নিজস্ব প্রতিবেদক: আমের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী ও চাঁপাই এটা জানে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই অঞ্চলের মানুষ যতটা আম খায় তার থেকে চার গুণ আম দেশের অন্যান্য জেলার মানুষ খায়।কিন্ত এবার
আমের ব্যবসা শুরুর দিকে সবকিছু ঠিক থাকলেও হটাৎ করে চাঁপাই নবাবগঞ্জে করোনা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় জারী করা হয় কঠোর লকডাউন।যদিও আমের জন্য চালু করা হয় স্পেশাল ট্রেন।
রাজশাহী জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার পাশে হওয়ায় রাজশাহীও করোনার হ্ট স্পটে পরিণত হতে সময় লাগেনি।বর্তমানে রাজশাহীতে চলছে সাত দিনের কঠোর লকডাউন।
সঙ্গত কারণে অন্যান্য জেলার পাইকারি আম ব্যাবসায়ী রাজশাহী বিমুখ।নেই অন্যান্য সিজনের মত কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যস্ততা।তাই হটাৎ করেই আমের দরপতন ঘটে।যে আম ২৫০০/ থেকে ৩০০০/ টাকায় বিক্রি হত সেই আম ১২০০/ টাকা থেকে ১৪০০/ টাকায় নেমে আসে। তারপরও ক্রেতা সংকটে পড়েছে আমের বাজার।
প্রতি বছর রাজশাহীর বৃহত্তর আমের হাট বসে পুঠিয়ার বানেশ্বরে,যাকে আমের রাজধানী হিসেবে অভিহিত করা হয়। এর বাইরে বিভিন্ন মোড়ে মোড়েও আম কেনা বেচা হয়। আবার বাগান থেকেও সারসরি আম কিনে পাইকাররা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠান। এ বছরও বানেশ্বরে হাট বসেছে।
তবে অন্যান্য বার হাটের মাঝখানে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের যে মাঠটি (কাচারি মাঠ) আছে সেখানে তার পরিবর্তে বানেশ্বর সরকারি কলেজ মাঠে বসছে আমের হাট। এর ফলে অন্যান্য বার আমের এই মৌসুমে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের বানেশ্বর বাজার অংশে যে যানজটের তৈরী হত দিনের বেলা এবার সেটি নাই। বানেশ্বর কাচারি মাঠের সেই কোলাহলও নাই।
অন্যদিকে যেখানে হাট বসছে সেই বানেশ্বর কলেজ মাঠেও গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের তেমন সমাগম দেখা যায়নি। অন্যান্য বার যেখানে আমের হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে গম গম করতো কাচারি মাঠ, সেখানে বানেশ্বর কলেজ মাঠটি যেন অনেকটায় নিষ্প্রাণ ছিল।
আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের দাবি, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই আমের ভরা মৌসুমেও দাম বাড়ছে না শুধুমাত্র পাইকার ব্যবসায়ী তেমন না থাকায়। ফলে এখনো গুটি বা লখনা জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। যা গতবার ছিল এই সময়ে অন্তত দেড় হাজার টাকা মণ।
এ হাটে আম বিক্রি করতে আসা দুর্গাপুরের মাড়িয়া গ্রামের আম ব্যাবসায়ী বলেন, ‘একেবারে শেষ সময়ের দিকে এসেও গুটি ও লখনা জাতের আমের দাম না বেড়ে বরং কমে গেছে গত কয়েকদিনে। শুরুতেই এই আম ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা দরে। অন্যান্য বার শুরুতেই গুটি ও লখনা বিক্রি হত কমপক্ষে ৮০০ টাকা মণ দরে। সেটি গিয়ে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকাও ঠেকত। এবার সেখানে ৮০০ টাকায় পার হয়নি।’
এ হাটে আম বিক্রি করতে আসা আরেক চাষি বলেন, ‘একেবারে শেষদিকে এসেও গোপাল ভোগ জাতের আম এখনো ২৫০০ টাকা মণ ছাড়াতে পারেনি। অথচ অন্যান্য বার এই সময়ে এই জাতের আম বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০টাকা বা তারও ওপরে।
আবার এ সময়ে যেখানে খিরসাপাত বা হিমসাগর বিক্রি হয়ে অন্তত ৩ হাজার মণ দরে সেখানে এখনো এ জাতের আম বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকার নিচে। এর বাইরে ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা মণ দরে। করোনার কারণে হাটে পাইকাররা না আসায় দাম আমের বাড়ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।
এই হাটের আড়ৎদার মনিরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘এবার তেমন পাইকাররা নামেনি। এ কারণে আমের দাম অনেকটা কম। এই সময়ে যেখানে আমের দাম প্রতিদিন মণে অন্তত ১০০ টাকা করে বাড়ে। সেখানে কোনো কোনো দিন দাম কমে যাচ্ছে। চাষিরা আম নিয়ে এসে ক্রেতার ওভাবে বসে থেকে সময় কাটাচ্ছেন।’
আরেক আড়ৎদার আসগর আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘গত বছরও এই সময়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০ ট্রাক আম বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার ২৫ ট্রাক আমও সহজে বিক্রি হচ্ছে না। শুরুর দিকে বেশকিচু পাইকাররা এলেও হঠাৎ করে গত ৮-১০ দিন ধরে কমে গেছে। এ কারণে আমের দামও তেমন উঠছে না।’
বানেশ্বর হাটে কথা হয়, পাইকারী ব্যবসায়ী মহিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘গতবারও করোনা ছিল। কিন্তু আমের দাম কম ছিল না। তবে এবার কেন জানি করোনার কারণে আমের দামের ওপরেও প্রভাব পড়েছে। আমরা বাড়তি দামে আম কেনার সাহস পাচ্ছি না। ঢাকা বা চট্টগ্রামের আড়তেও ৭০-৮০ টাকার ওপরে আম বিক্রি করা যাচ্ছে না। কিন্তু অন্যান্যবার এই সমেয় গোপাল ভোগ, হিমসাগর বা ল্যাংড়া ৮০-১০০ টাকা কিনতে হয়েছে বাজার বা বাগান থেকেই।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.