাশের লাইন চুরি হয়ে গেছে। নিয়মিত ঘটছে এমন চুরির ঘটনা। বেশি চুরি হচ্ছে ত্রিমোহিনী-বালাসি রেলপথের কঞ্চিপাড়া, মধ্য-কঞ্চিপাড়া, বালাসি ও বোনারপাড়া-তিস্তামুখ রেলপথের গজারিয়া ও উল্লা ভারতখালী এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, চুরি বন্ধে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দিনে ও রাতে পাহারা বসানো হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। নিয়মিত ঘটছে চুরির ঘটনা। পাহারারত অবস্থায় নিয়মিত চুরি ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেয়ায় রেলওয়ের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানান তারা।
মধ্য-কঞ্চিপাড়া গ্রামের মমিন মিয়া বিটিসি নিউজকে জানান, দীর্ঘদিন থেকে এসব লাইন চুরি হলেও রেলওয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। রাতের আধারে হারিয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার সরকারি সম্পদ।
একই এলাকার শামিম মিয়া বিটিসি নিউজকে জানান, এলাকার চিহ্নিত কিছু ব্যক্তির সহায়তায় পাহারা থাকা অবস্থায় নিয়মিত লাইন কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব লাইন জেলা শহর ও এর আশপাশের ভাংরীর দোকান ও কামারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা সবার অজানা।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে রাজি হননি বোনারপাড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম ও রেলওয়ে নিরাপত্তার বাহিনীর (আরএনবি) দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপুলিশ পরিদর্শক মো. মইনুল ইসলাম।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মো: শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.