এতিম, গরীব ও দুস্থদের মাথায় হাত : বাগমারায় কোরবানীর পশুর চামড়ার বেহালদশা


বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারায় কোরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়ছেন বিক্রেতারা। আজীবন কোরবানীর পশুর চামড়া বা বিক্রিত টাকা গরীব, অসহায়, এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসায় বিতরণ করা হতো।
এতে করে অধিকাংশ এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ওই চামড়ার টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো চলতো। কিন্তু অজানা কারণে দেশে চামড়া শিল্পের প্রধান উপকরণ চামড়ার দাম ধস নেমেছে। গত ১৫/১৬ বছর আগে একটি গরুর চামড়া দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। একই ভাবে খাশির চামড়া প্রতিটি আট শত থেকে এক হাজার টাকা বিক্রি হতো। বর্তমানে চামড়া শিল্পের কাঁচামাল চামড়ার দাম বলতে কিছুই নেই।
ঈদের দিন আজ বুধবার (২১ জুলাই) দুপুরের আগে প্রতিটি গরুর চামড়া দুই শত থেকে আড়াই শত টাকা ও খাশির চামড়া নামমাত্র ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বিকেল হতে না হতে মৌসুমী ওই চামড়া ব্যবসায়ী আর নেই। এমন কি বাজারেও চামড়া লেন দেন নেই। মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা লাপাতাতার ফলে কোরবানীর চামড়া আর কেনা-বেচা নেই।
বিগত দিনে ঈদের দিন বিকেল থেকে কাঁচা চামড়া পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য মওসুমী চামড়া ব্যবসায়ী মিলত। কিন্তু এবারে দুপুরের আগে সীমিত ভাবে একটু কেনা-বেচা হলেও পরে আর না থাকায় চামড়াগুলো বিক্রি হচ্ছে না। গ্রামে সমাজে সমাজে চামড়া নিয়ে জমা থাকলে ক্রেতা দেখা দায় হয়ে পড়ে। চামড়া সিন্ডিকেটে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে উপজেলার অধিকাংশ চমড়া পচে যাওয়া আশংকা হয়ে পড়েছে। চামড়া ব্যবসায় না থাকায় অনেকে চামড়া মাটিতে পুতে রাখছে। এতে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন কোরবানীর পশুর চামড়া এলাকার বেশী ভাগা মাঠে পড়ে আছে।
উপজেলার বালানগর গ্রামের ৬০ উর্ধে বয়সী মজিবর রহমান, এরশাদ আলীসহ অনেকে জানান, প্রতিবারে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরু, খাশি, মহিষও ভেড়া কোরবানী দেয়া হয়। কোরবানীর পশুর চামড়া থেকে অর্জিত অর্থ হকদার হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ে মাদ্রাসা, এতিম খানা ও দুস্থ পরিবারদের দান করা হয়। এবারে দেশের বিভিন্ন স্থানের মত কোরবানীর পশুর চামড়া সিন্ডিকেটের অংশ হিসেবে এলাকায় চামড়া বাজার ধস নেমেছে। ক্রেতা সংকটে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অধিকাংশ এলাকার চামড়া পচে নষ্ট হচ্ছে। এতে করে এতিম খানা, হাফিজিয়া মাদ্রাসা, গরীব ও দুস্থ অসহায় পরিবারের মাথায় হাত পড়ছে।
বালানগর গ্রামের জামাতীয় কয়েকজন সরদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, কোরবানীর চামড়ার অর্থ হকদার এতিম ও অসাহয়রা এবারে চামড়ার চাহিদা না থাকায় চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। ঈদের দিনে প্রতিবারে মওসুমী চামড়া ব্যবসায়ী ভিড় করে। এবারে সন্ধ্যা পূর্বে কোন গ্রাহক মিলেনি। রহমত আলী নামে এক কোরবানী দাতা বলেন চামড়া কেনা-বেচা নেই। সবাই ফেলে রেখে গেছে। ঈদের দিন সন্ধ্যার প্রাককালে বালানগর গ্রামের মধ্যপাড়া একটি কোরবানীর স্পটে গাছের উপর ২০/২৫টি খাশির চামড়া ও মাটিতে ৭/৮টি কোরবানীর চামড়া পড়ে থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয় লোক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে চামড়াগুলো দেখিয়ে বলেন, এই গুলো বিক্রি হচ্ছে না। এগুলো সবাই রেখে গেছে। এগুলো অপসরণ না করতে পারলে রাতের পর গন্ধ ছুটলে এলাকায় থাকা দায় হয়ে পড়বে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন। এদিকে চামড়ার এহেন অবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। চাড়ার দামের ধস ও অপসরণ না করায় তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। চমড়ার দাম ধস ঠেকাতে তাঁরা সরকারের কাছে বাস্তবমুখী ব্যবস্থার আবেদন জানিয়েছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মোঃ আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.