করোনা ভাইরাস 

কাজল ধরগুপ্ত: (কলকাতা): ভাইরাস কি? তা সহজ এবং প্রাঞ্জল ভাবে স‍্যার জগদীশ চন্দ্র বসু তার ” অব‍্যক্ত জীবন ” প্রবন্ধে বলে গেছেন। ভাইরাস সতন্ত্রভাবে একটি নিস্প্রাণ জড় পদার্থের মতো, তাকে মারা যায় না, কারণ তার প্রাণ নেই। কিন্তু কোনো জ‍্যান্ত কোন হোস্ট সেল বা সহযোগীর সঠিক সংস্পর্শে সে জীবন পায় এবং দ্রুত রিপ্রোডাক্শনের মাধ‍্যমে শরীরে বংশবৃদ্ধি করে শরীর অসুস্থ করে।
মেডিক্যাল সাইন্সের রোগ সম্পর্কে মূল কথা nature cures, medicines help. আমাদের বাঁচায় বা সুস্থ করে আমাদের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ শক্তি বা inherent natural immunity. এর সাহায্যেই প্রাণীজগতের বেঁচে থাকা। এটা একটা যুদ্ধ এবং এতে জয় পরাজয় আছে।
আমি ডাক্তার বা চিকিৎসক নই, আমি একজন বিজ্ঞানের ছাত্র। আমার বিশেষ বন্ধু ডঃ সৌম‍্য ভাদুড়ী আমেরিকার জাতীয় গবেষণাগারে ভাইরোলজি নিয়ে গবেষণা করতো এবং সে মাইক্রোবায়লজি ও বায়কেমিষ্ট্রির লোক। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় যেটুকু এই ভাইরাস সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি তা আমি অলিভিয়ার অনুরোধে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই, তাতে অলিভিয়ার বিশ্বাস ওর মতো আপনারাও উপকৃত হবেন। কোনো ভুল ভ্রান্তি থাকলে আপনারা আমাকে শুধরেও দেবেন।
আগেই বলেছি, ভাইরাসকে মারা যায়না, তাকে নিস্ক্রিয় করা যায় বায়োকেমিক‍্যালি তার হোস্ট সহযোগীকে নির্মূল অথবা নিস্ক্রিয় করে অথবা থার্মাললি তার ফিজিক‍্যাল ডেস্ট্রাকশন করে যা মানব শরীরে সম্ভব নয়।
তাই ইনফ্লুয়েঞ্জা সম্পর্কে একটি কথা চিকিৎসকরা বলেন, এই আলমারি ভর্তি ওষুধ আছে, খেলে এক সপ্তাহে সেরে যাবে, না খেলে এমনি সারতে সাতদিন লাগবে। তার অর্থ ওষুধ খাও না খাও , ভাইরাস তার নির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে আপনি চলে যাবে, আমরা শুধু উপসর্গ নিরাময়ের ব‍্যাবস্থা করতে পারি মাত্র।
অন্য উপায় ভ‍্যাকসিনের সাহায্যে শরীরে ইমিউনিটি বাড়ানো। কিন্তু করোনা ভাইরাস আর এন এ বেজড্। এরকম ভাইরাসের ভ‍্যাকসিন হয়না, এরা খুব তাড়াতাড়ি রূপ বদলায়, যতদিনে তার ভ‍্যাকসিন তৈরী হবে, তারমধ্যে সে নিজেকে পাল্টে ফেলবে। তাই আমাদের নিজেদের ইমিউনিটি দিয়েই এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
শুধু উপসর্গগুলোকে দূর করে সময় কাটানোই একমাত্র পথ এবং এখন তাই করা হচ্ছে। ক্লোরোকুইন এবং এজিথ্রোমাইসিন মিশ্রণে ওষুধ ব‍্যবহার করা হচ্ছে বলে শোনা যায়। আবার এও শোনা যায় কোথাও কোথাও যারা এই সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছে, তাদের ব্লাড প্লাজমা ইনজেকশন করে আক্রান্তর শরীরে এ্যান্টিবডি দেওয়া হচ্ছে, আন‍্য একটি পথ আমেরিকা এবং ইউরোপে নিয়ে থাকতে পারে, হার্ড ইমিউনিটি গ্রো করা। এতে কমিউনিটি ট্রানসমিশন হতে দেয়। আক্রান্ত হয়ে যারা বেঁচে সুস্থ হোলো তাদের কমিউনিটি ইমিউনিটি হয়ে যাবে, আর ভয় থাকবে না। সত্যি মিথ্যা জানিনা, কিন্তু ভরসা সেই সেল্ফ ইমিউনিটিই।
এবার আসি সেল্ফ ইমিউনিটি প্রসঙ্গে। এটা স্থান কাল, আবহাওয়া নির্ভর। যে বস্তির শিশুটি নোংরা জলে স্নান করে ঐ পরিবেশে বেড়ে উঠছে, তার সেল্ফ ইমিউনিটি আর প্রাসাদে থাকা মানুষটির সেল্ফ ইমিউনিটি এক হতে পারেনা। এবং ভাইরাস ইনফেকশনের বা যে কোনো ইনফেকশনের একটা থ্রেসোল্ড এ্যামাউন্ট থাকে যে পর্যন্ত এ্যান্টিবডি প্রোটেকশন দেবে। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে আমরা এই সময়ে প্রত‍্যেকে করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছি না। প্রবেবিলিটির দিক দিয়ে কম বেশী হচ্ছি, কিন্তু কাবু করতে পারছেনা। এগুলো সব মাক্রো ইনফেকশন, কোনো টেস্টে এটা ধরা যায় না।
একটা উদাহরণ দিই, আপনি আপনার চৌবাচ্চায় ভর্তি জলে এক দানা নুন ফেলুন। এমন কোনো টেস্ট কি আপনার জানা আছে যা ঐ নুনের উপস্থিতি চৌবাচ্চার জলে প্রমাণ করবে? সেনসিটিভিটি পারমিট করবে না। কিন্তু নুনটাতো সত্যিই আছে ওখানে। এই ভাবে আমরাও মাক্রো ইনফেকশনের দ্বারা ইমিউন্ড হোচ্ছি। যত সময় যাবে, তত ইমিউন্ড হবো এবং রোগ প্রতিরোধ করবো।
আমরা আগে থেকেই এডভারস্ড ভাইরাস কন্ডিশনে এক্সপোজ্ড। আমাদের লড়াইয়ের ক্ষমতা অনেক বেশী। শুধু সোসাল ডিস্টেন্সিং এবং আইশোলেশন করে বাড়তি সময় টা দিন। আমারা করবো জয় নিশ্চয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.