ওড়িশায় সম্মুখ-সমরে দুই বন্ধুর দল

সৌম্য সিংহ: বিশেষ (ভারত) প্রতিনিধি: এ এক অন্য লড়াই। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সুসম্পর্ক কারও অজানা নয়।
একসময় বিজেপির হাত ধরেই আত্মপ্রকাশ করেছিল নবীন পট্টনায়কের নতুন দল বিজেডি। এখন এনডিএর শরিক না থাকলেও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে নবীন পট্টনায়কের।
তবুও ওড়িশার নির্বাচনে সম্মুখ-সমরে দু’জনের দল। অনেকেই ভাবছেন ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়।
গড়াপেটার তত্ত্ব সম্পূর্ণ খারিজ করে দিল বিজেডি। ওড়িশায় বিজেপিকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নয় মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের দল। লোকসভা নির্বাচনেও নয়, বিধানসভা নির্বাচনে তো নয়ই। আর এই বিজেপি-বিজেডি লড়াইতে আবার তাৎপর্য হারাতে বসেছে তৃতীয়পক্ষ কংগ্রেস।
বালেশ্বরের প্রার্থী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রবীণ কংগ্রেস নেতা শ্রীকান্ত জেনা সরাসরিই মন্তব্য করেছেন, বিজেপি-বিজেডির লড়াই আসলে গড়াপেটা ম্যাচ। রাজ্যের মানুষ এটা ভালভাবেই বুঝতে পারছেন।
কংগ্রেসের একটা অংশ যদিও মনে করছে, বিজেপি-বিজেডির লড়াইতে আদতে লাভবান হবে তারাই, ভোট কাটকাটির অঙ্কে আবার গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে তারাই। এমনকী ওড়িশার রাজনৈতিক সমীকরণ বদলেরও স্বপ্ন দেখছেন কিছু কংগ্রেস নেতানেত্রী।
আসলে এবারে তীরে এসে তরী ডুবেছে মোদি-নবীনের জোট সম্ভাবনার প্রয়াস।সকলেই ধরে নিয়েছিলেন, লড়াইটা হবে গেরুয়া-শঙ্খ জোটের সঙ্গে হাতের। কিন্তু ওই যে বলে, অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।
বিজেডির অভিযোগ, রাজ্যের কিছু গেরুয়া নেতার সীমাহীন লোভই অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল জোটগঠনের পথে। বিজেপি নেতাদের সাধ আছে সাধ্য নেই। প্রথম থেকেই ওড়িশার উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে বিজুপুত্র নবীনের প্রভাব প্রশ্নাতীত। ১৯৯৮তে বিজু জনতা দলের জন্মের পর থেকেই লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে বারবার তা প্রমাণিত হয়েছে।
অন্যদিকে বিজেপির প্রভাব ছিল পশ্চিমের পাহাড়-জঙ্গল ঘেঁষা জেলাগুলোতে। গত প্রায় আড়াই দশক ধরে এটাই চলে আসছে। নবীন-জমানার এই দীর্ঘ সময়ে বিজেডির সংগঠনের ভিত আরও প্রসারিত এবং মজবুত হলেও বিজেপি কিন্তু সেভাবে সংগঠন গড়তে পারেনি উৎকলরাজ্যে। অথচ বিজেডির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সময়ে নিজেদের সাংগাঠনিক দুর্বলতা লুকিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি আসন দাবি করে বসে তারা।
গেরুয়া দলের দাবি ছিল, রাজ্যে ২১ টি লোকসভা কেন্দ্রে বেশি আসনে লড়তে দিতে হবে তাদের, বিনিময়ে বিধানসভা ভোটে ১৪৭ আসনের মধ্যে বেশি আসনই ছেড়ে দেওয়া হবে বিজেডিকে। অথচ কঠিন বাস্তবটা হল একক শক্তিতে লড়ার ক্ষমতাই নেই বিজেপির, এটা বুঝতে পেরেই বিজেডির কাঁধে ভর দিয়েই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চেয়েছিল মোদির দল। আপত্তিটা এখানেই বিজেডি নেতৃত্বের। তাঁদের যুক্তি, বিজেপিকে বেশি আসন ছাড়লে ওড়িশায় জোটের ভরাডুবি অবশ্যাম্ভাবী। অগত্যা, তীরে এসে তরী ডুবল। লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে সম্মুখ-সমরে বিজেপি-বিজেডি। বেশি দর কষাকষি করতে গিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে সত্যিই একবারে নিঃসঙ্গ বিজেপি।
লড়াইতে নেমে বিজেপির বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ করছে বিজেডি। কী সেই অভিযোগ? মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের ‘বিজু স্বাস্থ্য কল্যান যোজনা’র বাস্তবায়নের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিচ্ছে গেরুয়া দল। অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে। কেন্দ্রের প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’এর নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তারা, রীতিমতো মিথ্যাচার করছে।
এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও বলে বেড়াচ্ছেন, নবীনের স্বাস্থ্যপ্রকল্প ভুলে ভরা। বিজেডি নেতা সস্মিত পাত্রের চ্যালেঞ্জ, সাহস থাকলে নির্বাচনী ইস্তাহারে বিজেপি বলুক, বিজু স্বাস্থ্য কল্যাণ যোজনার কার্ডকে তারা বাতিল করে দেবে। আসলে এই ইস্যুতেই এবারে বিজেপিকে রীতিমতো কোনঠাসা করে দিয়েছে বিজেডি। নবীন পটনায়কের লুঙ্গী পরা নিয়ে বিজেপির কটাক্ষ এবং অপব্যাখ্যাও মোটেই ভালোভাবে নেয়নি ওড়িশার আমজনতা। এর প্রভাব নিশ্চিতভাবেই পড়তে চলেছে ওড়িশার ভোটে।
তাই মোদি-নবীনের গোপন সখ্যতা কিংবা গড়াপেটার গল্পের গরু যতই গাছে চড়ুক না কেন, বিজেপিকে সূচ্যগ্র জমিও যে বিনাযুদ্ধে বিজেডি ছাড়বে না, তাতে কোনও সন্দেহই নেই।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর বিশেষ (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.