করোনার প্রভাব রাজশাহীতে হোম কোয়ারেন্টাইনে ৫৯৫, ফাঁকা হচ্ছে শহর

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রাজশাহীর ব্যক্তিমালিকানাধীন অরক্ষিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুরক্ষা ছাড়াই চলছে চিকিৎসা সেবা। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ জ্বর-সর্দি-কাশি থাকলে চিকিৎসকেরা নানা অজুহাতে সেই রোগীর চিকিৎসা না দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন। নগরীর বাজার ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি তুলনামূলক কমে গেছে।

করোনার কারণে শিক্ষপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হলেও, নানা বয়সের শিক্ষার্থীদের পার্ক, নদীর পাড়সহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দিব্বি ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। সরকারি ঘোষণার পরো প্রাইভেট সেন্টারের নামে কোচিং সেন্টরগুলো খুলে রাখা হয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মূল্য বৃদ্ধির ভয়ে অনেকেই না বুঝেই চাহিদার অতিরিক্ত নিত্যপণ্য মজুদ করছেন।

চিকিৎসকের পরামর্শমতো গত মঙ্গলবার রাজশাহীর একটি উপজেলা থেকে মরিয়ম তার স্বামীকে লক্ষীপুরের একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে এসেছিলেন আল্ট্রাসনোগ্রাম (আল্ট্রা) করাতে। মরিয়মের মধ্যবয়সী স্বামী শ্বারীরিক অন্যান্য সমস্যার সাথে সর্দি-জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত।

ডায়গনস্টিক কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বিষয়টি অনুমান করার সাথে-সাথে আল্ট্রা না করিয়েই ওই রোগীকে রুম থেকে বের করে দেন। পরে মরিয়ম আকুতি-মিনতি করেও ওই ডায়াগনস্টিকে তার স্বামীর আল্ট্রা করাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তিনি স্বামীকে নিয়ে বের হয়ে যান। পরে জানা যায় চিকিৎসক নিজের ও তার সহকর্মীদের নিরাপত্তার অজুহাতে ওই রোগীর আল্ট্রা করাননি।

এদিকে লক্ষীপুরের পপুলার ডায়গনস্টিকসহ অন্যান্য ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিকগুলো ঘুরে দেখা গেছে সেখানে রোগী ও তাদের স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এসকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকগুলোতে রোগীদের জন্য বাড়তি কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সর্দি-কাশি নিয়ে আসা রোগীদের এড়িয়ে যাচ্ছেন।

রাজশাহীর প্রইভেট ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের সভাপতি ডা. আব্দুল মান্নান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে রাজশাহীর প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ক্লিনিকগুলোতে তিন থেকে পাঁচটি করে বেড আলাদা করে রাখতে বলা হয়েছে। তবে কোন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকেই করোনার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না।

এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আউটডোরে গিয়ে দেখা গেছে রোগী ও তাদের স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। এদের অনেকেই সিজনাল জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে এসেছেন চিকিৎসা নিতে। তাদের চিকিৎসকদের আলাদা টিমের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা অন্যান্য রোগীদের কোন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না হাসপাতালটিতে। সকল রোগী একই প্রবেশদ্বার ব্যবহার করছেন। একই কাউন্টার থেকে টিকেট নিচ্ছেন।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন পৃথক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়গুলোকে গুরুত্বদিয়ে কেন্দ্রকে অবগত করা হয়েছে। শুধু প্রাইভেট ক্লিনিকই না, হাসপাতালগুলোর আউটডোর, আদালত পাড়া, বাজার-ঘাট, বাস টার্মিনাল ও স্টেশনগুলোর বিষয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। এই স্থানগুলোতে জনসমাগম বেশি। আর করোনার বিস্তার প্রতিরোধে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।

সরকারের ঘোষণা অনুসারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গতকাল বুধবার থেকে নগরীর বিভিন্ন মেস ও শিক্ষ প্রতিষ্ঠানের হলগুলো ফাঁকা হতে শুরু করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় এক লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ব্যবসায়ীরা বলছেন এই শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে রাজশাহীর ব্যবসায় কিছুটা ভাটা পড়বে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নগরীর রাস্তাসহ বাজার ও মার্কেটগুলোতে মানুষের ভিড় কমতে শুরু করেছে। সচেতন মানুষেরা প্রয়োজন ছাড়া বাজার বা জনবহুল স্থানগুলো এড়িয়ে চলছেন। তবে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে সতর্ক করা হয়েছে, ছুটির মধ্যে শিক্ষার্থীরা যেন অহেতুন পার্ক বা অন্য কোথাও ঘুরে না বেড়ায়। এজন্য অভিভাবকদের সতর্ক ও সচেতন থাকতেও বলা হয়েছে।

এদিকে কোচিং সেন্টার বন্ধ করার কথা থাকলেও নগরীর কয়েকটি কোচিং সেন্টার ও কোচিংএর নামে প্রাইভেট হোমগুলো চালু রাখা হয়েছে। দরাজা বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রইভেট পাড়ন হচ্ছে।

নগরীর বিভিন্ন মুদির দোকানে অনেকে পণ্য কিনতে এসে গল্প জুড়ছেন। তাদের ভাষায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দিতি পারে। সেই খবরে অনেকে তাদের চাহিদার বেশি পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে মজুদ করে রাখছেন। কোর্ট স্টেশন এলাকার বাসিন্দা জহুরুল হক হরোগ্রাম বাজারে বাজার করতে এসেছেন। তিনি জানান, পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে এমন পরিস্থিতিতে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে। তাদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। তাই চাল, আটা, ডাল, লবণ, সাবানসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পণ্য অগ্রিম কিনে রাখছি।

এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, রাজশাহী বিভাগে মোট ৫৯৫ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। যার মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২২ জন, নাটোরে ১৫, নওগাঁয় ৩২, জয়পুরহাটে ৯, বগুড়ায় ৩৫, সিরাজগঞ্জে ১৫, পাবনা জেলায় ১৮ জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩০০ জন নিজ বাড়িতে হোন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

এদের সকলেরই খোঁজ-খবর রাখছেন স্থানীয় প্রশাসন ও স্থাস্থ্য বিভাগ। রাজশাহী জেলা প্রশাসল হামিদুল হকের নেতৃত্বে গতকাল বুধবার বিকেলে নগরীর হরগ্রাম বাজারে করোনাভাইরাস বিষয়ে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.