করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী মারুফ হাসানের খোলা চিঠি

হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দেশ এখন ভয়াল কোভিড-১৯ এর থাবায়। এমন পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষিত জনগণের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) বিবিএ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ মারুফ হাসান (সিনিয়র সহ-সভাপতি হাবিপ্রবি ছায়া জাতিসংঘ সংস্থা)
কোভিড-১৯ একটি ছোঁয়াচে রোগ এবং মোটামুটি সকলেই জানি কোভিড-১৯ ভাইরাস আক্রান্ত হলে কি কি লক্ষণ (জ্বর, সর্দি, শুকনা কাশি, শ্বাসকষ্ট, শরীরের বিভিন্ন ব্যথা ও কিছু ক্ষেতে ডায়রিয়া) পরিলক্ষিত হয় , কিভাবে এটি মানুষের মাঝে ছড়ায় (আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি কিংবা তাঁর সংস্পর্শে আশা যেকোনো বস্তু),কিভাবে এর বিস্তার ছড়ানোকে প্রতিরোধ করতে পারি (সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া অন্তত ২০ সেকেন্ড, হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় রুমাল, টিস্যু কিংবা হাতের কনুই ব্যবহার করা ও সাথে সাথে সেগুলো ঢাকনা যুক্ত ডাস্টবিনে ফেলানো কিংবা হাত ধুয়ে ফেলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অন্তত ৩ফুট, আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা, এমন লক্ষণ দেখা দিলে বাসা থেকে বের না হওয়া কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নেওয়া, সর্বোপরি নিজে জানা এবং সকলকে জানানোর মাধ্যমে সচেতন করা তার সাথে সাথে গুজবে কান না দেওয়া।)
জানিতো নাকি?
এখন একটু দেখার চেষ্টা করা যাক জানার পর আমরা কি করছি।আমরা কি এই জিনিসগুলো মানি বা মানার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি!আচ্ছা মেনে নিলাম গ্রামের মানুষ মানছেনা, শ্রমিকরা মানছেনা, বাচ্চারা মানছেনা।আচ্ছা আপনি আমি শিক্ষিত জাতি যেভাবে শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের বিবেক বর্ধিত করেছি তাঁরা কি সকলেই এতো বেশি বোধগম্যতা রাখে! তাঁরা কি এতো বেশি সচেতন!দেখুন আমি তাদের অবহেলা বা নীচু চোখে দেখছিনা, শুধু বোঝানোর চেষ্টা করছি তাঁরা নিশ্চয়ই আমার আপনার মতো এতো বেশি জ্ঞানপূর্ণ নয়।
একটা গল্প শেয়ার করছি।আমি এই করোনা আতঙ্কে অনেক বেশিই আতঙ্কিত ছিলাম।বাহিরে যেতে সাহস হয় নি।নিজেই নিজের ডান হাত বাম হাত থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতাম।কিন্তু যতই আতঙ্কিত হইনা কেনো বেঁচে থাকার জন্য খেতে হবে।তাই বাজারে গেলাম।বাজারে মানুষদের উপচে পড়া ভীর দেখে যতটুকু আতঙ্কিত ছিলাম তার থেকে আরো বেশি আতঙ্কিত হলাম।কেও কোনো নির্দেশনা মানছে না, যে যার মতো করে চলছে।বলতে গেলে কেয়ারলেস। একজনতো তারই মধ্যে হাঁচি দিয়ে দিলো এক্কেবারে খোলা বাতাসে। আমি আরো বেশিই আতঙ্কিত হয়ে গেলাম।খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।এমন যদি বাহিরের বাস্তবতা তবে কেমন করে সম্ভব এই মহামারী কে প্রতিরোধ কিংবা প্রতিকার করা!
অন্যদিকে এসবের মাঝেই অনেকে বলাবলি শুরু করে দিয়েছে “এগুলো বড়লোকের রোগ হামার হবিনা; মাঠত কাম করে করে হামরা এতো কিছু নারনো এলা কিসের করুনা মরুনা আইছে হামার এলা হবি না, হামরা পুরান মানুষ কতো রোগ আসলো হামাক ধরিল না”
তাহলে আমরা আমাদের বাংলাদেশকে এই ভয়াল থাবা থেকে আটকিয়ে রাখবো কোন পন্থায়? কেমন করে নিয়ন্ত্রিত হবে এই দুঃসময়টা? আগের মতো স্বাভাবিক জীবন কখন পাবো?আপাতত সে আশা বাদ দেওয়া যাক যতদিন না ভ্যাকসিন বা এই ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হচ্ছে।কারণ আমরা শুধু শিক্ষিত না,আমরা শিক্ষিত এর সাথে সাথে শিক্ষিত্মূর্খ।তাই সেই ভাইরাস দমনের প্রতিকার আবিষ্কার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অন্তত আমাদের এই ভাইরাস ছড়ানোকে শিথিল রাখতে হবে তাই নয় কি?
কি করতে হবে!
বর্তমানে বাংলাদেশর শিক্ষিতের হার অনেক বেশি।বলতে গেলে মোটামুটি বর্তমান যে তরুণ সমাজ রয়েছে তার প্রায় সবাই কোনো না কোনো ভাবে শিক্ষার সাথে জড়িত। সর্বোপরি প্রত্যেক পরিবারে একজন করে হলেও শিক্ষিত একজন মানুষ আছে।সেই পরিবারের ১জন শিক্ষিত মানুষ যদি শতভাগ সচেতন থাকে তাহলেই এই মহামারীর সংক্রমণ অনেকাংশে কমে যাবে বলে আমি মনে করি।আমরা এসব পরিবারের ১ জন চাইলেই পুরো পরিবারকে সচেতন করতে পারবো। ১জন করে ১টি পরিবারকে সচেতন করতে পারলেই পুরো মহল্লা,গ্রাম, সমাজ সর্বোপরি দেশকে সচেতন করা সম্ভব।তবে হ্যাঁ সবার আগে নিজেকে জানতে হবে,সঠিকটা বুঝে মানতে হবে।তারপর বোঝাতে হবে মগজধোলাই করে।এতেও না বুঝলে এমন পরিস্থিতিতে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলেও একটু রূঢ় হতে হবে।ঠিক সারফেক্সেল এর বিজ্ঞাপনের মত দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয় তবে দাগই ভালো।তেমনি সেই প্রতিটি পরিবারের ১জন শিক্ষিতের রূঢ় আচরণ থেকে যদি দেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ কমানো যায়, তবে সেই রূঢ় আচরণই ভালো।
তাহলে আসুন শুধু শিক্ষিত নয় একজন আদর্শ শিক্ষিত হই, একজন আদর্শ নাগরিক হই, সর্বোপরি কোভিড-১৯ রুখতে দেশের একজন যোদ্ধা হই।যেখানেই থাকুন সুস্থ থাকুন ও বাড়িতে থাকুন, শুধু নিজে নয় সকলকে নিয়ে সচেতন থাকুন।আমার এই খোলা চিঠি সকলের কাছে পৌছাবে কিনা তা না জানলেও যে ক’জনই পড়বেন একটু গুরুত্ব দিবেন, একটু দেশকে ভালোবাসবেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি মোঃ মিরাজুল আল মিশকাত। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.