উজিরপুরে সড়কের বেহাল দশা পর্যটক শূন্য লাল শাপলার বিল

উজিরপুর (বরিশাল) প্রতিনিধি: বরিশালের উজিরপুরে সড়কের বেহালদশার কারণে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে সাতলার লাল শাপলার বিল অপরদিকে অর্ধশত কোটি টাকার ব্যবসায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বরিশালের সাতলার লাল শাপলার বিল বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। দেখলে মনে হবে বিশাল লাল গালিচা বিছানো এক লাল স্বর্গ। আর এ লাল শাপলার বিল দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমায়।
বর্তমানে রাস্তা খানাখন্দের কারণে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে এ বিলে। এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত পাঁচ শতাধিক পরিবার জীবিকা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের জীবন যাপন চলছে মানবেতরভাবে।
লাল শাপলার বিলে বিভিন্ন স্পটে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা বাহারী রঙে দর্শনার্থীদের আনন্দ দেওয়ার জন্য সাজিয়ে রেখেছে। এরমধ্যে অন্যতম মুড়িবাড়ি ঘাট। হারতার ডাক্তার বাড়ি ঘাটে ভাসমান ব্রিজ করে দৃষ্টিনন্দন ভাসমান রেঁস্তোরো তৈরী করেছেন প্রাক্তন সেনাসদস্য মিজান। দর্শনার্থী না থাকায় অলস সময় পার করছেন তিনি। তার রয়েছে ২০টি নৌকা।
তিনি জানান রাস্তা খারাপ হওয়ায় এ বছর দর্শনার্থী তেমন আসছে না। মুড়িবাড়ি ঘাটের মাঝি কুদ্দুস সিকদার,জলিল মিয়া জানান, এখানে প্রায় ৪০টি সাজানো নৌকা রয়েছে। রাস্তা ভাঙ্গা থাকার কারণে কোন দর্শনার্থী আসছে না।
তবে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় কিছু কিছু লোক পয়সারহাট, আগৈলঝাড়া হয়ে সাতলায় আসছে। এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আয় হয়ে থাকে মৎস্য ও পোল্ট্রি খাত থেকে। হারতা বাজার মৎস্য আড়ৎ, সাতলা এবং জল্লা ইউনিয়নের টাকাবাড়িতে সর্ববৃহৎ মৎস্য আড়ৎ রয়েছে। ব
ছরের প্রায় ৮ মাস এ আড়তে পাইকারী ভাবে মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। মৎস্য পাইকাররা মাছ ক্রয় করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রেরণ করে। বছরে তিনটি আড়ৎ থেকে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়ে থাকে এবং পোল্ট্রি খাতে ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার ডিম ও মুরগী বিক্রি হয়ে থাকে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান ও প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মাওলা। এ সকল পন্য মূলত সাতলা, হারতা, জল্লার সড়কপথেই পরিবহন হয়ে থাকে। উজিরপুর ডাকবাংলা থেকে সাতলা পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ২৯ কিলোমিটার রাস্তাই খানাখন্দে ভরা, বড়বড় গর্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চেরাগ আলী থেকে হারতা পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৮ কিলোমিটারের মেরামত কাজ চলমান।
অপরদিকে সানুহার থেকে ধামুরা, জল্লা হয়ে সাতলা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯ কিলোমিটারই রাস্তাই খানাখন্দে ভরা। ৮ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চেরাগ আলী মার্কেট থেকে মশাং বাজার পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দে ভরা, চলাচলের অনুপযোগী। ডাকবাংলা থেকে ধামুরা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দে ভরা।
বরিশাল থেকে উজিরপুর ধামুরা ও সাতলা পর্যন্ত বাসসার্বিস চালু থাকলেও এখন বন্ধ হয়ে গেছে এ সার্ভিস। শুধু সানুহার হয়ে ধামুরা পর্যন্ত চলছে।
হারতা মৎস্য আড়তের সভাপতি নরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, উজিরপুরের সর্ববৃহৎ এই মৎস্য আড়ৎটিতে বছরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। রাস্তা খারাপ থাকার কারণে দূর থেকে তেমন কোন পাইকার আসতে পারছেনা। টাকা বাড়ির মৎস্য আড়ৎদার নিমাই জানান, ধামুরা থেকে সাতলা পর্যন্ত সমস্ত রাস্তাই ভাঙাচোরা। কোন পরিবহন এখানে ঢুকতে চায় না। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে মাছ পরিবহন করাতে হয়।
সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহিন হাওলাদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সাতলা এবং জল্লার মধ্যবর্তী পটিবাড়ির নিকটে অনন্ত রায়ের বাড়ির পাশে প্রায় ২০-৩০ ফুট পাকা রাস্তা ভেঙ্গে পানির সাথে মিশে গেছে। এখান থেকে কোন গাড়ি সাতলায় ঢুকতে পারে না। উজিরপুর ডাক বাংলা থেকে সাতলায় সরাসরি কোন গাড়ি আসতে পারে না। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হবে।
উজিরপুর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোঃ হুমায়ুন কবির বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, উজিরপুরের রাস্তার খানাখন্দের বিষয়টি জেনেছি, কিছু কিছু রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। অতি দ্রুত বাকী রাস্তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারিহা তানজিন জানান, ধামুরা থেকে সাতলা পর্র্যন্ত রাস্তাটির মাঝে কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অতি দ্রুত সমস্যা সমাধান করা হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ মজিদ সিকদার বাচ্চু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, উজিরপুরে সবচেয়ে বড় রাস্তাগুলো ভাঙাচোরা। তবে কিছু কিছু রাস্তার কাজ চলমান। ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে দেরী হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ গিয়াস উদ্দিন বেপারী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান উজিরপুরে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ভাঙাচুরা রাস্তাঘাট, এগুলো দ্রুত সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর উজিরপুর প্রতিনিধি আঃ রহিম সরদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.