করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি : গণপরিবহনে ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করা জরুরী

লেখক: মাহামুদ সেতু: করোনা মহামারী প্রতিরোধে দুই মাসের বেশি সময় সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে স্বল্প পরিসরে অফিস খুলে দেয় সরকার। এজন্য ১ জুন থেকে স্বল্প পরিসরে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহনও চালুর অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এ মাসের শুরুতে অফিস পুরোপুরি খুলে দেয়ায় রাস্তায় যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে।

ফলে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে অর্ধেক আসনের পরিবর্তে সব আসনে যাত্রী নেয়ার অনুমতি পেয়েছে গণপরিবহনগুলো।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কারণ বিধিনিষেধের পরেও গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। আর গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে স্বাস্থ্যবিধির কিছুই থাকবে না।

তাছাড়া পরোক্ষ ধূমপানও এক্ষেত্রে বড়ো সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। কারণ, করোনা আক্রান্ত ধূমপায়ীর বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ার মাধ্যমেও ভাইরাস বহনকারী ড্রপলেট ছড়াতে পারে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী জনপরিসর ও গণপরিবহনে ধূমপান শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গণপরিবহনে ধূমপান করলে আইন অনুসারে অনধিক ৩০০ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

পরিবহন ধূমপানমুক্ত রাখতে না পারলে মালিকের জরিমানা হবে ৫০০ টাকা। আর ‘গণপরিবহনে ধূমপান নিষেধ’ এমন সতর্কবার্তা দেওয়া না থাকলে এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

যদিও দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো পরিবহনে ধূমপান নিষেধ সতর্কতা আজকাল চোখে পড়ে না। এর ফলে আইন থাকার পরও গণপরিবহনে ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

বিশেষ করে চালক ও তার সহকারীরা চলতি পথে প্রায়ই ধূমপান করে থাকেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় আড়াই কোটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।

পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হলে অধূমপায়ীরাও ধূশপায়ীদের সমান শারীরিক ক্ষতির মুখে পড়েন। আর করোনা মহামারীর এই সময়ে সেটা আরো বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। কারণ, আক্রান্ত ধূমপায়ী যখন বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়েন, সেই ধোঁয়ায় ভর করে ভাইরাসও ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে।

বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় ক্ষতিকর ৭ হাজারের বেশি রাসায়নিক কণা থাকে, যার মধ্যে অনেক ক্ষুদ্র কণার আকার ০.২ – ০.৫ মাইক্রো মিটার। আর করোনা ভাইরাসের আকার ০.১ মাইক্রো মিটার।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই করোনা ভাইরাস ধূমপানের ধোঁয়ায় ভেসে বেড়াতে পারবে এবং এসময় অন্যের শরীরে প্রবেশ করে তাকেও আক্রান্ত করতে পারবে।

এজন্য করোনা মহামারীর এই সময়ে গণপরিবহনে মাস্ক পরা, হাত জীবাণুমুক্ত করার মতো স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি ধূমপানও পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। এজন্য প্রত্যেক গণপরিবহনে ধূমপান নিষেধ বা গাড়িটি ধূমপানমুক্ত এমন সতর্কবার্তা স্থাপন করা জরুরি। এর ফলে চালক ও হেলপারের ধূমপান করার ক্ষেত্রে নৈতিক বাধা তৈরি হবে।

পাশাপাশি গণপরিবহনে ধূমপান প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করাও জরুরি।

তবে বিদ্যমান আইনে কিছু ক্ষেত্রে গণপরিবহনে ধূমপানের সুযোগ রয়ে গেছে। বিশেষ করে ট্রেন ও লঞ্চের মতো একাধিক কক্ষবিশিষ্ট পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার সুযোগ রয়েছে আইনে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এসব পরিবহনে যেখানে-সেখানে ধূমপান করে অনেকে। অন্যদিকে অযান্ত্রিক যানবাহনকে এই আইনের আওতায় আনা হয়নি। ফলে এসব যানবাহনেও ধূমপানের সুযোগ রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আইনের এই সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা দরকার। সেজন্য আইনটি যুগোপযোগী করে সংশোধন করে সবধরনের গণপরিবহনে তামাক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা জরুরি। তা করা গেলে করোনার মতো অন্য যেকোনো সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে।

লেখক: মাহামুদ সেতু, তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের কর্মী।

সংবাদ প্রেরক মাহামুদ সেতু, মিডিয়া ম্যাজোর, অ্যান্টিটোব্যাকো প্রোগ্রাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.