এরশাদকে তারা স্বৈরাচার বলে কিন্তু কেন বলে জানে না: জাতীয় পার্টির সংবিধান সংরক্ষণ দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা

প্রেস বিজ্ঞপ্ত: নব্বইয়ের দশকে সামরিক কর্মকর্তা থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ‘স্বৈরাচার’ বলে আখ্যা দিলেও তার কোনো কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান, রাজশাহী মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন।
তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ অন্যায়ভাবে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্বৈরাচার বলেন। কিন্তু কেনো স্বৈরাচার বলে তার উত্তর দিতে পারেন না। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চেয়ে ছোট স্বৈরাচার কে?’
আজ সোমবার বিকেলে জাতীয় পার্টি রাজশাহী মহানগর শাখার কার্যালয়ে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় সাইফুল ইসলাম স্বপন এসব কথা বলেন।
সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ১৯৮২ সালে বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বসা এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন। বিভিন্ন দল ও সংগঠন দিনটিকে ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ হিসেবে পালন করে। অপরদিকে এরশাদের জাতীয় পার্টি পালন করে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ হিসেবে।
‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবসের’ প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনায় রাজশাহী মহানগর জাতীয় পাটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ সেলিম বলেন, জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ‘নিপাত যেতে শুরু করে’।
তিনি বলেন, ‘১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের পতন হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলময় রাজনীতির পতন শুরু হয়েছে। আর উত্থান হয়েছে স্বৈরতন্ত্রের। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও আমাদের বলতে হচ্ছে, স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর হতে পারে না। এখন রাস্তায় নেমেই কেউ স্নোগান দিতে পারে না স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। এ থেকেই বোঝা যায় দেশের মানুষ কতটা গণতন্ত্র ভোগ করছে।’
দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে ‘একনায়কতন্ত্রের’ সঙ্গে তুলনা করে ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ সেলিম বলেছেন, ‘দেশে সাংবিধানিকভাবেই একনায়কতন্ত্র চলছে। একটি দলের প্রধান সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশের নির্বাহী বিভাগের প্রধান হন তিনি। আবার সরকার প্রধানের সিদ্ধান্তের বাইরে দলীয় সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারে না, তাই সরকার প্রধান যা বলেন তার বাইরে কিছুই হতে পারে না। এতে আইন সভাও সরকার প্রধানের অধীনে। অপরদিকে বিচার বিভাগ রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে শতকরা ৯৫ ভাগই সরকার প্রধানের অধীনে। তাই রাষ্ট্রে প্রধান তিনটি বিভাগ এক ব্যক্তির অধীনে থাকায় এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, যাকে সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র বলা যায়।’
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হচ্ছে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণ। ১৯৯০ সালে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতাসীন দলের কর্মী না হলে পরীক্ষায় প্রথম হয়েও কেউ চাকরি পায় না। সরকারি দলের সদস্য না হলে কেউ ব্যবসা করতে পারে না। তেমনিভাবে সরকারি দলের হলে এক ধরনের আইন আর বিরোধীদের জন্য আলাদা আইন। ধনী ও গরীবদের মধ্যে বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে, ধনীদের জন্য এক আইন আর গরীবদের জন্য অন্য আইন ‘
এসময় তিনি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধ্বংস করে দিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহানগর নেতা সালাউদ্দিন মিন্টু বলেন, ‘পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের ৯০ ভাগ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছে। যতদিন বাংলাদেশে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব থাকবে ততদিন কেউ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরিবর্তন করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করতে আওয়ামী লীগ বিএনপি এক হয়ে অপচেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় না থেকেই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। আবার মাত্র ১৩ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টি ৩১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকেও অত্যন্ত সুসংহত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মাঠে আছে।
জাতীয় পার্টির সংবিধান সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা সাজিদ রওশন ঈশান মতিহার থানার আহবাহক সারনাল সরকার,বোয়ালিয়া থানার সাধারন সম্পাদক এ অঅর খান লাবলু, শাহমখদুম থানার সদস্য সচিব আশরাফ আলী, নুরুজ্জামান রফিক, আফুাব হোসেন, এসারুল ইসলাম, আক্তারুজ্জামান মিলু, মো: ইকবাল হোসেন, ছাত্র নেতা শাওন, শফিকুল, মুন্না, নুরু প্রমুখ।
বার্তা প্রেরক: ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ সেলিম, সদস্য সচিব, রাজশাহী মহানগর জাতীয় পাটি, রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.