উন্নয়ন কমিটির সাথে মতবিনিময়কালে খুলনার জেলা প্রশাসক সেপ্টেম্বরেই মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযান

খুলনা ব্যুরো:  বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাথে মতবিনিময়কালে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেছেন, খুলনার প্রশাসনের লোকজন মাদকের সাথে জড়িত নয়। তিনি নিজেসহ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সকলকে ডপ টেষ্ট করে প্রমাণ করতে হবে আমরা কেউ মাদকসেবী নই।

আজ শনিবার সকলের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মাদককে নির্মূল করতে না পারলেও অনেকটা কমিয়ে আনা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য শোকের মাস শেষে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম থেকেই টাস্কফোর্সের অভিযান শুরু হবে। অবশ্য ইতোমধ্যে অনেক নিরীহ মানুষকে মাদক মামলায় আটক করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব প্রশ্ন উঠেছে তা অনেকাংশে সঠিক।

টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অভিযান হলে এসব অভিযোগ থাকবে না বলেও তিনি মনে করেন। খুলনার উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিল্পায়নের জন্য গ্যাসের বিকল্প নেই।

বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। খুলনার বটিয়াঘাটা ও তেরখাদায় যে অর্থনৈতিক জোন করার কাজ চলছে সেটিও মামলা করে বাঁধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। এ থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। শুধু খুলনা মহানগরী নয়, জেলার সব উপজেলা নিয়েই আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে এবং সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েই দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে পর্যায়ক্রমে সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

আজ শনিবার সকালে খুলনা সার্কিট হাউজে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মাদকবিরোধী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাথে মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের এ মতবিনিময় সভায় উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে খুলনার উন্নয়ন চাহিদা সম্বলিত একটি ধারণাপত্র জেলা প্রশাসককে হস্তান্তর করা হয়।

এসময় উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আলহাজ¦ শেখ মোশাররফ হোসেন খুলনায় বিমান বন্দর, গ্যাস সরবরাহ, আধুনিক রেলওয়ের ত্রুটিপূর্ণ কাজ সংস্কার করা, যশোর রোড ছয় লেনে উন্নীতকরণ, শেরে বাংলা রোড সম্প্রসারণ, স্থানীয় প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে কেডিএ চেয়ারম্যান নিয়োগ, আন্তর্জাতিক খেলার ভেন্যু খুলনায় করা, টেক্সটাইল পল্লী বাস্তবায়ন, নিউজপ্রিন্ট মিল অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুতকরণ, আইটি ভিলেজ স্থাপন, রূপসা ও ভৈরব তীরে রিভার ভিউ পার্ক ও রোড করা, পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ, খুলনা-ঢাকা বিরতিহীন ট্রেন চালু, খাল-নদী পুন:খনন, খুলনা-নলিয়ান সড়ক ও সেতু বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডের ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনের আহবান জানান। উন্নয়ন কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামানের পরিচালনায় এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, সংবিধান প্রণেতা ও খুলনার সাবেক পৌর মেয়র এড. এনায়েত আলী, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. নূরুল হাসান রুবা, সাবেক সভাপতি এড. আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু, প্রবীন আইনজীবী এড. এসএম মঞ্জুর-উল-আলম, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’র সাধারণ সম্পাদক এড. কুদরত-ই-খোদা, সিপিবি নেতা মিজানুর রহমান বাবু, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের পরিচালক আলহাজ¦ রেজাউল হক, কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী ও জেড এ মাহমুদ ডন, দৈনিক সময়ের খবরের সম্পাদক মো: তরিকুল ইসলাম, পাট রপ্তানীকারক মিজানুর রহমান টিংকু, নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা’র জেলা সাধারণ সম্পাদক এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব প্রমুখ।

বক্তারা খুলনার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড নিয়ে নির্দিষ্ট-অনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরে সরকারের সৃষ্টিতে আনতে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা কামনা করেন। এসময় জেলা প্রশাসক তার বক্তৃতায় আরও বলেন, খুলনায় মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য ৫০ একর জমি দেখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি বলা হয়েছে।

এ বছরের মধ্যেই ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে বলেও তিনি আশা করছেন। চিংড়িতে পুশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি আমাদের দেশের জন্য খুব লজ্জার। বিদেশে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় পুশের জন্য। তাই এখন থেকে কেউ পুশ করলে তার জন্য শুধু জরিমানা নয়, কমপক্ষে ছয় মাসের জেল দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ম্যাজিষ্ট্রেটদের প্রতি। শিপইয়ার্ড রোড নিয়ে মামলা থাকায় অগ্রগতি হচ্ছেনা বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কথা বলেন, টেক্সটাইল পল্লী নিয়েও।

এ বিষয়ে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ে কথা বলবেন বলে জানান। খুলনায় আইটি ভিলেজ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য একটি জায়গা ইতোমধ্যে দেখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অনুমোদনও হয়েছে। অত্যন্ত গোপনে কাজটি করা হয় যাতে আবার কোন বাধা না আসে। খুব শীঘ্রই আইটি ভিলেজ বা আইটি পার্ক হবে খুলনায়।

এতে হাজার হাজার তরুণ-তরুণির কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। হাইটেক পার্কের জন্যও জায়গা দেখা হয়েছে। ঈদের পর আরও কিছু জায়গা দেখা হবে। ময়ূর নদী ও ২২ খালসহ অবৈধ দখল সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেও মাঝপথে থেমে যেতে হয়েছে। এখন আটঘাট বেঁধে নামতে হবে।

ইতোমধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে আবারো উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ২২খাল দখলমুক্ত করা হবে। ডেঙ্গু প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, ইতোমধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার ও তার সমন্বয়ে বৈঠক হয়েছে।

ঢাকা থেকে যেসব যানবাহন খুলনায় আসবে সেগুলোতে খুলনার প্রবেশ^দ্বারে স্প্রে করে মশক নির্ধন কার্যক্রম করা হবে। কেননা এ পর্যন্ত যেসব ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে তার প্রায় সবই ঢাকা থেকে আগত। জেলা স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ভেন্যু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য আশপাশের কোন স্থাপনাই ভাঙতে হবে না।

জেলা স্টেডিয়ামের পূর্বপাশের মঞ্জুরুল ইমাম সড়কটিও শীর্ঘ উম্মুক্ত করা হবে বলেও তিনি জানান। এক কথায় চাহিদাভিত্তিক প্রকল্প তৈরি করে সমন্বিতভাবে খুলনার উন্নয়নে ভূমিকা রাখা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.