কবি শেখ ফজলল করিমের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকী

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: ‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর! মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরা সুর।’ বাংলা সাহিত্যের অবিস্মরণীয় এই কবিতার রচয়িতা কবি শেখ ফজলল করিমের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ, ১২৮৮ বঙ্গাব্দ ১৬ চৈত্র, বুধবার লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের কাকিনা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত সর্দার পরিবারে কবি শেখ ফজলল করিমের জন্ম।
তার বাবা সরদার আমীর উল্লাহ ছিলেন কাকিনার রাজা মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরীর একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী এবং একজন ভূস্বামী। কবির মায়ের নাম ছিল কুকিলা বিবি। পাঁচ ভাই-বোনদের মধ্যে কবি ছিলেন দ্বিতীয়। পরিবারের সকলে তাকে ‘মনা’ বলে ডাকতেন। তিন-চার বছর বয়সে ‘মনা’ একা একাই স্কুলে চলে যেতেন। পাঁচ বছর বয়সে তাকে ভর্তি করা হয় ওই স্কুলে। প্রতিবছরই বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য তিনি পুরস্কৃত হতেন।
উন্নত পড়াশোনার জন্য তাকে ভর্তি করা হয় রংপুর জিলা স্কুলে। তিনি ফিরে আসেন আবার কাকিনায়। ভর্তি হন কাকিনা স্কুলে। এখান থেকেই ১৮৯৯ সালে দ্বিতীয় বিভাগে তিনি ‘মাইনর’ পাস করেন। ফজলল করিম মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতার বই সরল পাদ্য ‘বিকাশ’ হাতে লিখে প্রকাশ করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিনবিনা গ্রামের আব্দুল গনি সরদারের কন্যা বছিরন নেছা খাতুনের সঙ্গে ফজলল করিমের বিয়ে হয়। শতাব্দী কাল পূর্বে বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে কবি শেখ ফজলল করিমের আবির্ভাব যেন অগ্নিশিখার মতো। তিনি বাংলা সাহিত্যকে অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে গেছেন নিঃসন্দেহে। তার সাহিত্য চর্চার ফলশ্রুতিতে এ অঞ্চলে সর্ব প্রথম অজপাড়াগায়ে তার নিজ বাড়িতে স্থাপন করেছিলেন ‘দি শাহাবীয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস’ নামের একটি মুদ্রণ যন্ত্র। তারই সম্পাদনায় “বাসনা” নামের একটি সাময়িকী পত্রিকা প্রকাশ করে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন।
কবি শেখ ফজলল করিম নিখিল ভারত সাহিত্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে “নীতিভূষণ” উপাধি লাভ করেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে নদিয়া সাহিত্য সভা কর্তৃক তাকে “সাহিত্য বিশারদ” উপাধি দেয়া হয়। এ ছাড়া তিনি “কাব্যভূষণ” “সাহিত্য রত্ন” উপাধি লাভ করেন। কাশ্মীর শ্রীভারত ধর্ম মহামণ্ডল তাকে রৌপ্য পদকে ভূষিত করেন।
তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ‘বিদ্যাবিনোদ’ ‘কাব্যরত্নাকর’ উপাধিতে ভূষিত হন।
তার রচনা সৃষ্টির যথার্থ স্বীকৃতি পেয়ে গেছেন। কবির রচিত অর্ধ শতাধিক কাব্য ও গদ্য, পদ্য গ্রন্থ মুদ্রিত হলেও প্রকাশিত হয়নি তার অজস্র রচনাবলী। তিনি জীবদ্দশায় তার জীবন কাহিনী নিয়ে “আমার জীবন চরিত” নামের পাণ্ডুলিপিটি অসমাপ্তি রেখে তিনি মারা যান।
কবির শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য, প্রৌঢ়ত্ব- সবই কাটিয়েছেন এই কাকিনায়। তিনি অবিভক্ত ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন। বহু সভা সমাবেশে অতিথি হয়েছেন, পুরস্কৃত হয়েছেন। আবার ফিরে এসেছেন জন্মভৌমে-কাকিনায়। ৫৪ বছর বয়সে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে সেপ্টেম্বর, ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ ১২ই আশ্বিন, সোমবার কবি এখানেই মারা যান। বাড়ির সামনে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে তাকে সমাহিত করা হয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.