ঐতিহ্যের শিক্ষা নগরী রাজশাহী চিরচেনা রূপে যেন তারুণ্যের মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: হযরত শাহ মুখদম র:(রু;) এর পুণ্যভূমি শিক্ষা নগরী রাজশাহী দীর্ঘদিন পর ফিরেছে তার সেই চিরচেনা রূপে।কারণ প্রথমবারের মতো বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)’র ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরিক্ষা শুরু হয়েছে। 
আগামীকাল রবিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষাও। করোনার গ্লানি মুছে আবারও এতিহ্যবাহী শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে উচ্ছ্বল তারুণ্যের প্রণোদ্যম ফিরে এসেছে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় নগরী পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ। ভর্তি পরিক্ষার প্রথম দিনে নগরীর বিনোদন স্পটগুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রচুর সমাগম ছিলো। বিভাগের আটটি জেলার শিক্ষার্থীরা পরিক্ষা শেষে নগরীর নান্দনিক সৌন্দর্যের স্নিগ্ধতা নিয়েছেন। এদিন ১৪ হাজার ৩৪৬ জন পরিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকদের সমাগমেও মুখর ছিলো রাজশাহী মহানগরী।
ভর্তি পরিক্ষাকে সামনে রেখে নগরীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ও জমে উঠেছে। এরইমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকও মেসগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশেপাশের এলাকাসহ বিনোদন স্পটগুলোতে যানজটও তৈরি হতে দেখা গেছে। একইসঙ্গে ছিলো বাড়তি ভাড়া আদায়ের দুর্ভোগও। অনেক দোকানি পণ্যের দামও বেশি নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার (০১ অক্টোবর) সকাল থেকেই রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা পরিক্ষায় অংশ নিতে রাবি ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন। রাজশাহীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, ঢাবির পরিক্ষা রাজশাহীতে হওয়ায় অনেকটাই ভোগান্তি কমেছে। অর্থসহ সময় সাশ্রয় হয়েছে। বিভাগীয় শহরে পরিক্ষা হওয়ায় পরিক্ষার্থীদের একটা অংশকে মেসে থাকার ঝামেলায় পড়তে হয় নি। যানজটমুক্ত গ্রিণ ও ক্লিন সিটির সৌন্দর্যের মাঝে একটু জিরিয়ে নেয়ারও সুযোগও হয়েছে।
এদিন বেলা ১১টা থেকে ‘ক’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) ভর্তি পরিক্ষা শুরু হয়ে চলে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। পরিক্ষা শেষে অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক নগরীর হোটেলগুলোতে দুপুরের খাবার সেরেছেন। অনেকে বন্ধু-বান্ধবদের মেসে বিশ্রাম নিয়ে নগরীর বিস্তীর্ণ পদ্মাপাড়ে ভিড় জমিয়েছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নগরীর পদ্মাপাড়সহ অন্যান্য দর্শনার্থীদের একটি বড় অংশই ছিলো এসব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ‘ক’ ইউনিটে পরিক্ষা দিতে এসেছিলো এক ছাত্র। পরিক্ষা শেষে নগরীর হাইটেক পার্ক এলাকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, রাজশাহীতে পরিক্ষা দিতে এক আত্মীয়ের মেসে উঠেছি। পরিক্ষা শেষে নগরীর পদ্মাগার্ডেন, লালনশাহ পার্ক, ট্রি-বাঁধ ঘুরে হাইটেক পার্ক এলাকা ঘুরলাম। রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী জেলাতে থাকলেও এর আগে তেমন ঘুরে দেখার সুযোগ হয়নি। পরিক্ষা শেষে রিফ্রেশ হতে ঘুরলাম। রাবির পরিক্ষা পর্যন্ত রাজশাহীতেই থাকবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, নগরীতে শিক্ষার্থীদের সমাগম বাড়তে থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বেচাবিক্রি বেড়েছে। একই সঙ্গে চাহিদা বাড়তে থাকায় দামও কিছুটা বেড়েছে। নগরীর ফাস্টফুড বিক্রেতারাও স্বস্তি প্রকাশ করছেন।
নগরীর উপশহর এলাকার এক মুদি ব্যবসায়ী  বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, করোনার মধ্যে শিক্ষার্থী না থাকায় তার বেচাবিক্রি কমে গিয়েছিলো। এখন শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করায় বেচাবিক্রি বেড়েছে। আর ভর্তি পরিক্ষাকে সামনে রেখে তাদের বাড়তি কিছু প্রস্তুতিও নিতে হয়। এই কয়েকদিন অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে।
রাজশাহী আরডিএ মার্কেট ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, শিক্ষার্থীরাই এই নগরীর ব্যবসায়ীদের প্রাণ। করোনাকালে শিক্ষার্থীরা না থাকায় ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যেটা এখন অনেকটাই ভালো দিকে যাচ্ছে। বেচাবিক্রি বাড়ছে। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষার এই কয়েকদিন দোকানিদের বেচাকেনায় চাঙ্গা ভাব থাকে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বেচাবিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আজ শনিবার (০২ অক্টোবর) ‘খ’ ইউনিটের পরিক্ষায় ৬ হাজার ৩৭১ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া ৯ অক্টোবর ‘চ’ ইউনিটের পরিক্ষায় ১ হাজার ৯৭৭ জন, ২২ অক্টোবর ‘গ’ ইউনিটের পরিক্ষায় ১ হাজার ৮২৪ জন ও ২৩ অক্টোবর ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১২ হাজার ৬ জন ভর্তিচ্ছু পরিক্ষায় অংশ নেবেন। এছাড়া ৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষায় প্রায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেবেন।সব মিলিয়ে প্রায় ৩ থেকে ৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমাগমে মুখরিত রাজশাহী মহানগরী।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো: মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.