করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার তারিখ পরিবর্তন : ডা. খুরশীদ আলম

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: মহামারি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম পরিকল্পনায় আবারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। টিকাদান কার্যক্রমের শুরু থেকে ৮ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা বলা হলেও পরে আবার সেটাকে ৪ সপ্তাহে নামিয়ে আনা হয়। পরে এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা সমালোচনার মুখে সেটাকে আবারও ৮ সপ্তাহ করা হয়েছে।
আজ সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় কমিটিসহ অনেকের সঙ্গেই এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠনগুলো থেকেও দ্বিতীয় ডোজের ব্যাপারে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের পরামর্শ আছে। সেক্ষেত্রে আমরা ৮ সপ্তাহকেই বেছে নিচ্ছি। কারণ এটা আমাদের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম পরিকল্পনায় কার্যকর করতে সুবিধা হবে।
অনেকের দ্বিতীয় ডোজ নিতে ৪ সপ্তাহ পর সময় দেওয়া হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, যাদেরকে দ্বিতীয় ডোজের জন্য ৪ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে, তাদেরটা আবারও পরিবর্তন করে দিবো। আমাদের কাছে টিকা গ্রহীতাদের যে তথ্য আছে, সে আলোকে আবারও সময় ঠিক করে মেসেজে দ্বিতীয় ডোজের ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হবে। যেহেতু ৮ সপ্তাহের একটা বড় সময় আছে, এর মধ্যে আমরা ঠিক করে ফেলতে পারবো বলে আশা করছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, সুরক্ষা ওয়েবসাইট থেকে যে এসএমএস যায়, দ্বিতীয় ডোজের সময়েও কিন্তু এ রিমাইন্ডারটা যাবে। এতে করে সবাই জানতে পারবে যে, দ্বিতীয় ডোজ কবে পাবে। এছাড়াও বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত আমাদের কিছু কার্যক্রম রয়েছে, এর মাধ্যমেই আমরা সবাইকে নিশ্চিত করবো যে ৪ সপ্তাহের জায়গায় ৮ সপ্তাহ পরে টিকা নিবেন।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, শুরুতে আমাদের ৮ সপ্তাহেরই পরিকল্পনা ছিলো। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে টিকা কার্যক্রম পরিকল্পনা অনুযায়ী সেটাকে ৪ সপ্তাহ করা হয়েছিলো।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রথমে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ পর টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও টিকাদান কর্মসূচি শুরুতে মানুষের তেমন আগ্রহ দেখা না যাওয়ায় ও নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে টিকা শেষ করার লক্ষ্যে ৪ সপ্তাহ ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু, এখন যেহেতু টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেহেতু বেশী কার্যকারিতা পাওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশেও ৪ সপ্তাহ ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করে ৮ সপ্তাহ করা হয়েছে।
অক্সফোর্ড টিকার সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ডোজের সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজের সময়ের পার্থক্য ৬ সপ্তাহের কম হলে এর কাঙ্ক্ষিত কার্যকারিতা শতকরা ৩০ শতাংশ কমে যায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল (বিএমজে, ৬ জানুয়ারী ২০২১) অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ফেইজ-৩ ট্রায়ালের সাব-গ্রুপ ডেটা অ্যানালাইসিসের ফলাফল প্রকাশ করেছে। যা থেকে দেখা যায়, টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রথম ডোজের ৮-১২ সপ্তাহ পর দিলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বেড়ে যায় অনেক।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড টিকার সম্প্রসারিত ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, টিকাটির এক ডোজের কার্যকারিতা ৭৬ শতাংশ, যা অন্তত ৩ মাস পর্যন্ত বজায় থাকে। অর্থাৎ ৪ সপ্তাহের ব্যবধানে ২ ডোজে যে কার্যকারিতা পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশি কার্যকারিতা পাওয়া যায় ১ ডোজ দিলে। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ীও, প্রথম ডোজের ৮-১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া উচিৎ।
গত ডিসেম্বরের ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ফেইজ-৩ ফলাফলে দেখা যায়, ভ্যাকসিনের ২টি পূর্ণ ডোজ প্রতিরক্ষা দেয় ৬২ শতাংশ। তবে, এ কার্যকারিতা হলো বিভিন্ন সময়ে দেওয়া ২টি পূর্ণ ডোজের গড় কার্যকারিতা। ব্রিটিশ রেগুলেটরের অনুমোদন প্রক্রিয়াকালে এ ফলাফলের বিস্তারিত সাব-গ্রুপ অ্যানালাইসিস করা হয়। এতে দেখা যায় যে, প্রথম ডোজের ৬ সপ্তাহের চেয়ে কম সময় অন্তর দ্বিতীয় ডোজ দিলে কার্যকারিতা হয় মাত্র ৫৩ শতাংশ। আর দ্বিতীয় ডোজটি ৬ সপ্তাহ পরে দিলে কার্যকারিতা হয় ৬৫ শতাংশ। কিন্তু, দ্বিতীয় ডোজটি যদি দেওয়া হয় ১২ সপ্তাহে, তাহলে কার্যকারিতা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩ শতাংশে। অর্থাৎ প্রথম ডোজের ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দিলে টিকার কার্যকারিতা মূলত কমে যায় শতকরা ৩০ ভাগ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.