করোনাকালে রংপুরে কমেছে ধূমপান

এসিডি প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাস আক্রমণের প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে ফুঁসফুস ও শ্বাসনালী। যা ধূমপায়ীদের আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত থাকে। এজন্য করোনা মহামারীর সময়ে এই মরণব্যাধি থেকে বাঁচতে রংপুরে ধূমপানের প্রভাব বা ব্যবহার কিছুটা কমেছে।

করোনার আগে অনেক ধূমপায়ীর দিনে যেখানে এক/দুই প্যাকেট সিগারেট লাগতো এখন তারা ৪-৫টাতেই দিন পার করছে। আবার যারা আগে ৪-৫টি সিগারেট সেবন করতো এখন তারা ১-২টিতে ধূমপান নিবারণ করছেন।

কিছু ধূমপায়ী ইতোমধ্যেই ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন। এছাড়া অনেকেই ধূমপান ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি ভাবছেন। গত এক সপ্তাহে রংপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৪২ জন ধূমপায়ীর সঙ্গে সাক্ষাতে কিংবা মোবাইল ফোনে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদের মধ্যে ৩ জন ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন, ২৭ জন ধূমপান কমিয়ে দিয়েছেন (এদের মধ্যে ১৫ জন ভবিষ্যতে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন), বাকী ১২ জন আগের মত ধূমপান করেছেন (এদের মধ্যে ৮ জন করোনায় আক্রান্তের ভয়ে সিগারেটের পুরো প্যাকেট ক্রয় করে ধূমপান করছেন) বলে জানা গেছে।

রংপুর শহরে মুনোহারির ব্যবসা করেন আবু জর গিফারী (৪৫)। তিনি পুরদস্তুর একজন চেইন স্মোকার ছিলেন। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বিবেচনায় ইতোমধ্যেই সিগারেট সেবন অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন। ধূমপান কমিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টেভিশিন ও পত্রপত্রিকায় দেখেছি- ধূমপায়ীদের করোনাভাইরাস বেশি আক্রমণ করছে।

এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি ধূমপায়ী হলে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও নাকি অনেক কম। এজন্য করোনার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে আমি বর্তমানে সিগারেট সেবন একেবারে কমিয়ে দিয়েছি। আশা করছি- কয়েকদিনের মধ্যে সিগারেট একেবারে ছেড়ে দেব।’

একই কথা বলেছেন রংপুর জজকোর্টের আইনজীবী রেজাউল ইসলাম রাজু বলেন, ‘আগে এক সময় দিনে কমপক্ষে ২-৩ প্যাকেট সিগারেট লাগতো। তবে এখন করোনার কারণে দিনে মাত্র ৩টি সিগারেট সেবন করি।’

অনেকেই ইতোমধ্যে ধূমপান ছেড়েও দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. তাফসিরুল ইসলাম, কাঁচামালের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন, রংপুরের পীরগাছার মোটরসাইকেলের শো-রুমের মালিক ব্যবসায়ী মো. মঞ্জু মিয়া। এদের মধ্যে ব্যবসায়ী মঞ্জু মিয়া বলেন, ‘ধূমপান আসলে মানুষের ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকার করে না। শুনেছি ধূমপানের কারণে করোনায় আক্রান্ত অনেক মানুষ মারা গেছে। তাই ধূমপান ছেড়ে দিয়েছি।’

রংপুর জজকোর্টের আইজীবী আবুল হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও ধূমপান কমাতে পারছি না। তবে আগে যখন সিগারেট সেবনের প্রয়োজন হতো তখন দোকানে গিয়ে একটি/দু্িট সিগারেট ক্রয় করে সেবন করতাম।

তবে এখন পুরো সিগারেটের প্যাকেট ক্রয় করি। পাবলিক প্লেসে কিংবা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এখন আর সিগারেট সেবন করি না। এছাড়া সিগারেট সেবনের আগে হাতে জীবাণু থাকার ভয়ে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধৌঁত করে সেবন করি।’

রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. তাফসিরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা ভাইরাস ধূমপায়ীদের জন্য কতা মারাত্মক যারা আক্রান্ত হয়েছেন কেবল তারাই বুঝতে পারেন। তাই আমি নিজে ধূমপান ছেড়েছি এবং আমার বন্ধু-বান্ধবদেরকে ধূমপান ছেড়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করছি।’

রংপুরের তামাক নিয়ন্ত্রণ কোয়ালিশনের ফোকাল পার্সন সুশান্ত ভৌমিক বলেন, ‘লক্ষ্য করছি- করোনার কারণে রংপুরে ধূমপায়ীরা ধূমপান কমিয়ে দিয়েছে। আরেকটি ভালো দিক হলো- নগরীর পাবলিক প্লেসগুলোতেও ধূমপান অনেকটা কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে এখন জেলা প্রশাসন যদি তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধে পদক্ষেপ নেন তাহলে নগরীতে ধূমপান আরও কমে আসবে বলে আশা করছি।’

উন্নয়ন সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র বলেন, ‘ আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বের হওয়া ড্রপলেট থেকে করোনা ছড়ায়। সেই ব্যক্তি যদি ধূমপায়ী হয়-তাহলে তার ত্যাগ করা ধূমপানের ধোঁয়া থেকেও করোনা ছড়াতে পারে। করোনা আক্রান্তের প্রধান ক্ষেত্র হলো শ্বাসযন্ত্র ও ফুঁসফুঁস। যা ধূমপায়ীদের আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত থাকে। এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তি ধূমপায়ী হলে তার মৃত্যুর সম্ভাবনাও অনেক বেশি। এজন্য উচিত- যারা ধূমপায়ী তাদের ধূমপান ত্যাগ করা।’

বার্তা প্রেরক: আমজাদ হোসেন শিমুল, মিডিয়া ম্যানেজার, এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.