উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম চামড়া বাজার নাটোরে এখনও চামড়া কেনা শুরু করেনি ট্যানারি মালিকরা


নাটোর প্রতিনিধি:  উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম চামড়ার আড়ত নাটোরের রেলগেট সংলগ্ন চকবৈদ্যনাথ বাজারে এখনও কোনো ট্যানারি মালিক চামড়া কিনতে আসেনি। তবে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জেলা থেকে নাটোরের আড়তে চামড়া আসতে শুরু করেছে।

এ অবস্থায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু চামড়া সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী কেনাবেচা চলছে। বুধবার সরজমিনে চকবৈদ্যনাথ চামড়ার আড়ত ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে চামড়া নিয়ে আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ট্যানারি মালিক বা তাদের প্রতিনিধিরা চামড়া কিনতে না আসায় কেনাবেচা সেভাবে শুরু হয়নি।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান লাল্টু বিটিসি নিউজকে জানান, ঈদের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নাটোরে মূলত চামড়া কেনাবেচা শুরু হয়। তখন বিভিন্ন ট্যানারি মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা চামড়া কেনা শুরু করেন। এখন বিভিন্ন জেলা থেকে চামড়া আসা শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ ধরে দেশের উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩০ জেলা থেকে নাটোরে চামড়া আসবে।

আড়তদার মঞ্জুরুল আলম হিরু এক জানান, ২২ আগস্ট ঢাকায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ হাইড স্কিন অ্যাসোসিয়েশন এবং ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকের দিকে আমরা তাকিয়ে রয়েছি। ওই বৈঠক ফলপ্রসু হলে বাংলাদেশের চামড়া বাজারের অস্থিরতা কেটে যাবে।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে স্থানীয়ভাবে গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বর্গফুট এবং খাসির চামড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা বর্গফুট অনুসারে বিক্রি হচ্ছে। মহিষের চামড়াও সরকার নির্ধারিত মূল্যেই কেনা হচ্ছে।

নাটোরের কাঁচা চামড়ার বড় ব্যবসায়ীরা জানান, বেশিরভাগ আড়তদার বর্তমানে মূলত কমিশন ভিত্তিক চামড়া কেনাবেচা করেন। তারা চামড়া প্রতি একটি কমিশিন পেয়ে থাকেন। সুতরাং লাভ লসের ব্যাপারটি করে যারা চামড়া নিয়ে আসছেন অথবা যারা চামড়া কিনছেন।

ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল আলম হিরু বিটিসি নিউজকে জানান, এক সময় আমাদের দেশ থেকে ওয়েট ব্লু চামড়া বিদেশে রফতানি হতো। তখন দেশের চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য স্বর্ণযুগ ছিল। কিন্তু ৯০ এর দশকে ওয়েট ব্লু চামড়া রফতানি বন্ধ করে দেয়।তিনি বলেন, মূলত তখন থেকেই দেশের বিশাল কাঁচা চামড়ার বাজার ট্যানারি মলিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তাদের বেঁধে দেয়া দামের বাইরে আমরা চামড়া কিনতে পারি না। ফলে চামড়া বাজারে বিপর্যয় নেমে এসেছে।তিনি আরও বলেন, বাকিতে আর আমরা চামড়া বিক্রি করতে চাই না। কারণ ট্যানারি মালিকরা গত ৪ বছরের বকেয়া টাকা এখনও পরিশোধ করেনি।

রকিব উদ্দিন কমল নামে এক ব্যবসায়ী বিটিসি নিউজকে জানান, ঈদের সময় শ্রমিকের অভাবে কিছু চামড়া নষ্ট হয়েছে। কারণ গরমের সময় চামড়াগুলো লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলে তা পচে যায়। তবে এর পরিমাণ খুবই অল্প।
রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি গরুর কিছু চামড়া নিয়ে এসেছিলেন। সেগুলো আকার ভেদে ৭শ থেকে ৯শ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এক্ষেত্রে তার লোকসান হয়নি। বরং কিছু লাভ হবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরাঞ্চলের কাঁচা চামড়া বেচাকেনার কেন্দ্র নাটোর। শহরের রেলগেট সংলগ্ন চকবৈদ্যনাথ এলাকায় রয়েছে শতাধিক চামড়ার আড়ত। এসব আড়তে সমগ্র উত্তরাঞ্চলসহ দক্ষিণ ও পূর্ববাংলার ৩০ জেলার চামড়া কেনাবেচার জন্য নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন ট্যানারি মালিকরা সমগ্র চামড়ার ৫০ ভাগের বেশি নাটোর থেকে সংগ্রহ করে থাকেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু মাত্র ঈদুল আজহার সময় নাটোরে ৯শ কোটি টাকার অধিক মূল্যের চামড়া কেনাবেচা হয়। কিন্তু এ বছর পুঁজি স্বল্পতায় তারা চামড়া ব্যবসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ব্যসায়ীদের অভিযোগ তাদের টাকায় ট্যানারি মালিকরা দামি গাড়ি-বাড়িতে বসবাস করেন। অপরদিকে টাকার অভাবে তারা ব্যবসা করতে পারেছেন না।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহ মোহাম্মাদ রিয়াজ বিটিসি নিউজকে বলেন, আমরা চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনার আহ্বান জানিয়েছি। যাতে করে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং নাটোরের চামড়া ব্যবসার যে সুনাম রয়েছে তা আগামীতেও অক্ষুন্ন থাকে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.