কক্সবাজারে ১৪ লক্ষ ইয়াবাসহ ১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা জব্দ, আটক-৪

কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল-চৌফলদন্ডী ব্রিজের পাশে ভারুয়াখালী খালে নোঙর করা বোট থেকে ১৪ লক্ষ ইয়াবাসহ গ্রেফতার ফারুকের বাড়ি থেকে ১ কোটি ৭০ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫০০ নগদ টাকা জব্দ করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারুকের স্বীকারোক্তি মতে মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখার গ্যারেজঘর থেকে ২ বস্তা টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম।
তা গুনে ১ কোটি ৭০ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকার হদিস মিলে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। আজ মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারী) বেলা ৩টার থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তর নুনিয়ারছড়ায় সাবেক মহিলা মেম্বার রাজিয়া বেগম রাজুর বসতবাড়ির পার্শ্ববর্তী নয়নের খালি ভিটার টিনের গ্যারেজ থেকে এসব টাকা জব্দ হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজ মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারী) বেলা ২টার দিকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের হাসানুজ্জামানের নেতৃত্বে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল-চৌফলদন্ডী ব্রিজের পাশে ভারুয়াখালী খালে ডিবির চালানো অভিযানে সাত বস্তা ইয়াবার বৃহৎ চালান জব্দ করা সম্ভব হয়। এতে ১৪ লক্ষ ইয়াবা মিলে। এ ইয়াবা চালানের সাথে ট্রলার মালিকসহ ২জন পাচারকারীকেও গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি মতে সহযোগী হিসেবে আরও ২ জনকে আটক করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন: ট্রলার মালিক কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছরা এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলাম ফারুক (৩৭), তার শ্বশুর আবুল কালাম (৫৫), শ্যালক শেখ আবদুল্লাহ (১৯) ও মোজাফফরের ছেলে মোহাম্মদ বাবু (৫৫)।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে উখিয়ার ইনানীর রেজুরখাল মোহনা থেকে ইয়াবার বিশাল এ চালানটি তারা গ্রহণ করে চৌফলদন্ডী ঘাটে এনে খালাসের অপেক্ষা করছিল। গোপন সংবাদে এটি খবর পেয়ে চৌফলদন্ডী ব্রিজ এলাকায় ভারুয়াখালী খালের সন্দেহজনক একটি ট্রলারে অভিযান চালায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কাঠের বোট থেকে ইয়াবা ভর্তি সাতটি বস্তা উদ্ধার করা হয়। বস্তাগুলোতে ১৪০ কার্ড ইয়াবা পাওয়া গেছে। একটি কার্ডে ১০ হাজার হিসেবে সর্বমোট ১৪ লক্ষ ইয়াবা পাওয়া যায়।
এসপি বলেন, গ্রেফতারকৃত জহিরুল ইসলাম ফারুকের স্বীকারোক্তি মতে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভার উত্তর নুনিয়ারছড়ায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় ফারুকের বাসার লাগোয়া তার (ফারুকের) মামা নয়নের খালি ভিটার টিনের ঘরের মাটির নিচ বিশেষ কায়দায় বস্তা ভরে লুকিয়ে রাখা ২ বস্তা টাকা জব্দ করা হয়। বস্তা খুলে তা গুনে ১ কোটি ৭০ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং ফারুক ও তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, কয়েকটি দলিল পাওয়া যায়। এটি একটি অভাবনীয় ঘটনা।
কক্সবাজার পৌরসভার স্থানীয় নারী কাউন্সিলর শাহেনা আকতার পাখি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ধৃতরা এলাকায় মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। সাগরে মাছ পাওয়া যাক আর না যাক তাদের ট্রলার সাগরে নিয়মিতই যাতায়াত করেছে। অন্যরা লোকসানে পড়লেও ফারুকের ট্রলারে কখনো লোকসান হয়েছে বলে শুনিনি। বরং তার ব্যবসা দিন দিন প্রসারিত হয়েছে। আজকের ১৪ লক্ষ ইয়াবা ও প্রায় ২ কোটি টাকা জব্দের পর খোলাসা হয়েছে কেন মাছ না পেলেও তার ট্রলারে লোকসান হয়নি। এটা আমাদের এলাকার (নুনিয়ারছড়া) জন্য চরম লজ্জার।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের হাসানুজ্জামান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বিশাল চালান উদ্ধারের আগে থেকেই পুলিশ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নতুন তালিকা করছে। পুরোনো তালিকার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন আরও ৮৮ জনের নাম এসেছে। আমরা ইয়াবা চক্রের সবাইকে নজরদারিতে রেখেছি। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরু টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা হবে। শুধু বহনকারী নয়, ইয়াবার উৎসমূল খুঁজে আইনের আওতায় আনা হবে। মঙ্গলবারের অভিযানের ঘটনায় মাদক ও অর্থ আইনে পৃথক মামলা করা হচ্ছে।
অভিযান ও সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মামুন আল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর পঙ্কজ বড়ুয়া, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি শেখ মোহাম্মদ আলীসহ সকল কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কক্সবাজার প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.