ওরা ৫২ জন

নাটোর প্রতিনিধি: ওরা ৫২ জন। কারও বয়স ২১,কারও ৩০। তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁরা দুজন করে বিভক্ত হয়ে হ্যান্ড মাইক কথা বলতে বলতে গ্রামের রাস্তাঘাট ও হাটবাজারে ঘুরে বেড়ান। তবে এই বেড়ানো শখের না। করোনা ভাইরাসের হাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে তাঁদের রাত দিন নিরন্তর ছুটে চলা।

করোনাভাইরাসে প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি, কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের সুবিধা–অসুবিধার খবর রাখা, গুজব প্রতিরোধ করা, কেউ করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহ হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করা, কর্মহীনদের খাদ্য পৌঁছে দেওয়া ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করার মতো গুরুত্বপূর্ণ অথচ ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য তাঁরা রাতদিন ছুটে চলেছেন।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ ক্রমেই বাড়তে থাকায় নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার এই যুবকেরা নিজেদের উদ্যোগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি (সিপিসি) গঠন করে নিজেরা সংগঠিত হয়েছেন। দুজন করে ভাগ হয়ে প্রতিদিন উপজেলার ২৫টি এলাকায় অবস্থান নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন। গত ৪ এপ্রিল থেকে তাঁরা কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে তাঁদের তৎপরতায় এলাকাবাসী মুগ্ধ।

মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল কুমার রায় সিপিসির বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, তারা এ সময়ের মুক্তিযোদ্ধা। আমরা যেমন ঢাল–তলোয়ার না নিয়েই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। এখন তারাও কী আছে কী নাই, তা না দেখে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। সৃষ্টিকর্তা তাদের সহায় হোন।

সিপিসির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে এগোচ্ছে। সে তুলনায় সরকারের জনবল খুবই কম। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ‘চাচা আপন জান বাঁচা’র মতো অবস্থা হবে। তখন কেউ কারও পাশে দাঁড়াবে না। চিকিৎসা ও দাফনপ্রক্রিয়া আরও কষ্টদায়ক হতে পারে। এই উপলব্ধি থেকে সংগঠনটি দাঁড় করানো হয়েছে।

আজ শনিবার বিকেল ৩ দিকে উপজেলার তমালতলা বাজারে গিয়ে দেখা গেল, সিপিসি লেখা অ্যাপ্রোন পরে এক তরুণ হ্যান্ডমাইকে স্থানীয় লোকজনকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা যেন সন্ধ্যা ছয়টার পর ঘর থেকে বের না হন। বের হলে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। কেন তাঁরা ঘরে থাকবেন, সেটাও বোঝাচ্ছেন মাইকে।

মুস্তাফিজুর রহমান নামের ওই তরুণ বলেন,‘স্বাধীনতাযুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু এখন দেখছি মানুষকে টিকিয়ে রাখার বড় যুদ্ধ। তাই বাঁচার যুদ্ধে নেমেছি।’

বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্র আবদুল মজিদকে দেখা গেল বাগাতিপাড়া ইউনিয়নের আজগর মোড়ে। তিনিও আশপাশের মানুষকে ঘরে ঢোকার তাগাদা দিচ্ছেন।

কী কাজ করেন, জানতে চাইলে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমি মূলত করোনাভাইরাস সম্পর্কে সরকারের বার্তা সাধারণ মানুষকে জানাই, আর তাঁদের অসুবিধার কথাগুলো স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিই। করোনাভাইরাস প্রতিহত করার শেষ দিন পর্যন্ত আমি এ কাজ করে যাব।

বাগাতিপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘সিপিসি অল্প সময়ে আমাদের সবার আস্থা অর্জন করেছে। জনবল কম থাকায় আমাদের অনেক কাজ তাঁরা করে দিচ্ছেন। তৃণমূলের অনেক খবর তাঁরা আমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমান দুর্যোগে সিপিসির স্বেচ্ছাসেবীরা বাগাতিপাড়ায় সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনেক সহযোগিতা করছেন।

আমি তাঁদের কাজের সুবিধার জন্য আমার স্বাক্ষরিত পরিচয়পত্র দিয়েছি। তবে তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কিছু উপকরণ দরকার। এলাকার বিত্তবানদের এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রয়োজন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.