উপকূলীয় অঞ্চল সুবর্ণচরে ব্রি ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল সুবর্ণচর উপজেলার চরমজিদে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক পরীক্ষমূলকভাবে এবার বোরো ধান আবাদে বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকের মূখে হাসি ফুটেছে।
উল্লেখ্য, ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মা. শাহজাহান কবীর গত বছর ২৮ নভম্বর বিনামূল্য উক্ত বীজ বিতরন করেন। পরবর্তীত ব্রি’র সোনাগাজী কার্যালয় হতে বিনামূল্য সার, বীজ, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। যাতে করে সুবর্ণচরে  প্রথমবারের মতো বোরো ধান আবাদ করে কৃষক বাম্পার ফলন পেয়েছে।
আজ সকালে আবাদকৃত ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৭৪ এবং ব্রি ধান৮৯ এর উপর চরমজিদে কৃষক সমাবেশ, শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়ছে। উক্ত মাঠ দিবসে প্রায় ১৫০ জন কৃষক-কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন।
ব্রি’র ফেনী সোনাগাজী আঞ্চলকি কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান ড. বিশ্বজিৎ কর্মকারের সভাপতিত্বে  উক্ত মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বারি”র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মহি উদ্দিন চৌধুরী, বিএডিসির নোয়াখালী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মাহমুদুল আলম, সুবর্ণচর উপজলো কৃষি অফিসার হারুন অর রশিদ।
আরো বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ব্রি’র ফেনী সোনাগাজী কার্যালয়ের র্উধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাইম আহমেদ এবং বৈজ্ঞানিক কর্মর্কতা মো. নিয়াজ মোর্শেদ। এছাড়াও সুবর্ণচর উপজেলার ৫ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ব্রি’র বৈজ্ঞানিক সহকারী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আগত সকল কর্মকর্তা, অতিথি ও কৃষকসহ ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৭৪ ও ব্রি ধান৮৯ এর বীজ উৎপাদন মাঠ পরিদর্শন করা হয় এবং মাঠ দেখে কৃষকগণ এ ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেন। শস্য কর্তন করে ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৭৪ ও ব্রি ধান৮৯ এর গড় ফলন পাওয়া যায় যথাক্রমে ৭.১ টন/হে. (২৩ মন/বিঘা), ৬.৯৫ টন/হে. (২৩ মন/বিঘা), ৮.২ টন/হে. (২৬-২৭ মন/বিঘা) এবং ৮.৫ টন/হে. (২৮-৩০ মন/বিঘা)।
মাঠ দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে উক্ত গবেষণা কর্মসূচীর সাথে সম্পৃক্ত ব্রি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কর্মকার বলেন, ব্রি কর্তৃক সম্প্রতি আবিষ্কৃত ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৭৪ এবং ব্রি ধান৮৯ বোরো মৌসুমে  অত্যন্ত সম্ভবনাময় জাত। বিশেষ করে এই উপকূলীয় অঞ্চল যেখানে বছররে বেশির ভাগ সময় জমি পতিত থাকে এবং স্থানীয় জাতের ধান আবাদ করে তেমন ফলন পাওয়া যায় না সেখানে উক্ত জাতগুলো খুবই উপযোগী। ফলে অত্র অঞ্চলে এ জাতের আবাদ বৃদ্ধি করে এদেশের খাদ্য নিরাপত্তা আরও টেকসই করে বিদেশে চাল রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
এ জাত গুলোর ফলন বিশেষ করে ব্রি ধান৭৪ এবং ব্রি ধান৮৯ এর ফলন জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান২৮ এর চেয়ে বিঘা প্রতি গড়ে প্রায় ৪-৫ মন বেশী, জীবনকাল ব্রি ধান২৮ এর চেয়ে মাত্র এক সপ্তাহ বেশী। এ জাতের বিশেষ গুণ হচ্ছে ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৭৪ এবং ব্রি ধান৮৯ এর গাছ শক্ত, তাই সহজে হেলে পড়ে না, ছড়ায় ধানের সংখ্যা বেশী এবং চিটার সংখ্যা কম। এছাড়া, ব্রি ধান৬৭ লবন সহনশীল জাত।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃষাণী হনুফা ও কৃষক নুর উদ্দীনসহ কৃষকগণ ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৭৪ এবং ব্রি ধান৮৯ এর বীজ পেয়ে খুবই খুশী এবং তাঁরা এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ জানান । এলাকার কৃষকগণ এ ধানের অধিক ফলন দেখে তা আবাদে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অতিথিগণ উৎপাদনকৃত সকল ধান বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে কৃষকদের মাঝে বীজ বিনিময় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে এ জাতের আবাদ সম্প্রসারণ করতে পরামর্শ দেন।
প্রধান অতিথি ড. মহি উদ্দিন চৌধুরী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ব্রি ধান ৫৮, ব্রি ধান৭৪ এবং ব্রি ধান৮৯ জাতগুলো সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনকে আরও টেকসই করবে এবং দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্রি’র গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম আরও জোরদার করনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
উপজলো কৃষি র্কমর্কতা, মোঃ হারুনুর রশদি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ব্রি ধান৭৪ এবং ব্রি ধান৮৯ ব্রি’র এক অসাধারণ আবিস্কার। তিনি বলেন আবাদি জমি কমে যাওয়া সত্ত্বেও বর্তমান সরকারের কৃষি বান্ধব নীতির কারনে ১৯৭০-৭১ সালের তুলনায় দেশে ধান উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩ গুণের বেশি। এ জাত দু’টির আবাদ সম্প্রসারণ করে ধানের উৎপাদন আরও কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব হবে, যা বাংলাদশেরে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নোয়াখালী প্রতিনিধি ইব্রাহিম খলিল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.