করোনা মহামারির সময় নতুন আতঙ্ক নদীভাঙন !

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস মহামারির সময় নতুন আতঙ্ক যুক্ত হয়েছে নদীভাঙন। আর এই আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষের।
জানা গেছে, ধরলা আর তিস্তা নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটের দুই পাশে দুই নদী প্রবাহিত। জেলার ৫টি উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে খরস্রোতা এই দুই নদী। বালু জমে তলদেশ ভরাট হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ধু ধু বালু চর হলেও বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহের পথ না থাকায় বন্যা আর ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে তিস্তায়।
প্রতিবছর তিস্তার কড়াল গ্রাসে বসতভিটা হারিয়ে বাঁধ আর রাস্তার ধারে মানবেতর জীবনযাপন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ভাঙনে ফসলি জমি বিলীন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি। পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে নদী খনন করে উভয় তীরে বাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধান দাবি করছে তিস্তার বাম তীরের মানুষ।
প্রতি বছর ভাঙনের সময় আশ্বাস্ত করা হলেও কার্যত দীর্ঘদিনের এ দাবি পূরণ হয়নি তিস্তাপাড়ের মানুষের। প্রতি বছর নদীভাঙন আর বন্যার সংকট কাটিয়ে উঠতে সঞ্চয় করে রাখলেও এবারের সেই সঞ্চয় করোনার লকডাউনে শেষ হওয়ায় মহা চিন্তায় পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।
ভাঙনের কবলে পড়ে অপরিপক্ব পাট, বাদাম ও ভুট্টাসহ সব ফসল ঘরে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন তীরবর্তী কৃষকরা। কয়েকদিনের ব্যবধানে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড়, চন্ডিমারী, দক্ষিণ বালাপাড়া এবং সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা গ্রামের প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি তিস্তাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে কুটিরপাড়, চন্ডিমারী ও চর গোকুন্ডা গ্রাম। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে জেলার তিনটি সলেডি স্প্যার বাঁধ। সংস্কারের বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজে মন্থরগতি এবং সেই কাজের জন্য নদীর তীরে বোমা মেশিনে বালু উত্তোলনের কারণে আসন্ন বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা স্থানীয়দের।
সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা গ্রামে ভাঙনের কবলে পড়া দুলু মিয়া, নওশাদ ও আহাদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, গত ১০ দিনের ব্যবধানে আমাদেরসহ এ গ্রামের ২৫টি বসতভিটা, কবরস্থান, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে।
কেউ পাশে জমি ভাড়া নিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই পেলেও অনেকেই রাস্তার ধারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় পরিদর্শন করে বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাইরে বের হতে না পেয়ে অনেকেই অর্থ কষ্টে ভুগছেন। এর মধ্যে নদীভাঙন শুরু হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে বলেও দাবি করেন তারা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসার আলী হায়দার জানান, আসন্ন বন্যা আর নদী ভাঙনে সহায়তা দেওয়ার মত কোনো ঢেউটিন মজুদ নেই। নতুন অর্থ বছরে বরাদ্দ এলে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে। তবে করোনা মোকাবিলায় কিছু মজুদ আছে। জরুরি প্রয়োজনে তা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, করোনার মধ্যেও আসন্ন বন্যা আর নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা ও স্কাউট। বাঁধগুলো সংস্কার ও প্রয়োজনীয় এলাকায় পাইলিং দেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.