বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: শিল্প মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আগামী ৫-১২ ডিসেম্বর নবম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলার আয়োজন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করবেন।
এতে অংশ নেবে ৩২৫টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। মেলায় উদ্যাক্তাদের ৬০ শতাংশই নারী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আজ বৃহস্পতিবার (০২ ডিসেম্বর) এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব জনাব জাকিয়া সুলতানা, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান।
শিল্পমন্ত্রী জানান, ৫ সকাল ১০টায় নবম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০২১ বিজয়ী ৪ জন উদ্যোক্তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হবে।
তিনি জানান, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিতব্য শতভাগ দেশি পণ্যের এই মেলায় উদ্যোক্তাদের জন্য ৩২৫টি স্টলের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মাঝে এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচিতি ও কর্মসূচি তুলে ধরার লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের একটি সেক্রেটারিয়েট, মিডিয়া সেন্টার, রক্তদান কেন্দ্র, ক্রেতা-বিক্রেতা মিটিং বুথ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান, যেমন: বিটাক, বিএসটিআই, বিসিআইসি, বিসিক, বিএসইসি, জেডিপিসি, বিসিএসআইআর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং প্লাটিনাম স্পন্সর ব্র্যাক ব্যাংক, গোল্ডেন স্পন্সর লঙ্কা-বাংলা, সিলভার স্পন্সর ব্যাংক এশিয়া ও ইস্টার্ন ব্যাংক, কো-স্পন্সর জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-এর স্টল থাকবে।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানান, ‘জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬’ অনুযায়ী উচ্চ অগ্রাধিকার/অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত কৃষি/খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী শিল্প, আইসিটি/সফটওয়ার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট ও পাটজাত, প্লাস্টিক, হস্ত ও কারুশিল্প, জুয়েলারি (কৃত্রিম), খেলনা ও আগর শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। দেশে উৎপাদনকারী অথবা সেবামূলক মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পই শুধু মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রয়ের সুযোগ পাবে। বিদেশি/আমদানিকৃত পণ্য মেলায় প্রদর্শন কিংবা বিক্রয় করা যাবে না।
তিনি জানান, এবার অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী এবং ৪০ শতাংশ পুরুষ। মেলায় অংশ নিচ্ছে ফ্যাশন ডিজাইন খাতের সবচেয়ে বেশি ১১৬টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া চামড়াজাত পণ্য খাতের ৩৭টি, খাদ্য/কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য খাতের ৩৬টি, হ্যান্ডিক্রাফটস আইটেম ৩৩টি, পাটজাত পণ্য খাতের ২৯টি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য খাতের প্রতিষ্ঠান ১৭টি, আইটি খাতের ৪টি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স খাতের ৬টি, হারবাল/অর্গানিক পণ্যের ৪টি, জুয়েলারি পণ্যের ৪টি এবং প্লাস্টিক পণ্য খাতের ৩টি প্রতিষ্ঠান এবার অংশ নিচ্ছে মেলায়।
মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য:
(০১). ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা কর্তৃক উৎপাদিত পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিক্রয় এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাজার সম্প্রসারণ;
(০২). এসএমই উদ্যোক্তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন, যোগাযোগ এবং সেতুবন্ধন তৈরিতে সহায়তা;
(০৩). ভোক্তা এবং এসএমই উদ্যোক্তাদের পারস্পরিক সংযোগ স্থাপন; এবং
(০৪). সেমিনার/মতবিনিময় সভা আয়োজনের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভোক্তাসহ বিভিন্ন মহলের সৃজনশীল মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ প্রভৃতি।
আট দিনের মেলার পাশাপাশি এসএমই উদ্যোক্তাদের সহজ অর্থায়ন, নারী-উদ্যোক্তা উন্নয়ন, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ক্লাস্টার উন্নয়নের ওপর আয়োজন করা হবে ৪টি সেমিনার।
এগুলো হলো:
(০১). ৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় ‘সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে এসএমই ক্লাস্টারের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
(০২). ৬ ডিসেম্বর বেলা ৩টায় ‘কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে এসএমই পণ্যের বাজার সংযোগ: নারী-উদ্যোক্তা প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মেহের আফরোজ।
(০৩). ৯ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় ‘পোস্ট কোভিড-১০ ফাইন্যান্সিং ম্যাকানিজম ফর এসএমই’স: চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড রিডনেস’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।
(০৪). ৯ ডিসেম্বর বেলা ৩টায় ‘৪র্থ শিল্প বিপ্লব: এসএমই’দের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
এছাড়া ১২ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘দেশব্যাপী এসএমই প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-উদ্যোক্তাগণ অনেক উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করলেও বিপণন প্রক্রিয়ার যথার্থ জ্ঞানের অভাবে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা অর্জনের জন্য বাজার সংযোগ ও সম্প্রসারণ জরুরি। বাংলাদেশি এসএমই উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদানে বহুমুখী বাজার সুবিধা সম্প্রসারণের গুরুত্ব বিদ্যমান। এসএমইদের পণ্য বিপণনের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য ফাউন্ডেশন পণ্যের বাজারজাতকরণে সহায়তা প্রদান করে। যার অংশ হিসেবে রূপে এসএমই ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারে ২০১২ সাল থেকে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন করছে।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত গত ৮টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় ১৫৬১ জন উদ্যোক্তা প্রায় ২১.৮৮ কোটি টাকার পণ্য বিক্রয় এবং প্রায় ৩৬.৫০ কোটি টাকার অর্ডার গ্রহণ এবং ৮৬টি আঞ্চলিক (বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে) এসএমই পণ্য মেলায় ৩১৬২জন এসএমই উদ্যোক্তা পণ্য প্রদর্শন করে ২৩.৩৩ কোটি টাকার পণ্য বিক্রয় এবং ২১.১৪ কোটি টাকার অর্ডার গ্রহণ করেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.