উৎকোচ না দেয়ায় নাটোরে কৃষক জাবেদ এখন নিঃস্ব!

 

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের গুরুদাসপুরে গভীর নলকুপে পল্লী বিদ্যুতের একটি সংযোগের অভাবে কৃষক জাবেদ এখন নিঃস্ব! বছরের বেশির ভাগ সময়ে পানির অভাবে গুরুদাসপুর এলাকার বিলের তিনশ বিঘা জমি অনাবাদী পড়ে থাকে। তিনি জমিতে সেচ সুবিধা দিতে সরকারের পানাসী প্রকল্পের সহায়তায় সেখানে একটি গভীর নলকুপ স্থাপন করে ফসল ফলানোর সব উদ্যোগ নেন। ছয় বছর অপেক্ষা করেও চাহিদা মতো উৎকোচ দিতে না পারায় বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়া যায়নি। প্রায় দুইশত চাষীকে নিয়ে যিনি সফলতার স্বপ্ন দেখতেন তিনি এখন দিন মুজুর হিসেবে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। টাকার অভাবে এখন তার অনার্স পড়–য়া দুই ছেলে মেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না গিয়ে সারাদিন গার্মেন্টে কাজ করে রাতে লেখাপড়া করে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুরুদাসপুর উপজেলার পাঁচপুরুলিয়া গ্রামের তোজাম্মেল খানের ছেলে কৃষক আব্দুল জাবেদ টেলিভিশনের খবর দেখে সরকারের পানাসী প্রকল্পের আওতায় একটি গভীর নলকুপের আবেদন করে তা পেয়েও যান। বসানো হয় গভীর নলকূপ, তৈরী হয় পাকা ঘর, বিলের তিনশ বিঘা জমিতে মাটির তিন ফিট নিচ দিয়ে বসানো হয় পাইপ, পল্লী বিদুৎ থেকে সাতটি বড় পিলার (খাম্বা) কিনে বসানো হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন। এসব করতে করতেই কৃষক আব্দুল জাবেদের সারাজীবনের অর্জন প্রায় সব টাকা শেষ হয়ে যায়। সব শেষে শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেই যখন শুরু হবে কৃষি বিল্পব, সবুজে সবুজে ভরে যাবে মাঠ জাবেদ যখন এমন স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তখন নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (বনপাড়া) থেকে সংযোগের বিনিময়ে চাওয়া হয় পাঁচ লাখ টাকা।

এই টাকা আর তার পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো গ্রামের প্রভাবশালী কৃষক আব্দুর রহিম দুবছরের মাথায় মামলা করেন এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে। অভিযোগ করেন, প্রকল্পটি চালু হলে প্রকল্প এলাকায় চলা তার দুটি শ্যালো মেশিন বন্ধ হয়ে যাবে এবং সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

কোর্ট তদন্তের মাধ্যমে সেই অভিযোগ অসত্য প্রমান হলেও এই গভীর নলকূপটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। নিয়ম না থাকলেও সেচ প্রকল্পের জন্য করা এই বিদ্যুৎ লাইন থেকে ৭২টি বাড়িতে সংযোগ দেয়া হয়েছে, এরই মধ্যে আরো তিন অগভীর নলকূপেও সংযোগ দেয়া হয়েছে কিন্তু যার খরচে এই বৈদ্যুতিক লাইন তৈরী করা হয়েছে তার গভীর নলকূপটিতে আজো সংযোগ দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন নাটোরের গুরুদাসপুর জোনের সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) দিল মোহাম্মদ সর্বশেষ গত ২৫ মে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (বনপাড়া) নিকট এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের জন্য যে অনুরোধপত্র পাঠান সেখানে উল্লেখ করেছেন, সংযোগটি না পাওয়ায় প্রকল্পের আওতাভুক্ত তিনশত বিঘা জমি পাঁচ বছর থেকে সেচ বঞ্চিত রয়েছে এবং প্রতি বছর দেড় হাজার মেট্রিকটন খাদ্য উৎপাদন ব্যবহত হয়েছে।

সরকার যেখানে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার কথা বলছেন, সেখানে ছয় বছর থেকে একটি সংযোগ না দিয়ে অত বড় ক্ষতির পর বিষয়টি কেউ তাকিয়েও না দেখায় হতাশা প্রকাশ করছেন এলাকার সাধারন কৃষকরা। ক্ষতিগ্রস্থ আব্দুল জাবেদ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বড় বড় জনপ্রতিধির কাছেও বার বার ছুটে গিয়েছেন কিন্তু প্রতিপক্ষ ক্ষমতাশালী হওয়ায় কেহই জাবেদের পাশে দাঁড়ায়নি। তার ছেলে আলিফ জানায়, টাকার অভাবে এখন তারা দুই ভাইবোন অনার্স পড়া বন্ধ হওয়ার ভয়ে সারাদিন ঢাকা সাভারের দুটি গার্মেন্টে কাজ করে রাতে লেখাপড়া করে, কোন দিন ক্লাশ করার সুযোগ পায় না।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন নাটোরের গুরুদাসপুর জোনের সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) দিল মোহাম্মদ বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে কৃষক জাবেদ আলী অনেক টাকা খরচ করে সব কাজ সম্পন্ন করলেও শুধুমাত্র একটি সংযোগের অভাবে বেচারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন, সেই সাথে এই বিলের তিনশ বিঘা জমিতেও পানির অভাবে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। সরকারের প্রকল্পটি সব কাজ সম্পন্ন করার পরও বিদ্যুৎ বিভাগের অনিহার কারনে চালু করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে কথা বলতে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (বনপাড়া) যোগাযোগ করলে জানা যায় সমিতির মহাব্যবস্থাপক নিতাই রায় দুদকের মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার পদে চলতি দায়িত্বে থাকা লালপুরের ডিজিএম মোঃ মোমিনুল ইসলাম বলেন, উৎকোচ দাবীর অভিযোগ তার জানা নেই।

মাত্র তিন মাস থেকে তিনি দায়িত্বে আছেন। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।#

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি মো: নাসিম উদ্দীন নাসিম ।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.