উত্তর প্রদেশে মুখ থুবড়ে পড়ছে বিজেপি, চমক দেখাচ্ছে অখিলেশের সমাজবাদী দল

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ‘উত্তর প্রদেশ যার, দিল্লির মসনদ তার’—ভারতীয় রাজনীতির অতি প্রচলিত কথা। কারণ, এটি দেশটির সবচেয়ে বেশি সংসদীয় আসনবিশিষ্ট রাজ্য। সাধারণত লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে যে দল ভালো করে, তারাই কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। তাই এবারও এ রাজ্যের নির্বাচনী ফলের দিকে তাকিয়ে ছিল সবাই। নির্বাচনপূর্ব সমীক্ষা, বুথফেরত জরিপসহ সবক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি এগিয়ে ছিল।
তবে সব হিসাবনিকাশ উল্টে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের শরিক সমাজবাদী পার্টি চমক দেখিয়েছে। কংগ্রেসও গতবারের তুলনায় ভালো করেছে। সব মিলিয়ে যোগীরাজ্যে ধাক্কা খাচ্ছে বিজেপি। খবর এনডিটিভি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
বিজেপির ঘাঁটিখ্যাত উত্তর প্রদেশ রাজ্যে বর্তমানে ক্ষমতায় আসেন দলটির যোগী আদিত্যনাথ। এ রাজ্যে লোকসভার আসন রয়েছে ৮০টি, যা সব রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই দেশের সার্বিক ফলে উত্তর প্রদেশের ফলের প্রভাব থাকে স্পষ্ট। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এ রাজ্যের ৮০টি আসনের মধ্যে ৬২টি আসনে জিতেছিল বিজেপি।
তবে গতকাল রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে বিজেপি উত্তর প্রদেশে এগিয়ে রয়েছে মাত্র ৩৬টি আসনে। অর্থাৎ গতবারের থেকে ২৬টি আসন হাতছাড়া হতে পারে পদ্মশিবিরের। সেখানে অখিলেশ যাদব নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টি তখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ৩৬টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ৭টি আসনে। এ রাজ্যে বিজেপির শরিক আরএলডি দুটি আসনে এগিয়ে।
২০১৯ সালে আমেথি আসনে হেরেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সেই আসনে জিতে মন্ত্রীও হয়েছিলেন বিজেপির স্মৃতি ইরানি। তবে এখন পর্যন্ত স্মৃতি পিছিয়ে রয়েছেন। কংগ্রেসের কিশোরী লাল এগিয়ে রয়েছেন গান্ধীদের ঘাঁটিখ্যাত আমেথিতে। এবার রাহুল দাঁড়িয়েছেন রায়বেরেলিতে। সেখানে ২ লাখের বেশি ভোটে এগিয়ে তিনি।
সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব কনৌজ কেন্দ্র থেকে জয়ে পেয়েছেন। তার স্ত্রী ডিম্পল যাদব মৈনপুরী কেন্দ্র থেকে এগিয়ে রয়েছেন। ভোট শেষের পরই অখিলেশ কর্মী-সমর্থকদের সজাগ থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। বিজেপির ‘মিথ্যা প্রচারে’র ফাঁদে পা না দেওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে গণনা না হওয়া পর্যন্ত মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। এই বার্তা যে কাজে লেগেছে, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে ভোটের ফল। তাই তো ফল প্রকাশের পর থেকে লক্ষ্ণৌতে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে গত বছরগুলোর উচ্ছ্বাস উধাও।
কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির অফিসে এখন উৎসবের মেজাজ। তাই এখন কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির এমন চমকের পেছনের রহস্য নিয়ে আলোচনা চলছে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের মাস কয়েক আগে গত জানুয়ারিতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রী মোদি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন ও বিগ্রহে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন।
মূলত ভোটারদের আকৃষ্ট করতেই এমনটা করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তখন দেশটির বিরোধীরা বলেছিলেন, রামমন্দির উদ্বোধনের নামে যা হচ্ছে, তা ধর্ম নয়, বরং পুরোটাই রাজনীতি। বিজেপি রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারেও বারবার অযোধ্যার রামমন্দিরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ভোট টানার চেষ্টা করেছিল। তবে রামমন্দির ইস্যু বিজেপির জন্য ম্যাজিক হয়ে কাজ করেনি। এমনকি রামমন্দির অযোধ্যা আসনেও সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী অবধেশ প্রসাদ জিতেছেন। হেরেছেন বিজেপির প্রার্থী লাল্লু সিং।
অন্যদিকে, কাজ করেছে অখিলেশ ও রাহুলের কৌশল। তারা ২০১৭ সালের উত্তর প্রদেশ নির্বাচনেও একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। সে সময়ে ওই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৩০২টি আসন আর কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি পেয়েছিল ৪৭টি। এর সাত বছর পর এবার সেই দুই নেতার কৌশলে ফল এসেছে।
বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতী আগে ওই রাজ্যে বড় ফ্যাক্টর ছিলেন। তবে এবার নির্বাচনে তার খুব একটা প্রভাব ছিল না। যে কারণে চমক দেখিয়েছে ইন্ডিয়া জোট। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.