এবার খোঁজ মিলল রহস্যময় ‘ঠাণ্ডা’ নিউট্রন তারার

বিটিসি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক: সম্প্রতি রহস্যময় ‘ঠাণ্ডা’ প্রকৃতির নিউট্রন তারা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইএসএ’র স্পেস রকেট ‘এক্সএমএম-নিউটন’ ও নাসা’র ‘চন্দ্র’ মহাকাশযানের তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা তিনটি তরুণ নিউট্রন তারা’র সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলো নিজ বয়সের তুলনায় বিস্ময়কররকম ঠাণ্ডা।
এইসব অস্বাভাবিক আবিষ্কার নিউট্রন তারা নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন মডেলকে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি এদের আচরণ নিয়ে নানাধরনের ব্যাখ্যা ছেঁটে ফেলার সুযোগ করে দিয়েছে।
তবে এ যুগান্তকারী উদঘাটন মহাবিশ্বের মৌলিক বিভিন্ন তত্ত্ব আরও ভালভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’-তে।
নিউট্রন তারা কী?
নিউট্রন তারা মূলত বিভিন্ন এমন বিস্ময়কর ঘন বস্তু, যেগুলো সুপারনোভায় বিস্ফোরিত বিশাল তারা’র অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরি হয়ে থাকে।
যখন কোনো তারা এর পুরো জ্বালানী পুড়িয়ে ফেলে, তখন এর মূল কেন্দ্রটি মাধ্যাকর্ষণের কারণে ভেঙে পড়ে। একই সময় এর বাইরের বিভিন্ন স্তর মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। আর এর মূল কেন্দ্রটি পরিণত হয় নিউট্রন তারায়, যেখানে বিভিন্ন বস্তু চরম ঘনত্বের চাপে সংকুচিত হয়ে যায়।
নিউট্রন তারা’র ভেতরে চাপ এতটাই বেশি যে, সেখানে বিভিন্ন পরমাণুও ভেঙে গিয়ে প্রোটন ও ইলেক্ট্রনকে নিউট্রনে পরিণত করে। কিছু তত্ত্ব থেকে ইঙ্গিত মেলে, এর থেকে নতুন ধরনের কণা সৃষ্টি হতে পারে বা কণাগুলো বিভিন্ন মৌলিক উপাদানে ঘন স্যুপের মতো মিশে যেতে পারে, যা ‘কোয়ার্ক’ নামে পরিচিত।
নিউট্রন তারা’র ভেতরের ভৌত প্রক্রিয়াগুলো ব্যাখ্যা করতে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন তাত্ত্বিক মডেল ব্যবহার করেছেন, যা ‘ইকুয়েশনস অফ স্টেট’ নামেও পরিচিত। তবে এমন শত শত সম্ভাব্য মডেল থাকায় কোন তত্ত্বটি এইসব তারার আচরণকে সঠিকভাবে তুলে ধরে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া, নিউট্রন তারার বৈশিষ্ট্য যতই অনন্য হোক না কেন, এরা ‘ইকুয়েশনস অফ স্টেট’-এর একই মৌলিক সমীকরণ মেনে চলে।
‘ঠাণ্ডা’ নিউট্রন তারা
‘এক্সএমএম-নিউটন’ ও ‘চন্দ্র’ পরিচালিত বিভিন্ন মিশনের তথ্য যাচাই করে বিজ্ঞানীরা তিনটি নিউট্রন তারা’র সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলো একই বয়সের অন্যান্য তারার চেয়ে অনেক ‘ঠাণ্ডা’।
সাধারণত এইসব তারা এদের সমবয়সী তারাগুলোর চেয়ে ১০ থেকে ১০০ গুণ পর্যন্ত ঠাণ্ডা হয়ে থাকে।
এদিকে, বিভিন্ন ধরনের মডেলে এইসব তারার ‘কুলিং রেট’ বা শীতলতার হার তুলনা করে গবেষকরা দেখেন, এরা ‘ইকুয়েশনস অফ স্টেট’ তত্ত্বের প্রায় ৭৫ শতাংশই মেনে চলে না।
“এই তিনটি নিউট্রন তারার তরুণ বয়স ও এদের পৃষ্ঠে শীতল তাপমাত্রা থাকার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে শুধু একটি ফাস্ট কুলিং মেকানিজমের মাধ্যমে,” বলেছেন ‘ইনস্টিটিউট অফ স্পেস সায়েন্সেস (আইসিই-সিএসআইসি)’ এবং ‘ইনস্টিটিউট অফ স্পেস স্টাডিজ অফ কাতালোনিয়া (আইইইসি)’ থেকে এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া জ্যোতির্পদার্থবিদ নন্দা রিয়া।
“এর সহায়তায় আমরা বিভিন্ন সম্ভাব্য মডেলের বড় অংশ বাদ দিতে পেরেছি।”
নিউট্রন তারা’র সঠিক সমীকরণ বোঝার বিষয়টি পদার্থবিজ্ঞানে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
এমনকি ‘জেনারেল রিলেটিভিটি’ (যা বড় পরিসরে মাধ্যাকর্ষণ থাকার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে) ও ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ (যা কণা-স্তরের মিথস্ক্রিয়া ব্যাখ্যা করে) এর মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে এটি।
নিজেদের চরম ঘনত্ব ও মহাকর্ষীয় শক্তির কারণে নিউট্রন তারা নিয়ে গবেষণা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর মানুষ পৃথিবীতে যেসব বস্তু নতুন বস্তু তৈরি করতে সক্ষম, এর ব্যাপ্তি তার চেয়েও বেশি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.