করোনার প্রাদুর্ভাবের কারনে বাজি-বাদ্যি-রোশনাই ছাড়াই চার বছরে পা রাখলো সম্প্রীতি বাংলাদেশ! 

বিশেষ প্রতিনিধি: যতোটা বাজি-বাদ্যি-রোশনাই জ্বালার কথা ছিল তা হয়নি। বেশ নিভৃতে অপরাপর কথাবার্তায় শেষ হোল এবারের উদ্ভাসন পর্ব। ওয়েবিনারে ব্রতচারীরা শোনালেন, আগামীর সিদ্ধচিন্তা। যুক্তি-দর্শনে ঋদ্ধ চলার সে পথ হবে মানবিক কুসুমে সমুজ্জ্বল- আর তাতেই হাঁটবে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। বলছিলাম, এ সংগঠনের জন্মোৎসব পালন প্রসঙ্গে। ৭ জুলাই রাতে চার বছরে পা রেখেছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
মহামারী করোনার এই সময়ে নির্বিকার না থেকে যার যতোটুকু ক্ষমতা তা নিয়েই এগিয়ে চলার আহ্বান জানান সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব ডা. মামুন মাহতাব স্বপ্নীল। তার আগে বন্দনাপর্বে সংগঠকদের দক্ষতা, পারঙ্গমতার প্রসঙ্গ টানেন নাট্যজন পীযুষ বন্দোপাধ্যায়। যিনি সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক। একাত্তরের অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা পীযুষ জনতায়, জনজীবনে বঙ্গবন্ধুর চেতনার ছবি আঁকেন। প্রসঙ্গক্রমে জাতির জনকের আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াই বাস্তবায়নই তাঁর মূলমন্ত্র। সম্প্রীতির চা’রে পা’র মাহেন্দ্রক্ষণে তাঁর সাফ জবাব।
করোনার ভয়াল আগ্রাসনে একে অপরের পাশে কিভাবে স্থির থাকা যায় তার স্পষ্ট ধারণা দেন বিশিষ্টজনেরা। বিভিন্ন শ্রেণি পেশা থেকে আগত সংগঠকদের মধ্যে কথা বলেন, লন্ডনপ্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। পুরনোদিনের স্মৃতি আঁকড়ে তিনি জানান, এখন লোকের অভাব নেই। কিন্তু এমনও দিন গেছে, যখন বঙ্গবন্ধু চরিত্রে অভিনয় করবার মতো কোনো অভিনেতা জোটেনি। সেই দুঃসময়ে বুক বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নাট্যজন পীযুষ বন্দোপাধ্যায়। সুবিধাবাদীদের চাপে পীযুষের নামটি এখনও নিভু নিভু জ্বলছে। তাই আশা ছাড়িনি। রূপকথার উড়ন্ত ঘোড়া পেগাসাসের মতো ও উড়তে জানে। সম্প্রীতি বাংলাদেশকেও চেতনার মহাশূণ্যে পৌঁছে দেবে পীযুষ বন্দোপাধ্যায় আর তাঁর সাহসী সংগঠকেরা-বলেন সর্বজননমস্য আবদুল গাফফার চৌধুরী।
বিশ্ববিদ্যালয় মনজুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান আশাবাদী সম্প্রীতির পথচলা নিয়ে। উদাহরণ টানেন, করোনায় সংগঠকদের কর্মতৎপরতা নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর আ ব ম ফারুক বলেন, বঙ্গবন্ধুর চেতনা ক্রমশ নস্যাত হতে চলেছে। দলের বাইরে যেমন, তেমনি ভেতরেও। তাই প্রগতিশীল বুদ্ধিদীপ্ত যুক্তি দিয়ে অন্ধকার তাড়িয়ে আলোকরশ্মি ছড়াতে হবে। বেশি বেশি পড়ালেখা, পারিবারিক শিক্ষা ও অপরের মতকে প্রাধান্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে মানবিক স্রোত গড়ার প্রত্যয় জানান নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাংলা গড়ে তুলতে তিন বছর নিরলস কাজ করছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। রাজধানী শুধু নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সেমিনার, টেবিল বৈঠক ও মুক্ত আলোচনা করেছে সংগঠনটি। করোনা মহামারীতে ধারাবাহিক কাজগুলোতে ছেদ পড়লেও নিয়মিত অনলাইন বৈঠকের মাধ্যমে সজাগ থেকেছে প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায়। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই জাতীয় জাদুঘরে শওকত ওসমান মিলনায়তনে আত্মপ্রকাশ করেছিল এ সংগঠন। জনতায় জনজীবনে যেনো ধর্মান্ধতা-কুসংস্কার আচ্ছন্ন না করে তার জন্য শ্লোগান তুলেছিল সম্প্রীতি ‘পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী সামনে রেখে ‘শতবর্ষের পথে বঙ্গবন্ধু ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক ধারাবাহিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন ছিল সম্প্রীতির ব্যানারে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশ যখন দেশের আনাচেকানাচে সব শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে বার্তা কিংবা ব্যক্তির মতামতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর, তখন এটাকে মডেল আখ্যা দিয়েছেন ভারতের কিংবদন্তিতূল্য লেখক ও কুটনীতিক মুচকুন্দে দুবে। বলেছেন, ভারতেই বলুন বা বাংলাদেশে। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা যে এই সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি তা তো বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই পটভূমিতে সম্প্রতি বাংলাদেশের মতো সংগঠনের কাজকর্ম আমাদের আশার আলো দেখায়, ধর্মান্ধতা থেকে বেরোনোর রাস্তা বাতলে দেয়। একই সুরে বলেছিলেন, যোগেন্দ্র যাদবের মতো রাজনীতিক ও সমাজকর্মী, স্বরাজ পার্টির নেতা যোগেন্দ্র যাদব ও বজরঙ্গী ভাইজানখ্যাত পরিচালক কবীর খান। নানা প্রান্তে ওয়েবিনারে অসাম্প্রদায়িতার মন্ত্র তুলে ধরার প্রশংসাও করেন তাঁরা।
জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার পথে বাধা-বিপত্তি ও তা উতরানোর দীক্ষাকৌশল তুলে ধরেন সাংবাদিক-সাহিত্যিক আলী হাবিব। আলোচনায় অংশ নেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকুল আরেফিন মাতিন, সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত একেএম আতিকুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, অধ্যাপক ড. অসীম কুমার সরকার, ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া।
ইসলামি জলসার নামে কিভাবে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানা হচ্ছে এবং তা বন্ধের দাবি তোলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাকির হোসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি পবিত্র কোরাণের বাণী তুলে ধরে তথাকথিত মোল্লাদের অপব্যাখ্যা বন্ধে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আলোচনায় অংশ নেন সর্বইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাছিম আখতার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড আনিসুজ্জামান, কানাডা-টরেন্টোর ব্যাংকার নিরঞ্জন রায়, গাজীপুর ডুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, একুশে টেলিভিশনের হেড অফ ইনপুট ড. অখিল পোদ্দার, নাট্যশিল্পী অশোক বড়ুয়া, খ্রিস্টিয় ঈশতত্ত্বের শিক্ষক রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী,  সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হাসিব, সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান, অনয় মুখার্জী প্রমুখ।
চতুর্থ বছরে পদার্পণের এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার কার্যক্রম তুলে ধরেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ-বগুড়ার আহ্বায়ক এডভোকেট নরেশ মুখার্জী, রাজশাহী থেকে নুরুল ইসলাম সরকার, বগুড়া থেকে আনোয়ার পায়েল, মৌলভীবাজার থেকে সৌমিত্র দেব, সাতক্ষীরা থেকে লায়লা পারভীন সেঁযুতি, ঝিনাইদহ থেকে সাংবাদিক এম সাইফুল মাবুদ, একরামুল হক লিকু, সুরাইয়া পারভীন মলি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.