”ওক আইল্যান্ড” ১৪০ একরের রহস্যময় এক দ্বীপের নাম

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ”ওক আইল্যান্ড” ১৪০ একরের রহস্যময় এক দ্বীপের নাম । গুজব রয়েছে, এই দ্বীপে লুকনো রয়েছে বিপুল ধনসম্পদ। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ রহস্য মানুষের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লুকানো সম্পদের লোভে প্রাণও গিয়েছে বহু মানুষের।

কেউ আজ পর্যন্ত এই রহস্যের সমাধান করতে পারেননি। উদ্ধার হয়নি গুপ্তধনও। রহস্য বুকে চেপে শত শত বছর ধরে একই ভাবে টাকার ফাঁদ পেতে রয়েছে এই ”ওক আইল্যান্ড” দ্বীপ।

কিছু ইতিহাসবিদদের মতে, ১৭৯৫ সালে ড্যানিয়েল ম্যাকগিনিস নামে এক যুবক আলো জ্বলতে দেখেছিলেন এই দ্বীপে। সেই আলোর উৎস খুঁজতে খুঁজতে পর দিন দ্বীপের একটা অংশে পৌঁছে দেখেন, সেখানে রয়েছে ১৩ ফুট পরিধির এক বিশাল গর্ত। গর্তের আশেপাশের ওক গাছগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে।

সে দিনই ম্যাকগিনিস বুঝে ফেলেছিলেন, রহস্যজনক, মূল্যবান কিছু লুকিয়ে রাখা হয়েছে এই দ্বীপে। পরদিন আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে ফিরে এসে জায়গাটা খুঁড়তে শুরু করেন।

ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, এমন হতে পারে যে, তখন জলদস্যুরা লুঠ করা যাবতীয় সম্পত্তি এই দ্বীপে লুকিয়ে রেখেছিল। তবে সেটা কতটা, তার প্রমাণ আজও মেলেনি।

সে দিন ম্যাকগিনিস এবং তার বন্ধুরা মাটির দু’ফুট নীচে একটা বড় পাথর দেখতে পান। উত্তেজনার সঙ্গে সেই পাথরটা টেনে বার করেন তারা। কিন্তু তার নীচে কোনও গুপ্তধন ছিল না।

আবার খোঁড়া শুরু হয়। যত নীচে নামা হচ্ছিল, গর্তটা ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। ৭ ফুট নীচে তারা প্রথম আশার আলো দেখতে পান। গর্তের দেওয়ালে মানুষের কুড়ুলের ছাপ দেখতে পান ম্যাকগিনিসরা। তারা যে ঠিক পথেই এগোচ্ছেন, তা বুঝতে পারেন। গুপ্তধন উদ্ধারে আরও দৃঢ় হয়ে যান।

এই ভাবে খুঁড়তে খুঁড়তে ৩০ ফুট গভীর গর্ত করে ফেলেন তারা। কিন্তু প্রতি ১০ ফুট অন্তর গাছের গুড়ির স্তর আর মাটি ছাড়া কিছুর উদ্ধার করতে পারেননি। ব্যর্থ হয়ে ৩০ ফুটেই খোঁড়া শেষ করে দেন।

তবে এ খবর যত ছড়িয়ে পড়েছে, গুপ্তধন খুঁজতে বহু লোক এসেছেন। এই দ্বীপে বহু বড় বড় কোম্পানি ঘুরে গিয়েছে । ওই জায়গায় বহু খোঁড়াখুঁড়ি চলেছে। ৩০ ফুট থেকে সেই গর্ত ৯০ ফুট পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছে। কিন্তু কিছুই উদ্ধার করা যায়নি। একই ভাবে প্রতি ১০ ফুট অন্তর কাঠের স্তর পাওয়া গিয়েছে শুধু।

৯০ ফুট খোঁড়ার পর প্রথম লুকনো সম্পদের আভাস পাওয়া যায়। ঠিক টেবিলের মতো চারকোণা একটা কালো বড় পাথর উদ্ধার হয়। তাতে অদ্ভুত হরফে কিছু লেখাও ছিল।

দীর্ঘ গবেষণা করার পর এক ঐতিহাসিক জানান, তাতে লেখা রয়েছে, ‘৪০ ফুট নীচে ২০ লাখ পাউন্ড পোঁতা রয়েছে।’ অর্থাৎ, ৯০ ফুট খোঁড়া হয়েছিল, আরও ৪০ ফুট মিলিয়ে মোট ১৩০ ফুট নীচে ওই গুপ্তধন লুকনো রয়েছে।

১৮০৫ সাল,আবারও শুরু হল খোঁড়া- কিন্তু বেশি দূর আর যেতে হল না। অপ্রত্যাশিত ভাবে গর্তে পানি ভরতে শুরু করে। ফলে লোকজনও কাজ ফেলে উপরে উঠে আসেন। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত গর্ত পানিতে ভরে যায়।

পাম্প চালিয়েও সেই পানি বের করে খোঁড়ার কাজ আর শুরু করা যায়নি। অনস্লো নামে এক কোম্পানি তখন খোঁজ চালাচ্ছিল গুপ্তধনের। সেই থেকে পরবর্তী ৪০ বছর আর খোঁজা হয়নি গুপ্তধন।

১৮৪৫ সালে অন্য একটি সংস্থা পুনরায় খোঁড়ার কাজ শুরু করে। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ১১৪ ফুট পর্যন্ত খুঁড়তে পেরেছিল তারা। কিন্তু ১৩০ ফুট গভীরে আর পৌঁছনো যায়নি।

আজ পর্যন্ত কেউই ১৩০ ফুট গভীরে পৌঁছতে পারেননি। উল্টে এই গুপ্তধনের ফাঁদে পা দিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ৭ জনের। আজও একই ভাবে গুপ্তধনের ফাঁদ পেতে আটলান্টিক মাঝে জেগে রয়েছে এই ওক আইল্যান্ড। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.