কমিশনের নামে লিচু চাষীদের গলা কাটছে আড়ৎ মালিকরা

নাটোর প্রতিনিধি: ক’দিন আগেই ঘুর্নিঝড় আম্ফানে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে লিচু চাষীরা। আবার করোনার কারণে ভাল দাম পাচ্ছে তারা। সব মিলিয়ে এবার লিচু চাষীরা পড়েছে বেকায়দা। তারপরও কমিশনের নামে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের গলা কাটছে লিচু আড়ৎ মালিক সমিতি। প্রতি এক’শ টাকায় কমিশন নিচ্ছে ৮টাকা।

এছাড়া কুলি, মসজিদ উন্নয়ন ফান্ডের নামে আরও টাকা যাচ্ছে চাষীর পকেট থেকে।

সব মিলিয়ে বাগানে একবার, লিচু বিক্রি করতে এসে আরেকবার ক্ষতির মুখে পড়ছে তারা। এই অবস্থায় আড়ৎমালিকদের কমিশন বাণিজ্য বন্ধের দাবী জানিয়েছেন লিচু চাষীরা।

সূত্র জানায়, নাটোর জেলায় এই বছর ৯৫৩হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। যা থেকে অন্তত ৫০কোটি লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে মোট উৎপাদনের অর্ধেক যোগান আসবে গুরুদাসপুর উপজেলা থেকে। তবে বাগানের উৎপাদিত লিচু চাষীকে বিক্রি করতে আসতে হয় বেরগঙ্গারামপুর লিচুর আড়তে।

বর্তমানে চাষী এবং পাইকার ব্যবসায়ীদের পদচারনায় মুখরিত লিচু আড়তৎগুলো। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রাস্তার ওপর লিচুর আড়ত বসায় গত কয়েক বছর ধরেই ইজারা না হওয়ার কারনে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তারা। এরপর চাষীদের কাছ থেকে কমিশনের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আড়ত মালিক সমিতি।

লিচু চাষীরা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, কোন বাগান মালিক এই আড়তে লিচু বিক্রির জন্য নিয়ে আসলে, সে চাষীর কাছ থেকে প্রতি ১০০টাকায় ৮টাকা কেটে নিচ্ছে আড়ত মালিক সমিতি। এছাড়া কুলি, মসজিদ উন্নয়ন ফান্ডের নামে আরও টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে চাষীর কাছ থেকে। ফলে চাষীর লাভের সিংহ ভাগ টাকাই যাচ্ছে তাদের পকেটে।

এনিয়ে চাষীরা একাধিকবার প্রতিবাদ জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। গত ২৯ মে কমিশন বাণিজ্য বন্ধের দাবীতে মানববন্ধনও করেছে লিচু চাষীরা। কিন্তু তারপর আড়ত মালিকদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।

উপজেলার বিয়াঘাট সরকার পাড়ার আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে লিচু উৎপাদন করি। এবছর করোনা ও আ¤পান ঝড়ের কারণে ক্ষতির স্বীকার হয়েছে চাষীরা। এবছর লিচু বিক্রি করে খরচের টাকা যোগাড় করাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তারপরও এক হাজার টাকার লিচু বিক্রি করলে কমিশনের নামে ৬০ থেকে ৮০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে আড়তদার মালিক সমিতি।

একই অভিযোগ করে বিয়াঘাট সরকার পাড়ার লিচু চাষী ইব্রাহীম আলী। তিনি বলেন, বেড়গঙ্গারামপুর বৃহৎ লিচুর আড়ৎ মালিক সমিতির মাধ্যমেই এই জায়গা থেকে উৎপাদিত লিচু রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। তবে লিচু বিক্রি করতে গেলে তারা কমিশনের নামে শতকরা ৮ টাকা হারে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আমাদের কাছে থেকে।

এবিষয়ে বেরগঙ্গারামপুর লিচু আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সমিতির নিয়ম অনুযায়ীই কমিশন নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে চাষীর কাছ থেকে ৩টাকা আর পাইকারী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫টাকা, মোট ৮টাকা কমিশন নেওয়া হয়। তবে এটা কোন অবৈধ নয়, বৈধ উপায়েই নেওয়া হচ্ছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তমাল হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আড়ত মালিকদের কমিশন নেওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। এনিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসারকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.